অদ্ভুত একটা গ্রাম। যেখানে কেউই কোনও জামাকাপড় পরে না। জামাকাপড় তো দূরের কথা, এক চিলতে কাপড় কিংবা আদিম কালের মতো লতাগুল্মের ডালপাতা দিয়েও শরীরের কোনও গোপন অংশও ঢাকে না।
না, আমি দক্ষিণ আমেরিকার ঘনজঙ্গলে ঘেরা আদিবাসীদের ডেরা কিংবা আফ্রিকার মাদাগাস্কারের মতো কোনও জায়গার কথা, যেখানে এখনও সভ্যতার কোনও আলো গিয়ে পৌঁছয়নি, সে রকম কোনও জায়গার কথা বলছি না।
বলছি, যুক্তরাজ্যের হার্টফোর্ডশায়ারের স্পিলপ্লাজ গ্রামটির কথা। ওই গ্রামে কেউই জামাকাপড়ই পরেন না। তাই গ্রামের বাইরে থেকে কেউ সেখানে এসে থাকতে চাইলে, তাঁরা যে রকম ভাবে থাকেন, ঠিক সে রকম ভাবেই তাঁদের থাকতে হয়।
শরীরে কোনও জামাকাপড় না চাপালেও ওই গ্রামের মানুষ জন কিন্তু বেশ সচেতন এবং যথেষ্ট সৌখিন। কড়া রোদ থেকে চোখকে বাঁচানোর জন্য তাঁরা সানগ্লাস পরেন। অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য গলায় নকশাদার রকমারি সোনার চেন পরেন। এক-এক আঙুলে পরেন রত্নখচিত নানা রঙের এক-একটি আংটি।
শুধু তাইই নয়, মদ্যপান করার জন্য গ্রামের ভেতরে কিছু দূরে দূরেই রয়েছে একেবারে শহরের মতোই ঝাঁ-চকচকে বারও। ব্যবহার করে নামি-দামি গাড়িও।
সব দিক থেকে বিচার-বিবেচনা করলে, কোনও বর্ধিষ্ণু গ্রামের থেকেই এটাকে আলাদা করা যাবে না। তফাৎ শুধু এক জায়গাতেই। এরা কেউ পোশাক পরে না। কেউ যদি ভুল করে পরেও, তা হলেই সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে সমাজচ্যুত করা হয়।
একমাত্র নগ্ন হয়ে থাকতে রাজি হলেই, ছবির মতো সুন্দর, বেশ সাজানো-গোছানো, পরিপাটি এই গ্রামে যে কেউই জমি কিনতে পারেন। অন্যথায় জমি তো মিলবেই না, যদি কেউ তলে-তলে কিনেও নেন, মিলবে না বাড়ি-ঘর করার অনুমতি কিংবা বসবাস করার কোনও সুযোগ। সে আপনি যত টাকা অফারই করুন না কেন কিংবা যতই লোভ দেখান না কেন। ওরা ও সবে ভোলার পাত্র নন।
যাঁরা ওই গ্রামের মধ্যে থাকেন, তাঁরা কিন্তু ওই নগ্নতার মধ্যে অসভ্যতার কিছু দেখেন না। উলটে বড় মুখ করে তাঁদের গ্রামটিকে যুক্তরাজ্যের সব চেয়ে পুরনো নগ্নতাবাদী অঞ্চল বলে তাঁরা দাবি করেন। পঁচাশি বছরের এক বাসিন্দা, ইছিয়ুট রিচার্ডসন তো নিজেই বললেন, আমি বুঝি না এটা নিয়ে এত হইচই করার কী আছে। আমি তো অন্য গ্রামের সঙ্গে এই গ্রামের কোনও পার্থক্যই দেখি না। অন্য গ্রামগুলো যে ভাবে জীবন ধারণ করে, আমরাও সেই ভাবেই করি। সকালে ঘুম থেকে উঠি। সারা দিন কাজকর্ম করি। বাজারে যাই। পানশালায় যাই। দুধওয়ালা থেকে পোস্টম্যান, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী আমারা একে অন্যের বাড়িতে যাই। সবই তো স্বাভাবিক। আমি তো অস্বাভাবিক কিছু দেখি না। আমরা শুধু জামাকাপড় পরি না, এইটুকুই যা তফাত। আর একটা তফাৎ অবশ্য আছে, সেটা হল, আমাদের এই গ্রামে আজ পর্যন্ত কোনও মেয়ে কখনও ধর্ষিত হয়নি। হ্যাঁ, এই একটি ব্যাপারে আমরা অন্য সব জায়গা থেকে ভীষণ ভীষণ ভীষণ ভাবে পিছিয়ে আছি।