গাড়ি কেনার আগেই ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করে নিয়েছিলেন সাফায়েত আলম। ফলে নতুন গাড়িটা কেনার পর মাঝে মধ্যে নিজেই ড্রাইভ করতেন। আজও চালক হিসেবে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন নিউ মার্কেটের উত্তর দিকের গেট পেরিয়ে নীলক্ষেতের দিকে। এখানে ওয়ান-ওয়ে রাস্তায় উভয় পাশে রিকশার জট প্রকট। এ সড়কে গাড়ি চালানো ঝুঁকিপূর্ণ। জানা ছিল না তাঁর। চলমান গাড়ির দুই পাশ দিয়েই সাঁই সাঁই করে রিকশা ছুটে যাচ্ছে। সাবধানের মার নেই। সাবধানেই চালাচ্ছিলেন গাড়ি। আচম্বিত এক রিকশা ডান পাশ দিয়ে ছুটে যাওয়ার সময় ঘষা দিয়ে গেল নতুন গাড়ির বডিতে। প্রিমিও গাড়ির বুকে সাঁই করে বসে গেল সরল রেখার মতো লম্বা এক দাগ, সাফায়েতের মনে হলো দাগটা স্যাঁত করে বসে গেছে নিজের বুকে। গাড়ি থেকে নেমে বিকট দাগটা দেখে কিছুটা সময়ের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। তারপর কিছুটা সামনে ছুটে রিকশাওয়ালাকে ধরে সিট থেকে টেনে নামালেন নিচে। সজোরে তার নাক বরাবর চালিয়ে দিলেন এক ঘুষি। সঙ্গে সঙ্গে নাক ফেটে রক্ত ঝরতে লাগল। রিকশাচালকের ঘামে ভেজা গেঞ্জি লাল হয়ে উঠল। দৃশ্যটা দেখে আশপাশের রিকশাচালকরা এক হয়ে ঘিরে ধরল সাফায়েত আলমকে। বেধড়ক পেটাতে লাগল তার টাই ধরে। পিচঢালা সড়কে উপুড় হয়ে পড়ে গেলেন তিনি। ট্রাফিক পুলিশ ছুটে এসে ঘিরে ধরলেন সাফায়েত আলমকে। এ যাত্রায় বেঁচে গেলেন তিনি।
রক্তাক্ত অবস্থায় উঠে দাঁড়ালেন সাফায়েত। সাধের নতুন গাড়ির দিকে তিনি তাকিয়ে দেখলেন সামনে-পেছনের উইন্ডশিল্ড ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ট্রাফিক সার্জেন্ট বললেন, ‘ওঠেন রিকশায়। হাসপাতালে যান। কেউ আছে সঙ্গে?’
মাথা দোলালেন, ‘কেউ নেই।’
রক্তাক্ত নিজের অবস্থা দেখতে পাচ্ছেন না তিনি । গাড়িটাই দেখছেন কেবল! নতুন গাড়ির এ-দশা! প্রিয় গাড়ির এ-হাল! মোটেও হাহাকার করছে না মন। মুহূর্তের মধ্যে কী ঘটে গেলে বুঝতেই পারছেন না। অনুভূতিহীন হয়ে গেছেন। ভোঁতা হয়ে গেছেন তিনি।
সার্জেন্ট বললেন, ‘রিকশায় বসতে পারবেন?’
