বছরের পর বছর পার হলেও সংস্কার হয়নি বাগেরহাটের রামপালের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ সব সড়ক সংস্কারের অভাবে সাধারন মানুষের চলাচলের ভোগান্তির জেনো শেষ নেই। সংশ্লিদষ্টের তদারকিহীনতায় জরাজীর্ণ হয়ে দীর্ঘদিন ধরে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো। ভূক্তভোগীরা দাবি করেন বর্ষা মৌসুম আসার আগেই এসব সড়ক সংস্কারের উদ্যেগ নেওয়া না হলে চলাচলের অনুপযোগীর আশংকা রয়েছে সাধারন মানুষের।
সরেজমিনে দেখা যায়, রামপাল উপজেলার ফয়লাহাট বেইলি সেতুর মোড় থেকে গোবিন্দপুর অভিমুখী টাটেরহাট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তাটির পুরো রাস্তাই খানা খন্দকে ভরা। যানবাহন নিয়ে চলাচল করতে সাধারন মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে । যেকোন একটি যানবাহন চলে গেলে ধুলার রাজ্যে পরিনত হয়। রাস্তাটি এডিবির টাকায় গত মৌসুমে ইটের সোলিং বসালেও তা অল্প দিনেই উঠে খানা খন্দকে পরিনত হয়েছে। বাগেরহাট থেকে মোংলা পোর্ট যাতায়াতের জন্য গোবিন্দপুর, হোগলডাঙ্গা, বাইনতলা, গিলাতলা, খানপুর ও ফয়লাহাট, বাজারে যানবাহন নিয়ে প্রবেশের একমাত্র এই রাস্তাটিই ভরসা।
অন্যদিকে ভাগার কাদিরখোলা মসজিদের সামনে থেকে শ্রীকলস অভিমুখি প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তার ইটের সোলিং উঠে এলোমেলো হয়ে গেছে। পুরো রাস্তা এখন খানা খন্দকে ভরা। এলাকার মানুষ যেনো তেনভাবে পায়ে হেটে চলাচল করতে পারলেও যানবাহন নিয়ে পড়ছে চরম বিপাকে। দিনের বেলায় চলাচল করতে পারলেও রাতে আলো ছাড়া চলাচল করা যায়না। সাধারন মানুষ ও পরিবহণ শ্রমিকেরা চাঁদাতুলে মাঝেমধ্যে রাস্তাটি সংস্কার করলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির উদাসীনতায় দীর্ঘ চার পাঁচ বছর ধরে অবহেলিত হয়ে পড়ে আছে বলে অভিয়োগ করেন স্থানীয়রা।
রামপাল সদর হতে বগুড়া নদী ব্রীজ পার হয়ে বেলাই ব্রীজ পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটারের তিন কিলো রাস্তাটি যেনো গলার কাঁটা। ইটের খোয়া বেরিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বগুড়ানদী থেকে বেলাইব্রীজ অভিমুখের অংশটুকু কোনো যানবাহনই চলাচল করতে পারেনা। এছাড়া ঘুর্ণীঝড় ইয়াসের জলোচ্ছ্বাসে বগুড়ানদীর পাশে রাস্তাটি ভেঙে গেছে। অপরিকল্পিত বগুড়ানদী খনন করার কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটি অনেকটাই এখন নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে এবং তা অব্যাহতও আছে ।
রনশেন বাসস্ট্যান্ড মোড় থেকে ফয়লাহাট এক গেট পর্যন্ত মাত্র এক কিলোমিটার রাস্তার কার্পেটিং উঠে খানা খন্দকে পরিনত হয়েছে। এই রাস্তা দিয়ে কয়েকটি গ্রামের মানুষ চলাচল করে। দীর্ঘদিন ধরে এই রাস্তার কার্পেটিং উঠে ইটের খোয়া বেরিয়ে গেছে। এই ইটের খোয়াও এখন আস্তে আস্তে উঠে ছোট বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। যানবাহন নিয়ে লোকজন এই রাস্তা দিয়ে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
রনশেন–মানিকনগর-গৌরম্ভা রাস্তার রনশেন থেকে নবাবপুর ত্রানের সেতু পর্যন্ত রাস্তাটির ইটের সোলিং উঠে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। মাত্র এক কিলোমিটারের এই রাস্তাটির অধিকাংশই জায়গায় ইটের সোলিং উঠে গেছে।
মোটরসাইকেল আরোহী আরমান হোসেন বলেন, আমি এই গাড়ি ভাড়া চালায় খাই। প্রতিদিনই ফায়লা থেকে বাগেরহাট পর্যন্ত যাই কিন্ত রাস্তার যে অবস্তা তাতে ডাবোল ভাড়া দিলিও জাতি মন চায় না। সবসময়ই সংশয় থাই কখন যেনো দূর্ঘটনা ঘটে যায়। মাহেদ্র চালক মুরাদ শেখ বলেন, আমাদের নিত্যদিনের কাজ এই গাড়ি চালানোর। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ফয়লাহাট থেকে বাগেরহাট কোর্টে ভাড়া নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু রাস্তার যে বেহালদশা তাতে খুবই কষ্ট হয় আমাদের। ভাড়াবৃদ্ধিতেও যাতায়াতের মন চায় না। ইজিবাইক চালক গোলাম মোস্তফা বলেন, গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার এমন বেহালদশা খুবই কষ্টদায়ক। জনপ্রতিনিধি বা সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতায় চরম ভোগান্তিতে আজ সাধারণ মানুষেরা।
এবিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী, গোলজার হোসেন বলেন, রামপাল উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি রাস্তার বেহালদশায় সাধারণ মানুষের চলাচল ব্যহত হচ্ছে যা খুবই দুঃখ জনক। ইতিমধ্যে ফয়লাহাট থেকে টাটেরহাট পর্যন্ত রাস্তাটি ২০২১- ২০২২ অর্থবছরে মেইন্টেসের পরিকল্প রয়েছে এবং জুন মাসের পরেই এটার প্রাক্কলন প্রেরণ করা হবে। এছাড়া ফয়লাহাট বাজার থেকে রনসেন পর্যন্ত রাস্তাটির প্রাক্কলন ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে এবং ভাগা কাদিরখোলা থেকে সৃকলষ পর্যন্ত রাস্তাটির প্রাক্কলন সদর দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রশাসনিক অনুমোদন পেলে টেন্ডারের প্রক্রিয়া শুরু করবো। এছাড়া রামপাল সদর থেকে বেলাইব্রীজ পর্যন্ত রাস্তাটির কাজ চলমান আছে। বর্ষা মৌসুম শেষ হলেই কার্পেটিং কাজ সম্পন্ন করে চলাচলের উপযোগী করে দিবো।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা – মোঃ কবির হোসেন বলেন, উপজেলার বেশ কয়েকটি রাস্তার বেহালদশা হওয়ায় খুবই দুঃখ জনক। মানুষের চলাচল বিঘ্নিত হওয়ায় আমরা ইতিমধ্যে ওইসব রাস্তা পরিদর্শন করেছি। তবে কিছু রাস্তার কাজ চলমান আছে এবং অন্যান্য গুলোর কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিশেষ করে করোনাজনিত কারনে কাজের কিছুটা ব্যহত ঘটেছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে চলনান কাজ শেষ করে চলাচলের উপযোগী ও বেহাল সড়কগুলোর কাজ শুরু করতে পারবো। উপজেলা প্রশাসক বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছে।