করোনার সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে উপার্জনের পথ হয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের গল্প লেখক, শিশু সাহিত্যিক ও চিত্রশিল্পী সাইফুল্লাহ নবীন ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়ায় শেষ পর্যন্ত কিডনি বেচার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
‘করোনা! দুই বছরের কাছাকাছি, অসহায় মানুষ, অসহায় আমি। কাজ নেই, কর্ম নেই। ৩ লাখ টাকা ঋণী। ঋণ পরিশোধ করতে কিডনি বিক্রি, রক্তের গ্রুপ বি পজিটিভ’—এ রকম এক বিজ্ঞাপনের প্লাকার্ড নিয়ে তিনি নগরীর প্রধান সড়কের কাছে দাড়ান।
সাইফুল্লাহ নবীন জানান তার বাড়ি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার চরহোগলা গ্রামে। গল্প লেখার পাশাপাশি ঢাকায় বাংলা একাডেমির একুশের বইমেলায় বর্ণমালা শিল্প ও স্টল সাজসজ্জার কাজ করতেন তিনি। তার প্রকাশিত ৪৯টি বই বাজারে রয়েছে। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ১০টি, শিশুতোষ গল্পের বই ২১টি, উপন্যাস ১৪টি এবং শিশুদের ছবি আঁকারে বই রয়েছে চারটি।
তার একার উপার্জনে পাঁচ সদস্যের সংসার চলে। দুই ছেলে ও এক মেয়ে পড়ালেখা করেন। বড় ছেলে বিএসসিতে, একমাত্র মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে এবং ছোট ছেলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।
তিনি জানান মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে তার উপার্জনের সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে। বই বিক্রি শূন্যের কোটায়। সাইনবোর্ড বা ছবি আঁকার কাজও নেই। বই লেখার সম্মানির টাকাও দিচ্ছেন না প্রকাশকরা। প্রায় দুই বছর ধরে এ অবস্থা চলছে। আর্থিক সঙ্কটের কারণে জমি বন্ধক রেখে এবং আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা ধারদেনা করে এতো দিন সংসার চলেছে।
সাইফুল্লাহ নবীন বলেন, এতো দিন সব সময় হাসিমুখে থাকতে চেষ্টা করেছেন। এখন একে তো ছেলেমেয়ের দুবেলা খাবার জোটানো নিয়ে চিšতা, সঙ্গে পাওনাদারদের টাকার দুশ্চিšতা। সব মিলিয়ে জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। দিশেহারা হয়েই তিনি শেষ পর্যšত একটি কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই রোববার (২৭ জুন) দুপুর ১২টার দিকে বরিশাল নগরীর টাউন হলের সামনে সদর রোডে কিডনি বিক্রির এরকম প্লাকার্ড হাতে দাঁড়িয়েছিলেন সাইফুল্লাহ নবীন।