বরিশাল বিভাগের তেত্রিশ উপজেলার একশো তিয়াত্তর ইউনিয়ন পরিষদ এবং ঝালকাঠী পৌরসভায় নির্বাচনে দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট গ্রহন চলছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ছয় জেলায় মোট আঠাশ লাখ আটানব্বই হাজার আটশো উনসত্তর জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে উনিশ টি ইউনিয়ন পরিষদে ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায় দশ হাজারের বেশী আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, সাতশো পঞ্চাশ র্যাব ছাড়াও বিজিবি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে।
বরিশাল জেলায় পঞ্চাশ ইউনিয়নে, পটুয়াখালীতে উনিশ, বরগুনায় উনত্রিশ ঝালকাঠিতে একত্রিশ, ভোলায় বারো ও পিরোজপুরে সাতটি ইউপিতে নির্বাচন হচ্ছে।
বরিশাল জেলায় নয় উপজেলায় পঞ্চাশ ইউনিয়নে নয় লাখ আঠারো হাজার সাতশো তিষাট্টি জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
সকাল থেকে বৃষ্টির মধ্যেই নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হলেও ভোটকেন্দ্রে কোথাও কোথাও ভীড় লক্ষ্য করা গেলেও বৃষ্টির কারনে উপস্থিতি কম। তবে কোথাও সামাজিক দুরত্ব, মাস্কের ব্যবহার বা স্যনিটাইজেশন ছিল না।
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাহিলারা, বাটাজোর ও চাঁদশী ইউপির রিটার্নিং কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান সকাল দশটা পর্যন্ত দশ ভাগ ভোট পরেছে। এখানে পরিস্থিতি ভাল, আশাকরা যায় সময়ের সাথে সাথে এবং আবহাওয়ার উন্নতির সাথে সাথে ভোট দেয়ার হার বারবে।
বরিশাল বিভাগের সর্বদক্ষিণের উপজেলা মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট ও দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সকাল সোয়া দশটা পর্যন্ত পাচ ভাগ ভোট পরেছে বলে নিশ্চিত করেছে রিটার্নি অফিসার সঞ্জীব কুমার সরকার। তিনি জানান বৃষ্টির কারনে ভোটার উপস্থিতি কম।
পিরোজপুর জেলার মিরুখালি, তুষখালি ও বেতমোর ইউনিয়ন পরিষদের রিটার্নিং কর্মকতা নাজমুল হাসান জানান সোয়া দশটা নাগাদ অন্তত পনেরো ভাগ ভোট পরেছে, দুয়েকটি কেন্দ্রে উত্তেজনা আছে।
বরগুনার পাঁচটি উপজেলার ২৯টি ইউনিয়নে ২৬১টি ভোটকেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বিরতিহীনভাবে চলবে বিকাল ৪টা পর্যšত। তবে বৃষ্টির কারণে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কম বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে প্রতিটি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দাবি, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব ধরণের প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশের একজন এসআইসহ ছয় পুলিশ সদস্য, পাঁচ জন অস্ত্রধারী আনসার সদস্য ও ১৫ জন নিরস্ত্র নারী ও পুরুষ আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং প্রতি তিন ইউনিয়নে একজন করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত রয়েছেন। এর পাশাপাশি পাঁচ প্লাটুন বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন।
বরগুনা জেলা নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, জেলার পাঁচ উপজেলার ২৯টি ইউনিয়নের নির্বাচনে মোট চার লাখ ৯৬ হাজার ১২৬ ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে নারী ভোটারের সংখ্যা দুই লাখ ৪৮ হাজার ৯৭১ জন ও পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৪৭ হাজার ১৫৫ জন। জেলা পুলিশের তথ্যমতে ২৯টি ইউনিয়নের ২৬১ কেন্দ্রের ৮১টি ঝুঁকিপূর্ণ।
প্রথম পর্যায়ের ইউপি নির্বাচনে বরগুনা জেলার ২৯টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এক হাজার ৬১২ জন প্রার্থী হন। এদের মধ্য বরগুনা সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪২ জন, আমতলির ছয়টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৫১ জন, বেতাগীর সাতটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ২৮ জন, পাথরঘাটার তিনটি ইউনিয়নে ২৭ জন, বামনার চারটি ইউনিয়নে ২১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এছাড়াও সংরক্ষিত পদে ৩৪৬ এবং সাধারণ সদস্য পদে এক হাজার ৭৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বরগুনা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার হাওলাদার বলেন, প্রথম ধাপে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শাšিতপূর্ণ করতে আমরা সব ধরনের প্র¯ততি নিয়েছি। আশা করি নির্বিঘ্নে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত করতে পারবেন।
বরগুনার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক বলেছেন, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এর পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত, স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত থাকবে। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য প্রশাসন সতর্ক রয়েছে বলে জানান তিনি।
বরিশাল সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কলাডেমা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার গৌতম কুমার সাহা জানান এখানে প্রথম দুই ঘন্টায় মোট দুশো পঞ্চাশ জন ভোট দিয়েছে। এখানে কোন স্যানিটাইজার দেখা যায় নি।
আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, পটুয়াখালী জেলার বাউফল ও বরিশালের বাকেরগঞ্জের দরিয়াল ইউনিয়নে কেন্দ্রের বাইরে মারামারি হয়েছে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকতা মো. আলাউদ্দিন জানান সকালে বৃষ্টির কারণে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। সময় যত বাছে ভোটার উপস্থিতি বারছে। তবে আমার মনে হয় জনগন স্বতস্ফূর্ত ভাবে ভোট দিচ্ছে কোথাও কোন সমস্যা হচ্ছে না , কেন্দ্রের বাইরে যে টুকু হচ্ছে সে গুলি সমাধান করা হচ্ছে। আশা করা যায় সুন্দর ভাবে পরিসমাপ্তি ঘটবে।