এই মুহূর্তে বিশ্বের সব চেয়ে ধনী ব্যক্তি বিল গেটস বা জেফ বেজোস নয়। তাঁরা ধনীর তালিকায় প্রথম সারিতে থাকলেও এঁরা কিন্তু সর্বকালের সব চেয়ে ধনী নন। বিশ্বের সব চেয়ে ধনী ব্যক্তি এমন এক জন, যাঁর সম্পত্তির পরিমাণের ধারে কাছেও বিল-জেফরা যেতে পারবেন না! এমনকী ইতিহাসের কোনও রাজাও ছুঁতে পারবেন না তাঁকে।
ফোর্বস ম্যাগাজিন অনুসারে ২০১৮ সালে বিশ্বের সব চেয়ে ধনী ছিলেন আমাজনের সিইও জেফ বেজোস। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ১১২ বিলিয়ন ডলার। তার পরেই যাঁর স্থান, তিনি হলেন মাইক্রোসফট অধিকর্তা বিল গেটস। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ৯০ বিলিয়ন ডলার। তার পরে রয়েছেন মার্কিন সংস্থা বার্কশায়ার হাথাওয়ের অধিকর্তা ওয়ারেন বাফে। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ সাকুল্যে ৮৪ বিলিয়ন ডলার। ভারতের মধ্যে সব চেয়ে ধনী মুকেশ অম্বানী। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ৩৯ বিলিয়ন ডলার।
বিশ্বের ধনীর তালিকায় থাকা প্রথম যে চার জনের সম্পত্তির উল্লেখ করা হল, তাঁদের সমস্ত সম্পত্তি এক জায়গায় করলেও যে পরিমাণটা দাঁড়ায়, তার থেকেও অনেক অনেক বেশি সম্পত্তির মালিক হলেন, সর্বকালের সব চেয়ে ধনী ব্যক্তি— মানসা মুসা। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ৪০০ বিলিয়ন ডলার।
তাঁর সম্পত্তির ধারে কাছেও কেউ কোনও দিন যেতে পারবে না, তাই তাঁর নামটা বাদ দিয়েই বিশ্বের ধনীদের তালিকা তৈরি করা হয়।
তিনি ছিলেন আফ্রিকার মধ্যে এই মুহূর্তে যে দেশটি সব চেয়ে গরিব, সেই মালির রাজা।
তিনি ১৩১২ সালে মালির সিংহাসনে বসেন। তখন তাঁর নাম ছিল মুসা কেইটা-১। রাজা হওয়ার পর তাঁর নতুন নাম হয় মানসা মুসা। এই কিছু দিন আগেই আমেরিকার ইভানস্টোনে নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে তাঁর জীবন নিয়ে একটি প্রদর্শনীও হয়ে গেল।
ইতিহাসবিদদের মতে, তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ এতটাই ছিল যে, তাঁর সময়কালে তো নয়ই, অতীতেও ওই পরিমাণ সম্পত্তি কারও ছিল না। ভবিষ্যতেও কারও হবে না।
কারণ, তিনি আফ্রিকার যে রাজ্যের রাজা ছিলেন সেই মালিতে প্রচুর সোনার খনি ছিল। আর মানসা মুসাই সেই সব খনির প্রথম সন্ধান পান। আর সেই সোনাই তাঁকে সর্বকালের সব চেয়ে ধনী ব্যক্তিতে পরিণত করেছে।
ক্ষমতায় আসার পরে নিজের সামাজ্যের বিস্তৃতি ঘটিয়েছিলেন মুসা। সেনেগাল, গাম্বিয়া, গিনিয়া, বুরকিনা ফাসো, মালি, নাইজেরিয়ার উপর আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন।
ইতিহাসবিদদের মতে, ১৩২৪ সালে মুসা যখন মক্কা যাত্রা করেন, তখন তাঁর যাত্রাপথের সেই ৪ হাজার মাইল ছিল অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ। তাঁর সঙ্গে ছিল বিশাল সেনাবাহিনী। শুধু সামনেই ছিল পাঁচশো সেনা। এ ছাড়াও ছিল কয়েক হাজার ক্রীতদাস এবং প্রজা। আর ছিল অফুরন্ত ধনদৌলত।
এত ধনদৌলত সঙ্গে নিয়েছিলেন যে, সেই বিশাল বাহিনীও অত ঐশ্বর্য বহন করতে পারছিল না। তাই শুধুমাত্র সোনা বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই সঙ্গে নিয়েছিলেন অনেকগুলো ঘোড়া এবং উটকেও।
যাত্রাপথের বিভিন্ন জায়গায় ওই সোনা দান করেছিলেন মুসা। জনশ্রুতি আছে, মিশরের কায়রোতে তিনি এত সোনা দান করেছিলেন যে, সেই সময় ওখানে ভয়ঙ্কর মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছিল। সেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে প্রচুর সময় লেগেছিল।
১৩৩৭ সালে মানসা মুসা মারা যাওয়ার পরে তাঁর ছেলে মেঘান-১ রাজা হন।