নাটোরের লালপুর উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামকে স্থানীয় এমপি শহিদুল ইসলাম বকুলের বাড়িতে ডেকে নিয়ে ৪ ঘণ্টা আটক রেখে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া পাওয়া গেছে। গোপালপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান রোকন ও তার দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে।
এ সময় জোর করে দলিলে ৮ লাখ টাকা পাওয়ার উল্লেখ করে সই নেওয়া হয় বলে রফিকুল ইসলামের নামের ওই সরকারি কর্মকর্তা অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় তিনি লালপুর থানায় মামলা করতে গেলে মামলা নেয়নি পুলিশ। পরে বাগাতিপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন রফিকুল ইসলাম।
লালপুর থানার ওসি ফজলুর রহমান জানান, ঘটনাটি বাগাতিপাড়া উপজেলা এলাকার। তাই বাদীকে বাগাতিপাড়া থানায় অভিযোগ দায়েরের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় রাসেল আহমেদ (৩৮) ও আবুল কালাম আজাদ (৩৭) নামের রোকনের দুই সহযোগীকে আটক করা হয়েছে বলে ডিবি পুলিশের ওসি শফিকুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন। রাসেল লালপুর উপজেলার নেংগপাড়া গ্রামের হাসান মন্ডলের ছেলে এবং আবুল কালাম বিজয়পুর গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে।
খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয় এমপি শহিদুল ইসলাম বকুল সমর্থিত গোপালপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এমপির ঠিকাদারী ব্যবসার পার্টনার রোকনুজ্জামান রোকন তাকে ফোন করেন।
এ সময় রোকন তাকে সাংসদ বকুলের বাড়িতে যেতে বলেন। এরপর তিনি বাগাতিপাড়া উপজেলায় সাংসদের বাড়িতে যান। সেখানে উপস্থিত গোপালপুর পৌর আওয়ামী লীগ নেতা ও ঠিকাদার রোকনুজ্জামান রোকন এবং তার দুই সহযোগী রাসেল আহমেদ ও আবুল কালাম আমাকে এমপির বসার ঘরে নিয়ে যান তাকে।
এ সময় সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল তার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং খাদ্য গুদামে গম সংগ্রহের বিষয়ে জানতে চেয়ে কয়েক মিনিট কথা বলে চলে যান। এমপি বকুল চলে যাওযার পরপরই রোকনুজ্জামান রোকনসহ তার দুই সহযোগী রফিকুল ইসলামের কাছে ২০ লাখ টাকা দাবি করেন।
এরপর তার ওপর শুরু হয় মানসিক নির্যাতনসহ কিলঘুষি। প্রায় ৪ ঘণ্টা ওই ঘরে বসিয়ে রাখা হয় তাকে। এক পর্যায়ে রাসেল তার কাছে ৮ লাখ টাকা পাবেন বলে দাবি করেন। টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে জানিয়ে আবারও মারধর করেন তারা।
এক পর্যায়ে ৮ লাখ টাকার পাবেন উল্লেখ করে জোর করে দলিলে সই নেওয়া হয়। সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে লালপুর থানায় মামলা করতে যান। কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে লালপুর থানার ওসির পরামর্শে রাতেই বাগাতিপাড়া থানায় এসে এজাহার দাখিল করেন।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা ও ঠিকাদার রোকনুজ্জামান রোকনের ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
বাগাতিপাড়া থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, আমার বাসায় বা বৈঠকখানায় কাউকে মারধর বা আটকে রাখার কোনো ঘটনায় ঘটেনি। ঘটনাটি সাজানো বলে মনে হয়। লালপুর উপজেলা গুদাম খাদ্য কর্মকর্তা নিজেই তার প্রয়োজনে আমার কাছে এসেছিলেন।
খাদ্য গুদামে গম সংগ্রহ বিষয়ে কোনো একটা সমস্যা হয়েছে- সে বিষয়ে তিনি আমার সহায়তার জন্য এসেছিলেন। তার সঙ্গে আমি মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট কথা বলে চলে যাই। তাকে কেউ ডেকে আনেননি, আমার বাড়িতে দীর্ঘ সময় আটকে রাখার বিষয়টিও সঠিক নয়।
তিনি আরও বলেন, প্রতিপক্ষের লোকজন আমার সুনাম ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যে এমন নাটক সাজাতে গুদাম খাদ্য কর্মকর্তাকে বাসায় পাঠিয়েছিল। ওই কর্মকর্তাও আমাকে বিষয়টি জানাতে পারতেন। তিনি সেটি না করে মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন। তদন্ত করে ঘটনার প্রকৃত তথ্য উদঘাটনের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান সাংসদ বকুল।