বরিশালের গৌরনদীতে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রাণ গিয়েছে একে একে ৩জনের। এর মধ্যে ভোটের দিন ২জন এবং ভোট পরবর্তী বুধবার আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে গোটা এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।
পাল্টাপাল্টি মামলায় আসামি হয়েছে দুই শতাধিক গ্রামবাসী। এদিকে হামলা ও মামলা আতংকে গৌরনদীর সহিংসতাপূর্ন এলাকা অধিকাংশ পুরুষরা আতœগোপন করেছে। এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে সাত জন।
গৌরনদীতে বুধবার ইউপি নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় প্রতিপক্ষের হামলায় শাহ্আলম খান (৬০) নামে এক গরু খামারি নিহত হয়েছেন। বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি (শাহআলম) মারা যান।
নিহত শাহ্আলম উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের পরাজিত মেম্বার প্রার্থী মন্টু হাওলাদারের ভায়রা ও বার্থী ইউনিয়নের বড়দুলালী গ্রামের ইদ্রিস খান ওরফে ইঙ্গুল খানের পুত্র।
গৌরনদী থানার ওসি আফজাল হোসেন জানান, বড়দুলালী গ্রামের নিহত শাহ্আলম খানের স্ত্রী হাসিনা বেগম বাদি হয়ে জাকির মৃধা, সোবাহান মৃধা, এনায়েত মৃধাসহ ১৩ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করে বৃহস্পতিবার রাতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
তাৎক্ষনিক পুলিশ কমলাপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে মামলার এজাহারভূক্ত আসামি হারুন হাওলাদার (৫০)কে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত হারুনকে শুক্রবার বরিশাল অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালতের বিচারক তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন।
এছাড়া বোমায় আবু বক্কর ফকির হত্যা মামলায় শুক্রবার দুপুরে মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাজ্জাক সরদার, বাবুল সরদার, হালিম সরদারকে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ জানায় বোমায় নিহত আবু বক্কর ফকির হত্যা মামলায় সন্দীগ্ধ আসামি হিসেবে তিনজন ও শাহআলম খান হত্যা মামলায় এজাহারভূক্ত এক আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এছাড়া বোমার আঘাতে আবু বক্কর ফকির হত্যা মামলায় শুক্রবার দুপুরে মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাজ্জাক সরদার, বাবুল সরদার, হালিম সরদারকে গ্রেফতার করেছে।
এব্যপারে গৌরনদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রব হাওলাদার বলেন, গৌরনদীতে তিনটি খুনের ঘটনায় ৬৬ জনের নামোল্লেখসহ ১৯১ জনকে আসামি করে পৃধক তিনটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।
এ পর্যন্ত তিনটি মামলায় ৭ আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এমন সহিংস ঘটনার আর যেন পুণরাবৃত্তি না ঘটে এ জন্য এলাকায় এলাকায় অতিরিক্তি পুলিশী টিম বসানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
এর আগে গত ২১ জুন ভোট চলাকালে একজন ও ফলাফল ঘোষণার পর অপর একজন বোমায় নিহত হয়েছে। ভোটের দিন সোমবার দুপুরে গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নে মেম্বার প্রার্থী মোরগ মার্কার ফিরোজ মৃধা ও টিউবয়েল মার্কার মন্টু হাওলাদারের সমার্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় ছেলের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে ঢাকা থেকে এসে বোমার আঘাতে মৌজে আলী মৃধা (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হন। আহত হন আরো ৬জন। এ সময় পুলিশ ২ জনকে আটক করে।
একই দিন সন্ধ্যায় ফল ঘোষনার পর বিজয়ী মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের বিজয় মিছিলে প্রতিপক্ষ গ্রুপ বোমা হামলা করলে বিজয়ী মেম্বার প্রাথী গিয়াস মৃধা ও প্রতিদ্বন্দ্বি পরাজিত মেম্বার প্রার্থী আরজ আলী সরদারের সমর্তকদের মধ্যে হামলা-পাল্টাহামলা, বোমা নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বোমা হামলায় বিজয়ী মেম্বার প্রার্থী গিয়াস মৃধার সমর্থক আবু বক্বর ফকির (২৮) নামে এক ভ্যানচালক নিহত হন। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৫ জন আহত হয়েছেন।
পুলিশ সোমবার রাতেই ৯ নং ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য ফিরোজ মৃধা, তার কর্মী ইমন হোসেন, নয়ন মৃধাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত ওই তিনজনকে মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালতের বিচারক তাদেরকে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারগারে প্রেরন করেন।
এদিকে নির্বাচনের দিন সন্ধ্যায় বোমা হামলায় নিহত আবু বক্কর ফকিরের বাবা আনজু ফকির বাদি হয়ে পরাজিত মেম্বার প্রার্থী আরজ আলী সরদার, তার জামাতা কালকিনির গোপালপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মীর নাসিরউদ্দিন, পুত্র রাব্বী সরদার ও বাবু সরদারসহ ৩২ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত ২০/২৫ জনকে আসামি করে মঙ্গলবার রাতে থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক ধারায় আরো একটি মামলা দায়ের করেন।
এদিকে নির্বাচনী সহিংসতায় একের পর এক খুনের ঘটনায় আতংক দেখা দিয়েছে ওই এলাকায়। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করার কারণে এলাকা পুরুষ শুন্য হয়ে পড়েছে। উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের রিনা বেগম বলেন, তিনটি হত্যা মামলায় অজ্ঞাতনামা শতাধিক আসামি থাকায় গ্রেফতারের ভয়ে তার বাড়ির পুরষরা আতœগোপন করেছে।
বিজয়ী মেম্বার প্রার্থী ও পরাজিত মেম্বার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকর পুরুষরা গ্রেফতারের ভয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।
একই ইউনিয়নের ব্রাহ্মনগাঁও গ্রামের মোর্মেদা বেগম বলেন, জানান, ভোটের হাঙ্গামার ভয়ে তার স্বামী, ছেলে এখন গ্রাম ছাড়া।