নামহীন
নামহীন এই শহর
আর এই শহরের ভেতর দিয়ে সেই পাহাড় যাতায়াত করে
সন্ধ্যায় আমার বন্ধুরা চলে গেছে জাহাজে
সেইসব নৈঃশব্দ্য আমার শরীর
আমি জেগে উঠে বসি মস্তক হাতে
আমরা শেষ করে ফেলেছি সব দুঃখ একটি ভাঙা গোড়ালির মতো
মধ্যরাতে আকাশে চাঁদ উঠছে যেখান দিয়ে আমরা বেরিয়ে যেতে পারি
প্রতিশ্রুতি মতো
মৃত্যুর পরে প্রতিশ্রুতি মতো আমি অনেক দিন কাঁদব
মধ্যরাতে আমার কষ্ট নিতে আসতো আমার মা
হাওয়ার ভেতরে ডানা পালক সব গুছিয়ে রাখতো আমার মা
না দেখা একটা বাগান ছিল আমাদের কালবৈশাখীর ভোরে ছড়িয়ে রেখে দিত কত আম
এখনো আমি বছরের প্রথম মেঘের সাথে জাঙালের ওপর দিয়ে সূর্যের দিকে ছুটে যাই
নিজ এঁকে নিয়ে গভীর জল পার হই
আর আমার সেই সব বন্ধুরা এখন সব আকাশ
চেয়ে দেখি তাদের সাদা শার্ট
স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে গেছে বৈঠা
ভেসে যাওয়া রাশি রাশি ভাঙা তক্তা
আর স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে গেছে বৈঠা
কাটাকাটি করা আকাশ
সেলাই করা ঈগল উড়ছে দূরসন্ধ্যার দিকে
বৃষ্টির দ্বীপগুলোয় আলো জ্বলছে
হাত পা দিয়ে বানানো বাড়িগুলোর নিচ থেকে যখন উঠে এসেছে ভিতের পরিশ্রম সে সময়ে আমরা ব্যথা নিয়ে অকারণ ছুটে গেছি শূন্যে
বন্ধুরা চলে গেছে মরুভূমির মতো
চৌচির পাহাড়ের ফাটল থেকে উঠে আসছে রমণীয় হাওয়া
আমরা নিথর জল মুখোমুখি
আর বেলে মাটির অসীম
সূর্য বনাঞ্চল নিয়ে ফিরে আসবে কাল
ফোয়ারা
আমার হাতের নিচে দিয়ে খুব ধীরে নদীর মতো বয়ে যাচ্ছে একটি নামাঙ্কিত কবরখানা
আকাশের ওপর তখন একটা চওড়া মাঠ
ঝোপ ঝাড় আর আমাদের আস্তানাগুলো দেখা যাচ্ছে
এবং এগিয়ে আসছে একটি শহর
এ শহরের কিছু অনুভূতি চাঁদ উঠলে দেখতে পাই
আর সেগুলো কুড়িয়ে নেয়ার জন্য গোপন পায়ে আমি ঘুরে বেড়াই
আমার সঙ্গে রয়েছে পাহাড়
যতটা নৈঃশব্দ্য তাতে ধরে
তাই আমিও অচেনা
হঠাৎ একটি ফোয়ারা উড়ে যায়
আমরা ঠাণ্ডা হই
ছুটে বেড়ানো মস্তক গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকি
আর স্রোত আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যায়
পল্লবিত রাত্রি
নক্ষত্র সমারোহ
আর কোনো কারণ ছাড়াই আমরা বেঁচে থাকি
শেষ নিরবতা
শেষ নিরবতা
এখানে কোনো ধাতুরও শব্দ নেই
কোনো এক কান্না পর্যন্ত পৌঁছে গিয়ে ফিরে এলো আমাদের ছেঁড়া দুটি কান
শিকারী পাখিরা আকাশের দেয়াল ঘেঁষে চাপা দিচ্ছে আমাদের সদ্য দেওয়া কবরগুলোকে
যেগুলো কয়লার তলায় অশ্রুর মতো সমুজ্জ্বল
জনহীন দোকানে নক্ষত্রের আলো
সৌন্দর্যের কোঠাবাড়ি
ফিটফাট গম্বুজ গুলো আমাদের ওপর নজর রাখছে
বাঁইরে দাঁড়িয়ে কেউ
এ শহরে আমার দুঃখ ছিলো না তাও আমার সঙ্গে হাঁটতো একটি পাহাড়
পুরোনো পাড়া দিয়ে আমরা ফিরছিলাম আকাশের চাঁদের মতো
আমরা গান গাইছিলাম
অন্য পৃথিবীর গান
আর গানের লাইনগুলো পরিযায়ী পাখিদের পালকে জড়িয়ে একসঙ্গে চলে গেল
বাড়ি ফিরে আমি ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখলাম
শুকনো রিজার্ভারের
বন্ধ দৃষ্টির মধ্যে প্রাচীন আকাশ
বাইরে দাঁড়িয়ে কেউ
সন্ধ্যায় মাথায় রুমাল বাঁধা স্রোত আমাদের
ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো একটি চিহ্নের দিকে