ঢাকায় এএলআরডি আয়োজিত একটি কর্মশালায় সাংবাদিক ও নারী অধিকার কর্মীরা সমাজে নারীর সম অধিকার ও ক্ষমতায়নের জন্য সর্বজনীন পারিবারিক আইন খুব জরুরী বলে মত প্রকাশ করেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক, শামসুল হুদা তাঁর বক্তব্যে বলেন, নারীরা প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে ব্যাপকভাবে কৃষি কাজ করছে, কৃষিপণ্য উৎপাদনে অবদান রাখছে। গবাদি-পশু পালনেও তাঁরা অবদান রাখছে। কিন্তু নারীরা তাদের অধিকারের জায়গায় বঞ্চিত। উত্তরাধিকার আইনেও নারীরা সম্পদ থেকে বঞ্চিত। যদিও বাংলাদেশ সংবিধানে নারীর সম অধিকারের কথা বলা আছে। মিডিয়া এ ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। নারী নির্যাতনের ব্যাপারে মিডিয়া সহ সকলকে সোচ্চার হতে হবে।
শনিবার সকাল ১১ টায় রাজধানীর ওয়াইডব্লিউসিএ’র কনফারেন্স রুমে ‘জেন্ডার সমতা অর্জনে এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে চাই নারীর ভূমি, কৃষি অধিকার: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বেসরকারি সংস্থা এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এর আয়োজনে এ কর্মশালায় ২০ জন সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মী অংশগ্রহণ করেন।
এএলআরডি’র উপ-নির্বাহী পরিচালক রওশন জাহান মনি বলেন, আমাদের খাসজমি বিতরণ সংক্রান্ত নীতিমালা আছে, কিন্তু আইন নেই। আইন না থাকলে বাধ্যবাধকতা থাকে না বা অধিকার রক্ষায় চ্যালেঞ্জ করা যায় না। কৃষক হিসেবে নারীর স্বীকৃতি না থাকায় তাঁরা কৃষি ঋণ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত। কৃষি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে নারীদের মজুরি বৈষম্য রয়েছে। এটা দূর করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, কৃষি জমি অকৃষি, শিল্পায়ন এবং অন্যান্য খাতে চলে যাচ্ছে। এতে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। আমরা প্রবৃদ্ধি নির্ভর উন্নয়ন নয়, অন্তর্ভূক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন চাই চাই, যেখানে নারীসহ সকল প্রান্তিক, জাতিগত এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু মানুষের নিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। দেশের সকল সম্প্রদায়ের নারীদের ভূমি, সম্পত্তি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সমান অধিকার নিশ্চিতে আমাদের কিছু আইন এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার দরকার। এই দাবিগুলো সামনে আনতে হবে। মিডিয়া এ ব্যাপারে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
মূল প্রবন্ধে এএলআরডি’র সানজিদা খান রিপা বলেন, বাংলাদেশে কৃষিকাজ মূলত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান চালক, যেখানে নারীর অবদান পুরুষের সমান বা তা অতিক্রমও করে। সরকারি তথ্যানুযায়ী ৭২.৬ শতাংশ নারী কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত,অথচ, ভূমিতে তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ বা মালিকানা নেই। কৃষক হিসেবেও তারা স্বীকৃত নয়। বাজার ব্যবস্থার ওপরও নেই তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ। ফলে তারা অধিকতর ও বহুমাত্রিক দারিদ্রতার শিকার। নারীর অধিকার ইস্যু নিয়ে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা প্রয়োজন। মানুষকে সচেতন করতে পারলে আর সরকারের সদিচ্ছা থাকলে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিতে আইন পাশ করা সম্ভব।
এছাড়াও, এ কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীবৃন্দ, বিভিন্ন পরামর্শ দেন প্রশাসনসহ সকল স্তরের মানুষকে সচেতন হতে হবে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায়। মাঠ পর্যায়ে নারীদের সমঅধিকার নিশ্চিতে মনিটরিং সেল গঠন করা যেতে পারে বলে তারা মনে করেন। তাঁরা ধর্মীয় নেতাদেরকেও নারীর অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন।