‘আমি আমার বাবা-মা এবং বোনকে খুন করছি। আরও দুজন অসুস্থ আছে। তাদেরকেও খুন করতে পারি। আমাকেও খুন করে ফেলতে পারি। আপনারা আসেন। আমাকে ধরেন।’- ৯৯৯ ফোন করে পুলিশকে জানালেন মেহেজাবিন এক নারী। তারপর বাসার ঠিকানা দিয়ে দ্রুত লাইন কেটে দেন তিনি।
আজ শনিবার সকালে ফোন পেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) রাজধানীর কদমতলীর মুরাদপুর এলাকার একটি বহুতল ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে বাবা-মা ও মেয়ের লাশ উদ্ধার করেছে । এ ঘটনায় ওই পরিবারের বড় বোন মেহজাবিন ইসলাম মুনকে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছে, পারিবারিক কলহের জেরে মুন পরিবারের সবাইকে কৌশলে বিষাক্ত কিছু পান করিয়ে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
আজ বিকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, মেহজাবিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কী কারণে এই মৃত্যু সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জানা গেছে, আজ সকালে কদমতলীর একটি ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে মাসুদ রানা (৫০), তার স্ত্রী মৌসুমী ইসলাম (৪০) ও মেয়ে জান্নাতুলের (২০) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। অচেতন অবস্থায় মেয়ের জামাই শফিকুল ইসলাম ও নাতনি তৃপ্তিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়।
জানা গেছে, মুনের মা মৌসুমী সাবেক একজন বিএনপি নেতার পিএস হত্যা মামলার আসামী। মুনের বাবা মাসুদ রানা দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলেন। তিনি স্ত্রী-মেয়ের এসব অপকর্মের বিষয়ে তিনি জানতেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মরদেহগুলো হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বিষাক্ত কিছু প্রয়োগের আলামত পাওয়া গেছে। আলামতগুলো পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করেছে পুলিশ। মরদেহগুলো সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
এ ঘটনায় সংকটাপন্ন অবস্থায় আটক মুনের স্বামী শফিকুল ইসলাম ও তাদের শিশুসন্তান তৃপ্তিকে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হলেও শফিকুলকে মিটফোর্ড হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। তাকে ঢামেকের ২১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তাদের শিশুসন্তান আশঙ্কামুক্ত রয়েছে।
মুনের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, তাদের বাসা রাজধানীর কদমতলীর বাগানবাড়ি এলাকায়। শুক্রবার (১৮ জুন) রাত ৯টার দিকে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে যান। যাওয়ার সময় আম-কাঁঠাল কিনে নেন। রাতে মুন তাদের সবাইকে নুডুলসসহ অনেক কিছু খেতে দেন। তারা বাসার সবাই খেয়েছে, কিন্তু পরে কী হয়েছে এ বিষয়ে তার কিছুই স্পষ্ট মনে নেই।
তিনি আরও জানান, গত তিন মাস ধরে স্ত্রী মুনের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। মুনের সঙ্গে তার বাবা-মায়েরও সম্পর্ক ভালো ছিল না।
কদমতলী থানার ওসি জামাল উদ্দিন বলেন, কদমতলী মুরাদনগর এলাকায় মুনের বাবা মাসুদ রানা স্ত্রী মৌসুমী ও মেয়ে জান্নাতুলকে নিয়ে বসবাস করতেন। অপর মেয়ে বিবাহিতা মুন বাগানবাড়িতে স্বামীর বাসায় বসবাস করতেন। তাদের একটি মেয়ে শিশুসন্তান রয়েছে। মেহজাবিনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাকে সব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
কদমতলী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ জানান, জরুরি নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করেন মেহেজাবিন। মেহেজাবিনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার তদন্তে গিয়ে আমরা এখনও পর্যন্ত জেনেছি, তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে শ্বাসরোধ করে। এর আগে নেশাজাতীয় কিছু খাইয়েছিলেন মেহেজাবিন। প্রত্যেকের গলায় দাগ রয়েছে। আমাদের ধারণা, গলায় কিছু পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মেহজাবিন জানিয়েছেন, ‘জমিজমা ও টাকা-পয়সার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঝামেলা চলছিল।’