ভারতে যে পদ্ধতিতে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ক্লাসে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার, সেটা মোটেও বিজ্ঞানসম্মত নয়, স্বাস্থ্যকর তো নয়ই।
এই পদ্ধতিতে ক্লাসে ওঠার ছাড়পত্র হাতে পাওয়ার পরে এই সব ছাত্র-ছাত্রীরা উচ্চশিক্ষার জন্য যে বিষয় নির্বাচন করবে, সেখানে এত দিন ধরে পরীক্ষায় পাওয়া যে প্রাপ্ত নম্বর দেখে বাছাই করা হতো, কে কোন বিষয় পড়ার অধিকারী, যদি সেই পরীক্ষাই না হয় এবং এই ধরনের অবৈজ্ঞানিক প্রথায় প্রাপ্ত নম্বরের উপর ভিত্তি করে যদি কেউ উচ্চশিক্ষার জন্য এমন কোনও বিষয় নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে, যেটা পড়ার সামান্যতম মেধাও তার নেই, তা হলে সেটা হবে সব চেয়ে বড় কেলেঙ্কারি। শুধু রাজ্যের নয়, সেটা হবে গোটা দেশের পক্ষে ভবিষ্যতের জন্য একটা বড় ধরনের বিপর্যয়।
সেই বিপর্যয় ঠেকাতে হলে অতি অবশ্যই মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। তার জন্য যদি রাজ্য সরকারকে ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ি থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া এবং নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে হয়, যদি পর্যাপ্ত মাস্ক এবং স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করতে হয়, যদি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে নিরাপত্তার কারণে হোম কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করতে হয়, সেটা করতে হবে। করতেই হবে। কারণ এটা রাজ্য এবং দেশের পক্ষে মঙ্গলজনক।
যেখানে বাজার-হাট খুলে গেছে, যেখানে পঁচিশ শতাংশ লোক নিয়ে সরকারি এবং বেসরকারি অফিস খুলে দেওয়া হয়েছে, যেখানে রেঁস্তোরাও খুলে দেওয়া হয়েছে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, যেখানে নির্দিষ্ট সংখ্যক নিমন্ত্রিতদের নিয়ে সামাজিক আচার অনুষ্ঠান করা হচ্ছে, যেখানে বিধানসভা নির্বাচনের মতো এত বড় একটা কর্মযজ্ঞ হয়েছে, সেখানে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকের মতো জীবনের প্রথম বড় দুটি পরীক্ষা বাতিল করার কোনও মানেই হয় না।
অতিমারি পরিস্থিতিতে যাবতীয় নিয়মকানুন মেনে অনায়াসে এই পরীক্ষা নেওয়া যেতেই পারে। সরকারের পক্ষে অসুবিধে হলে, যে সব স্কুল থেকে ছেলেমেয়েরা অন্য স্কুলে পরীক্ষা দিতে যাবে কিংবা যে সব স্কুলে পরীক্ষার্থীদের সিট পড়বে, সেই সব স্কুলের যে কোনও একটিকে ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ি থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে আসা এবং বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করার গুরুদায়িত্ব দিয়ে দেওয়া যেতেই পারে।
স্কুলে কোভিড দূরত্ব বজায় রাখার মতো পর্যাপ্ত ঘর না থাকলে স্কুলের মাঠে কিংবা নিকটবর্তী কোনও খোলা জায়গায় প্যান্ডেল করেও পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
দরকার হলে যাবতীয় নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন স্তরের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটিও গঠন করা যেতে পারে।
অর্থাৎ পরীক্ষা বাতিল করার জন্য কোনও অজুহাত বা অবৈজ্ঞানিক কৌশল নয়, পরীক্ষা নেওয়ার জন্য যে বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা নেওয়া দরকার, রাজ্য সরকারের উচিত সেই পদ্ধতি অবলম্বন করা। তার জন্য যা যা করণীয় সেটা রাজ্য সরকারকেই করতে হবে। কিন্তু কোনও মতেই পরীক্ষা বাতিল করা সমীচীন নয়।