বরিশালের গৌরনদীতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ওষুধ ব্যবসায়ী শাহাদাত হোসেনকে (৩৫) অপহরণ করে মুঠোফোনে ৫লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি ও আংশিক আদায়ের পর গুরুতর আহত অবস্থায় ফেলে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গৌরনদী থানার ওসি আফজাল হোসেন বলেন, ভিকটিমের স্ত্রী ফাতেমা ইয়াসমিন বাদি হয়ে ২ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে জনকে আসামি করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এরপর তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেয়ে বুধবার ৩জনের নাম উল্লেখ করে মোট ৭জন অজ্ঞাতনামা সহ ১০ আসামীর বিরুদ্ধে তা মামলা হিসাবে এন্ট্রি করা হয়।
এ রিপোর্ট পর্যন্ত আসামীদের গ্রেপ্তার এবং ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি আটকের জন্যে অভিযান চলছে। ব্যবসায়িক লেনদেনকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে পুলিশ মনে করে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ওষুধ ব্যবসায়ী শাহাদাত হোসেন বলেন, ওরা আমাকে গাড়িতে তুলেই চোখ মুখ বেধে ফেলে এবং হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে থাকে। গাড়ির মধ্যে হাতুড়ি দিয়ে আমাকে ৩/৪ ঘন্টা নির্যাতন করে।
মামলার বিবরণীতে বলা বলা হয় সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের সিংগা গ্রাম এ অপহরণের পর রাতেই দাবিকৃত মুক্তিপনের আংশিক (নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকারসহ আড়াউলাখ টাকা) মুক্তিপন পেয়ে অপহরণকারীরা একটি সাদা মাইক্রোবাস থেকে মঙ্গলবার সকালে পার্শ্ববর্তী চন্দ্রহার বাজারে ঔষধ ব্যবসায়ী শাহাদাত হোসেনকে আহত অবস্থায় ফেলে যায় ।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ভিকটিমের স্ত্রী শিক্ষিকা ফাতেমা ইয়াসমিন বাদি হয়ে ২ জনের নামোল্লেখসহ ৬ জনকে আসামি করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গৌরনদী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
ভিকটিমের স্ত্রী মোহাম্মদপুর সেখেরটেক বিদ্যাময়ী আইডিয়াল ইনস্ট্রিটিউটের শিক্ষিকা ফাতেমা ইয়াসমিন জানান, করোনার কারণে গত ৪ মাস পূর্বে গ্রামের বাড়িতে এসে প্রতিদিনের ন্যায় স্বামী সন্তান নিয়ে সোমবার রাতে নিজ বসত ঘরে ঘুমিয়েছিলেন।
রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে ঘরের দরজা ধাক্কাধাক্কি করলে পরিচয় জানতে চান তিনি। এ সময় বাহির থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে দরজা খুলতে বলেন। দরজা খুলে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ৫ ব্যক্তি ঘরের ভেতর ঢুকে ওষুধ ব্যবসায়ী স্বামী শাহাদাতকে অবৈধ ওষুধ ব্যবসার অভিযোগে মারধর করে হাতে হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।
তিনি (ফাতেমা ) অভিযোগ করে বলেন, আমার স্বামীকে নিয়ে যাওয়ার পরে রাত সোয়া ২টার দিকে আমি চন্দ্রহার বাজারে গিয়ে দোকানদারদের জাগিয়ে ঘটনাটি বলি।
এরই মধ্যে রাত আনুমানিক পোনে তিনটার দিকে (০১৮৯০৭৯৭৮৯০) ন¤রে^র মোবাইল ফোন থেকে আমার স্বামীর নাম্বরে ফোন করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করে অপহরণকারীরা।
রাতের মধ্যে টাকা নিয়ে চন্দ্রহার বাজারের সেতুর কাছে থাকতে বলে। টাকা না দিলে স্বামীকে হত্যার হুমকি দেয়।
এত রাতে এত টাকা কোথায় পাবো বলে কাকুতি মিনতি করলে তারা ফোন কেটে দেন। এরপর আমি ও আমার দেবর নাসির উদ্দিন (২৫) ঘরে থাকা নগদ ২৫ হাজার টাকা, আমার গলার স্বর্নের চেইন ও কামের দুল (যার মূল্য ১লাখ ৬০ হাজার) দেয়া ব্যবস্থা করি।
পরে মাইক্রোবাস যোগে অপহরণকারীরা মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে পার্শ্ববর্তী চন্দ্রহার বাজারে এসে লোকজনের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে গাড়ি থেকে আহত অবস্থায় স্বামী শাহাদাতকে ফেলে যায়।
আমরা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে এ ব্যাপারে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করি।