ঢাকার ধামরাই উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সূত্রাপুর এলাকায় পরকীয়া প্রেমিক যুগলকে তিনদিন আটক রাখার পর মুক্তি দিয়েছে স্থানীয় মাতবরেরা। গত মঙ্গলবার বিকেলে মাতবর ও স্থানীয় কাজী তালাকনামা ও ৩০০ টাকা মূল্যের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে জোর করে ওই গৃহবধূর সই নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই গৃহবধূর স্বামী বাবু মিয়াকে ছাড়াই খোলাতালাক সম্পন্ন করেছেন ওই কাজী। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে , রোববার ভোরে অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকা অবস্থায় গৃহবধূ ঝর্ণা আক্তার পরকীয়া প্রেমিকসহ জনতার হাতে আটক হয়। ওই প্রেমিকের নাম জাহাঙ্গীর আলম। সে চৌহাট ইউনিয়নের মো. আব্দুর রউফ মুন্সির ছেলে। খবর পেয়ে ওই প্রেমিকযুগলের পরিবারের লোকজন ছুটে এলে তাদের অপমান অপদস্থ করা হয় চরমভাবে।
এরপর প্রেমিকযুগলের মুক্তির ব্যাপারে বলা হয়, মোহরানার ৫ লাখ ও ধারের সাড়ে ৬ লাখ টাকাসহ যাবতীয় পাওনা ছাড়াই খোলাতালাক করতে হবে ওই গৃহবধূকে। সেই সঙ্গে ৩০০ টাকা মূল্যের নন-জুডিশিয়াল সাদা স্ট্যাম্পেও সই দিতে হবে। এতে তারা রাজি না হওয়ায় ওই প্রেমিক যুগলকে পুলিশে না দিয়ে তিন দিন ঘরের ভেতর আটকে রেখে অমানুষিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালান স্থানীয় মাতবররা। তাদের কোনো প্রকার খাবার দেয়া হয়নি। এমন কি ওই ভুক্তভোগীদের কারও সঙ্গে কোনো দেখা সাক্ষাত বা কথা বলতেও দেয় নি তারা।
অবশেষে মঙ্গলবার দিনভর অনেক দেনদরবার করার পরে বিকাল বেলা ওই ভুক্তভোগী প্রেমিক যুগল পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় মাতবরদের কথা ও শর্তে রাজি হলে তাদেরকে মুক্তি দেয়া হয়। স্থানীয় মাতবরদের হাত থেকে মুক্তি পেতে ওই প্রেমিক যুগল ৩০০ টাকা মূল্যের নন-জুডিশিয়াল সাদা স্ট্যাম্পে সই করতে বাধ্য হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় মাতবরদের শর্তানুযায়ী মোহরানাসহ যাবতীয় পাওনা বিসর্জন দিয়ে ওই ভুক্তভোগী গৃহবধূকে খোলা তালাকনামায় সই করতে বাধ্য করা হয়েছে ।
ওই গৃহবধূ জানিয়েছেন, জাহাঙ্গীর আমার ছোটবেলার খেলার সাথী। ওর সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের প্রেম ভালোবাসা জেনেই আমার স্বামী বাবু মিয়া আমাকে বিয়ে করে আনে। আমি না হয় ভুল করেছি। আমার একটি সন্তান রয়েছে। কেউ ওই সন্তানের মুখের দিকে চেয়েও আমাকে একটু ক্ষমা করল না। আর এখন একটু ভুলের জন্য আমাকে স্বামীর ঘর ছাড়তে হলো। আমি তালাকনামায় ও সাদা স্ট্যাম্পে সই করতে চাইনি- কাজী ও মাতবররা আমাকে সই করতে বাধ্য করেছে। এখন আমি আইনের আশ্রয় নেব।
ইউপি সদস্য মো. আবুল হাসেম বকুল বলেন, এলাকাবাসী যা ভালো মনে করেছেন আমিও তাদের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছি। যে গৃহবধূ স্বামী থাকা অবস্থায় পরকীয়া প্রেমিক নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মতো মেলামেশা করতে পারে, সে অনেক কিছুই করতে পারে। তাই এলাকাবাসীর সিদ্ধান্ত- সে এই এলাকায় থাকতে পারবে না। তাই খোলাতালাক করা হয়েছে।
কাজী ফজল হক বলেন, মেম্বার ও মাতবররা বলায় আমি ওই গৃহবধূর স্বামী বাবু মিয়াকে ছাড়াই খোলাতালাক সম্পাদন করতে বাধ্য হয়েছি। পরবর্তীতে ওই বাবু মিয়ার সই নেব।