[ঢাকা, ২৬ জুন ২০২১] বক্তারা বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক বর্জ্য (ই-বর্জ্য) এবং এর ব্যবস্থাপনার ক্রমবর্ধমান সমস্যা সমাধানের জন্য যথোপযুক্ত আইন ও বিধিমালা প্রণয়ণের দাবি করেন বক্তারা। বাংলাদেশে প্রতিবছর ২০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে ইলেকট্রনিক বর্জ্য এবং এসব বর্জ্যে সীসা, পারদের মত আরো অনেক ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি থাকে যা মাটি, পানি, বায়ু দূষণের পাশাপাশি এর ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবনকেও বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে।
গবেষণা সংস্থা ভয়েসেস ফর ইন্টারেক্টিভ চয়েস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট (ভয়েস) ‘টেকসই পরিবেশ রক্ষায় ইলেকট্রনিক বর্জ্য ব্যবস্থপনায় আইনের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক এক অনলাইন প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে শনিবার। ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। আলোচক হিসেবে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, সেতুর নির্বাহী পরিচালক আবদুল কাদের, অধ্যাপক আফজাল রেহমান এবং প্রথম আলোর পরিবেশ বিষয়ক সাংবাদিক ইফতেখার মাহমুদ, যায় যায় দিনের বিজনেস এডিটর আহমেদ তোফায়েলঅ অংশগ্রহণ করেন।
ভয়েসের প্রোগ্রাম অফিসার আফতাব খান শাওন মূল বক্তব্য উপস্থাপনে বলেন, বাংলাদেশে ২০১৮ সলে ৪ লাখ মেট্রিক টন ই-বর্জ্য তৈরি হয়েছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশে ৫ লাখ ৫০ হাজার টন ই-বর্জ্য তৈরি হয়েছে। ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশে বছরে ৪৬ লাখ ২০ হাজার টন মানবদেহের জন্য মারাত্বক ওই সব ই-বর্জ্য তৈরি হবে। এছাড়াও প্রতি বছর গড়ে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৩০২টি টিভি অকেজো হয়ে যায় এবং তা থেকে ১৭ লাখ টন বর্জ্য তৈরি হয়। ৮৩ শতাংশ মানুষ এসব বিষাক্ত রাসায়নকি পদার্থের সংস্পর্শে আসে।
ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ বলেছেন যে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে প্রযুক্তিগত বিকাশ এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত বিকাশের কারণে মোবাইল, কম্পিউটার, গ্রাহক ইলেকট্রনিক পণ্য এবং ঘরের সরঞ্জাম সহজলভ্য হয়েছে। ফলে বাজারে পণ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এসব ইলেকট্রনিক পণ্যের মেয়াদকাল শেষ হবার পর নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে, যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।
সাংবাদিক ইফতেখার মাহমুদ বলেন, খুব কম সংখ্যক ইলেকট্রনিক পণ্য থেকে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য ধাতু বের করে নেওয়া হয় এবং বাকী অংশগুলি উন্মুক্ত স্থল, কৃষিজমি এবং খোলা জলাশয়ে ফেলে দেওয়া হয়। এতে করে পরিবেশের উপর বিপুল নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বৈদ্যুতিক পণ্য দেশেই তৈরি হয়। তাই এসব পণ্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সেগুলোর ব্যবস্থাপনা নিয়েও কোম্পানিগুলোর দায় নিতে হবে।
বাপা’র যুগ্ন সম্পাদক মিহির বিশ্বাস বলেন যদিও ডিজিটাল প্রযুক্তি এসডিজির লক্ষ অর্জন এবং ডিজিটাল অর্থনীতির সুযোগ তৈরি করেছে কিন্তু অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বড় চ্যালেঞ্জটি হ’ল ই-বর্জ্যের পরিমাণ দিনের পর দিন বাড়ছে, কিন্তু তা ব্যবস্থাপনার জন্য কোনো আইন নাই এবং উদ্যোগও নাই। ফলে পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আলোচকগণ ই-বর্জ্য বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি, যথার্থ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, এবং ই-বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের আহ্বান জানান। এ লক্ষ্যে ই-বর্জ্য ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও কথা বলেন বক্তারা। সঠিক আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আহ্বান জানানো হয়।
ইলেকট্রনিক বর্জ্য ব্যবস্থপনায় আইনের দাবি
এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন
একটি মন্তব্য করুন