নাটোরের সাতটি উপজেলার মধ্যে নলডাঙ্গা ও সিংড়া উপজেলা প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে বন্যাকবলিত হয়। পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেলে লালপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। বর্ষা মৌসুমে এই অঞ্চলের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
আর এই মৎস্য শিকারের অন্যান্য সরঞ্জামাদির মধ্যে প্রধান উপকরণ নৌকা।এছাড়া অনেক অঞ্চলের সড়ক প্লাবিত হলে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে মালামাল আনা নেওয়া ও যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌকা।মাঝি মাল্লার কাজে নিয়োজিত থাকে জেলার প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক শ্রমিক।
সেই নৌকা মেরামত এবং তৈরিতে ব্যস্ত দিন কাটাচ্ছেন নাটোরের বিভিন্ন অঞ্চলের কারিগররা।বিল অঞ্চলে কিছুটা পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে নৌকার চাহিদা। ফলে বর্ষার শুরুতেই নৌকা তৈরি ও বেচাকেনার ধুম পড়েছে জেলার বিভিন্ন স্থানে।
কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছে নৌকা তৈরিতে। কেউ করাত দিয়ে কাঠ কাটছে কেউ হাতুড়ি দিয়ে নৌকায় পেরেক লাগাতে ব্যস্ত। রাতদিন এক টানা কাজ করেও চাহিদা পূরণে হিমসিম খাচ্ছেন তারা। এছাড়া অনেকেই পুরাতন নৌকা মেরামত করে নিচ্ছেন চলাচলের উপযোগী করে তোলার জন্য।
বর্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জেলেরা নাটোরের বিভিন্ন বিল ও নদীতে নৌকা দিয়ে রাত দিন মাছ শিকারে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সারা বছর জুড়ে কৃষকেরা তাদের কৃষি পণ্য বিপনণের জন্য ব্যবহার করে থাকেন নৌকা।
কথা হয় নাটোরের সিংড়া উপজেলার ইটালি ইউনিয়নের সাতপুকুরিয়া গ্রামের নৌকা তৈরির কারিগর মো. হাসান শেখ ও রুহুল আমিন‘এর সাথে তারা জানান, ছোটবেলা থেকে বন্যার আগে নৌকা তৈরি ও মেরামত করেন।
বড় নৌকার চেয়ে ছোট ডিঙ্গি ও কোশা নৌকার চাহিদা বেশি। এতে প্রতিটি ১২ হাতের নৌকা বানাতে ৫ হাজার ৫ শত থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ হয়।আর ৭ থেকে ৭ হাজার ৫’শ টাকায় বিক্রি করা হয় বলে জানালেন তিনি।
নলডাঙ্গা উপজেলার খাজুরা ইউনিয়নের বামন গ্রামের নৌকা তৈরির কারিগর মো. জাহাঙ্গীর জানান, বন্যার সময় এলে নৌকা তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকি। এই সময় নৌকার চাহিদা বেড়ে যায়। আমরাও অতিরিক্ত কিছু আয় করতে পারি।
একটি ছোট নৌকা তৈরি করতে ৪ থেকে সাড়ে চার হাজার টাকার কাঠ লাগে।একটি নৌকা বানাতে দুইজন মিস্ত্রী দুই দিন সময় লাগে। তাদের মজুরী দিতে হয় ২ হাজার টাকা। তবে কাঠের দাম ও হেলপারদের মজুরী বেড়ে যাওয়ায় লাভ তুলনামূলক ভাবে কম হয়।
নাটোর জেলায় নৌকা তৈরির অসংখ্য কারিগর রয়েছে, যার সরকারিভাবে কোনো পরিসংখ্যান নেই। বছরে তিন থেকে চার মাস নৌকা তৈরীর কাজ করলেও অন্যান্য সময় তারা বিভিন্ন কাজে শ্রম বিক্রি করেই জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন।
সরকারিভাবে সহযোগীতা না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে নৌকা তৈরির কারিগরদের। গ্রামীণ ঐতিহ্য ও বর্ষা মৌসুমে চলাচলের ব্যবস্থা করেন যে সমস্ত শ্রমিকরা তাদের জন্য সরকারিভাবে সহযোগিতা করা দরকার বলে মনে করেন নাটোরের সচেতন মহল।