জবাব বেরোল না সাফায়েতের মুখ থেকে।
‘আপনার সেলফোনটা দিয়ে বাসায় কল করুন।’
কল করার আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। একবার পকেটে হাত ঢোকালেন তিনি। পকেট খালি। সেট নেই পকেটে। মানিব্যাগও নেই। উধাও হয়ে গেছে কখন! টের পাননি তিনি।
‘গাড়িতে কি রেখেছেন সেট? মানিবাগ?’ একবার নিজের মনে প্রশ্ন উদয় হলো। গাড়ির দিকে এগোতে গিয়ে দেখলেন পা সামনে চলছে না।
‘গাড়ি থানায় যাবে। আপনি হাসপাতালে যান। ঘরের কাউকে কল করুন।’
বোবার মতো দাঁড়িয়ে রইলেন সাফায়েত আলম! রক্তাক্ত নিজেকে এখনো দেখতে পাচ্ছেন না। শার্ট-টাই ছিঁড়ে গেছে, হাঁটুর গোলাকার চাকতির মতো হাড়, পেটেলার ওপরের ত্বক ছিঁড়ে গেছে, বুঝতে পারছেন না। কোথাও ব্যথার অনুভূতি হচ্ছে না এখনো। হাবলুর মতো তাকিয়ে রইলেন ভাঙা গাড়ির দিকে।
পুলিশের গাড়ি এসেছে। দেখলেন সামনের বাম্পারে চেইন বেঁধে গাড়িটি টেনে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশের জিপ।
সার্জেন্ট বলল, ‘হাত ধরুন, ওইদিকে সড়ক দ্বীপে বসুন। আপনার কেউ এলে বাসায় বা হাসপাতালে যাবেন।’
বাসা শব্দটা উচ্চারণের সঙ্গে মনে পড়ল স্ত্রীর কথা। স্ত্রীর সেল নম্বরও মনে পড়ল। গড়গড় করে কেবল নম্বরটা বলে গেলেন ০১৭১১…
সার্জেন্ট ওই নম্বরে কল করলেন। নম্বরটা বন্ধ আছে। এ মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না।
‘আর কারও নম্বর মুখস্থ আছে?’
মেয়ের নম্বরটা মুখস্থ বলার চেষ্টা করেও স্মরণ করতে পারলেন না।
‘আপনি এখন বেওয়ারিশ হয়ে গেলেন। এখানে কেউ নেই আপনার পক্ষের, কাছের। আশপাশে কেউ থাকে?’
জবাব বেরোল না। শূন্য চোখ তুলে চোখের পাতা খুলে তাকিয়ে রইলেন তিনি সার্জেন্টের দিকে।
‘আপনার ভিজিটিং কার্ড আছে? ঠিকানা কি? বাসা কোথায়?’
নিজের বাসার ঠিকানা খুঁজে পাচ্ছেন না, মেমোরিতে আসছে না। শূন্য চোখের শূন্যতা ক্রমশ গভীর আর প্রশস্ত হতে লাগল। বোবা হয়ে গেলেন, বাকশক্তি হারিয়ে বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলেন তিনি।
এ সময় এখানে এসে হাজির হলেন মোটরসাইকেল আরোহী সার্জেন্ট, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাকে সব খুলে বললেন ডিউটি সার্জেন্ট। ঊর্ধ্বতন সার্জেন্ট গাড়ির নম্বর দিয়ে ‘বিআরটিএ’কে জানালেন ঠিকানা জানানোর জন্য। কিছুক্ষণের মধ্যে গাড়ি গেল থানায়, সাফায়েত আলমকে পাঠানো হলো হাসপাতালে। তার পরিবারের সদস্যরা ছুটে গেছেন হাসপাতালে।
স্ত্রীকে দেখেও বোকার মতো তাকিয়ে রইলেন সাফায়েত আলম। জরুরি বিভাগ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে ওয়ার্ডে ভর্তির সিল দেওয়া হয়েছে। বড় করে সিল মারা হয়েছে : আরটিএ। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ইনজুরির চিহ্ন গুলো নোট করে রেখে দিয়েছেন। হতবিহ্বল স্বামীর সাড়া না পেয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসককে মিসেস আলম জিগ্যেস করলেন, ‘কী হয়েছে ওনার? আরটিএ মানে কি?
‘মানে রোড ট্রাফিক অ্যাকসিডেন্ট।’
‘উনি কি অ্যাকসিডেন্ট করেছেন? নাকি ওনাকে মারপিট করা হয়েছে?’
‘ইনজুরি গুলো দেখে মনে হচ্ছে বেধড়ক পেটানো হয়েছে।’
‘তো! আরটিএ লিখলেন কেন?’
‘পুলিশ ভর্তি করিয়েছেন ওনাকে, আমাদের এই জরুরি বিভাগে। তাদের রেফারেন্সে আরটিএ লিখতে হয়েছে। আমরা ইনজুরির নোট রেখে দিয়েছি এভিডেন্স হিসেবে।’
‘উনি নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করেন। বেশ সাবধানে চালান। ভালোই চালান। উনি কি অ্যাকসিডেন্ট করেছেন, নাকি ওনাকে অন্য কেউ?’
‘বিষয়টা আমরা জানি না। নির্দিষ্ট গাড়ি থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা। থানায় খোঁজ নিন। পুলিশের সঙ্গে কথা বলুন।’
‘জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কি শেষ?’
‘জি। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। ব্রেনের সিটি স্কেন করে তাকে সার্জারি ইউনিট ওয়ানে ভর্তি করার ব্যবস্থা করেছি।’
‘সিটি স্কেন কেন লাগবে?’
‘ওনার মাথায় ট্রমার চিহ্ন রয়েছে। অনেকটা ফুলে উঠেছে একপাশ। খুলির ভেতর সমস্যা হলো কি না দেখতে হবে। কথাও বলছেন না। প্রয়োজনে ব্রেনের স্পিচ সেন্টার ঠিক আছে কিনা দেখার জন্য আরও পরীক্ষা করা লাগতে পারে।’
‘আপনারা যা বোঝেন, তাই করবেন। আমাদের আর বলার কিছু নেই।’ বলেই সাফায়েত আলমের হাত ধরে দাঁড়িয়ে রইলেন মিসেস আলম।
সাফায়েত আলমের ব্রাদার ইন ল ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা।খবর পেয়ে তিনি ছুটে গেছেন থানায়। নতুন গাড়িতে চড়ে সবাই সেলিব্রেট করেছিলেন। গাড়ি কেনার পর উৎসবমুখর ভোজেরও আয়োজন করা হয়েছিল। মাত্র কয়েক দিন আগের কথা। এ ক’দিনের ব্যবধানে গাড়ির এ-দুর্দশা!
ওসি সাহেবকে তিনি বললেন, ‘এ তো অ্যাকসিডেন্টের নমুনা না, ওসি সাহেব!’
‘জি। রিকশাওয়ালারা হাতের কাছে যা পেয়েছে, ইট-পাথর গাড়িতে ছুঁড়ে মেরেছে, লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে উইন্ডশিল্ড। ছোট ঘটনায় বড় বিপর্যয় হয়ে গেল।’ বলতে বলতে পুরো ঘটনাটা খুলে বললেন তিনি।
‘আমার বোনের হাজবেন্ড কাউকে চিনতে পারছেন না। মারাত্মক জখম হয়েছেন। মামলা না করে তো বিষয়টা ছেড়ে দিতে পারি না।’
‘সেটা আপনাদের ইচ্ছা। তবে রিকশাওয়ালাদের বিরাট মুভের মধ্য দিয়ে ঘটে গেছে ঘটনাটা। কাউকে একক আসামি দেওয়া যাবে না। বিরাট সংখ্যক আননোন রিকশাওয়ালাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। তাছাড়া আপনার ব্রাদার ইন ল’রও দোষ আছে। গাড়িতে স্কেচ দেওয়ায় নেমে রিকশাওয়ালাকে তিনি মেরেছেন। রক্তাক্ত হয়েছে ওই রিকশাওয়ালাও। তাকেও ভর্তি করানো হয়েছে হাসপাতালে। মামলা-পাল্টা মামলার ঘটনা এটা।’
‘তিনি যে মেরেছেন তার কোনো প্রমাণ আছে? কেউ সাক্ষী দেবে তার বিরুদ্ধে?’
‘ওই সড়কে শত শত রিকশাওয়ালা থাকে। দিনের আলোয় সবার চোখের সামনে আকস্মিক ঘটে গেছে ধ্বংস, মারপিট, ভাংচুর! সাক্ষীর কি অভাব হবে?’
‘তারা সবাই তো মুভের অংশ। আসামি দল। তাঁদের কথা কি সাক্ষ্য হিসেবে নেওয়া যাবে?’
‘সাক্ষীর অভাব হবে না, স্যার।’
সাফায়েত আলমের ব্রাদার ইন ল’ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তা, চুপ হয়ে গেলেন এ-মুহূর্তে। একবার মাত্র তাকালেন গাড়িটির দিকে। গাড়িটির দুর্দশা দেখে নিজেই মর্মাহত হয়েছেন। নিজের বোন, ভাগ্না-ভাগ্নিদের কী দশা হবে গাড়ির এ হাল দেখে, ভেবে কূল পেলেন না। এমন একটা ঘটনা বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেওয়া উচিত না, এটুকুই বুঝলেন তিনি।
‘গাড়িটা কি এখানেই থাকবে?’
‘মামলার আলামত হিসেবে গাড়ি এভাবে, এখানেই থাকবে। এটাই নিয়ম।’
ব্রাদার ইন ল’ বিড়বিড় করে বললেন, ‘একদিকে দোষ করেছে রিকশাওয়ালারা দলবেঁধে, আরেক দিকে এ-গাড়ির চালক। অথচ থানায় থাকবে গাড়িটা! এ-কেমন নিয়ম!’
‘কথাটা শুনে ফেললেন ওসি। শুনেও কোনো জবাব দিলেন না। যেহেতু পুলিশ কেস হয়ে গেছে, আলামত তারা রেখে দিতে বাধ্য।’
বাইরে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঝমঝম করে, বৃষ্টি পানিতে ভিজে যাচ্ছে গাড়ির ভেতরটাও। মালিক নেই। মালিকের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের খারাপ লাগছে! ‘মালিক সামনে থাকলে এত নতুন গাড়ির এ-হাল কি মেনে নিতে পারতেন!’
‘গাড়ির কাভার রয়েছে। ঢেকে দেওয়া যায় না? ভিজে তো একাকার হয়ে যাবে ভেতরের সব কিছু!’
‘গাড়ির চাবি থাকলে দেওয়া যেতে পারে।’
‘চাবিটা কার কাছে আছে, দেখুন না। তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নিন!’
এ-কথার পিঠে কথা চালালেন না ওসি। ‘একজনকে নির্দেশ দিলেন গাড়ির চাবি নিয়ে ব্যাক ডালা খুলে কাভারটা দিয়ে ঢেকে দিতে।’
থানা প্রাঙ্গণে অ্যাকসিডেন্টে ধ্বংসপ্রায় অনেক গাড়ি এদিকে-ওদিকে অযত্ন অবহেলায় পড়ে রয়েছে! হয়তো এসবের মালিক পরপারে চলে গেছে অথবা ড্রাইভার। গাড়ি নেওয়ার কেউ নেই। ভাঙা গাড়ির ভেতর ঝোপঝাড় তৈরি হয়ে আছে, জঙ্গল-আবর্জনার স্তূপ হয়ে আছে! দেখে তার বুক ভেঙে যেতে লাগল ভগ্নিপতি সাফায়েত আলমের জন্য।
আরও কয়েকটি পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা নিশ্চত হয়েছেন দেহের ভেতরে জখম গুরুত্বপূর্ণ নয়। হঠাৎ এমন ঘটনায় বিমূঢ় হয়ে আছেন তিনি। ভালো মতো ঘুম দিয়ে উঠতে পারলে কথা বলার ক্ষমতা ফেরত আসবে। শুনে আশ্বস্ত হয়ে স্বামীর পাশে বসে রইলেন মিসেস আলম। আত্মীয়-স্বজনরা ছুটে আসছেন। বড় ছেলে লন্ডনে। তাকেও খবর দেওয়া হয়েছে। সে পিএইচডি করছে সেখানে। অবস্থা সংকটজনক নয় মেসেজ পেয়ে সে স্কাইপিতে বাবার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছে। বাবা ঘুমে থাকায় মায়ের সঙ্গে কথা বলে সন্তুষ্ট হয়েছে। দুই মেয়েও বাসা থেকে হাসপাতালে এসেছে। সাফায়েতের এক ভাই ও বোনও ছুটে এসেছেন। সবাই কেবিনের ভেতর বসে আছেন চুপচাপ। কারও মুখে কোনো কথা নেই। সবাই স্তব্ধ। বিমূঢ়। এমন ঘটনা ঘটতে পারে সাফায়েতের এ আনন্দময় সময়ে, বিশেষ করে যখন নতুন গাড়ি কিনে কিছুদিন যাবৎ তার মধ্যে আনন্দ জোয়ার বয়ে যাচ্ছিল, তখন! হঠাৎ খরস্রোতা ভাটির টানে তাকে ভেসে যেতে দেখে পুরো পরিবার তো বটেই কাছের স্বজনরাও ভেঙে পড়েছেন। সবাই নির্বাক হয়ে গেছেন।
আচম্বিত ঘটে যাওয়া দুর্যোগের এ-মুহূর্তে শক্ত হাতে ভূমিকা রাখছেন ছেলে-মেয়েদের মামা। সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্তা হিসেবে চোটপাট দেখাচ্ছেন না। বরং ঠাণ্ডা মথায় তিনি মোকাবিলা করার চেষ্টা করছেন পুরো ঘটনা। থানায় গিয়েছেন। পুরো বিষয় জেনেছেন। ঘটনার সূত্রপাত সম্বন্ধে জেনেছেন। নিজের বোনের হাজবেন্ডকে দোষ দিতে চাচ্ছেন না। এ মুহূর্তে তিনিও এসে ঢুকেছেন হাসপাতালের কেবিনে।
ছোট মেয়ে মামাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। তার কান্না দেখে সবার চোখ থেকে ঝরতে লাগল বিস্ময়ের অশ্রুকণা।
হঠাৎ ঘুম ছুটে গেল সাফায়েত আলমের। উঠে বসে সবাইকে দেখে হকচকিয়ে গেলেও কান্নারত মেয়ের দিকে হাত বাড়ালেন।
ছোট মেয়েটি বাবার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ল।
‘সব খোঁজখবর নিয়েছি আমি। থানায় গিয়েছিলাম। রিকশাওয়ালাদের তান্ডবের প্রমাণ দেখে এসেছি, শুনে এসেছি। ওদের বিরুদ্ধে মামলা করা ছাড়া উপায় নেই।’
বড় ভাইয়ের মুখে মামলার কথা শুনে চমকে উঠলেন মিসেস আলম। কোনো মতামত জানাতে পারলেন না।
সবাই বিস্ময় নিয়ে দেখল সাফায়েত আলমের মুখে কথা ফুটেছে। সহজ হয়ে সম্বন্ধীর উদ্দেশে বললেন, ‘না, ভাইজান, মামলা-মোকদ্দমায় যাব না। এ-ঘটনার আসল গুপ্তঘাতককে চিনেছি। তাকে মোকাবিলা না করে মামলা করলে সমস্যার সমাধান হবে না।’
বাবাকে কথা বলতে দেখে বড় মেয়ে চিৎকার করে বলল, ‘আসল গুপ্তঘাতক কে, আব্বা? তাকে শাস্তি দিতে হবে না?’
‘আসল শত্রু আর আসল গুপ্তঘাতক আমার মগজে লুকিয়ে থাকা আচমকা তেড়ে ওঠা রাগ, উন্মত্ততা। ওই ক্রোধের পায়ে শেকল বাঁধতে না পারলে ভবিষ্যতেও ঘটতে থাকবে এমন ঘটনা।’