বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী রাজহংস-১০ লঞ্চের কেবিনে এক তরুনীকে (২০)একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে।
বুধবার রাতে নির্যাতনের শিকার ওই তরুনী বাদী হয়ে হিজলা থানায় মামলা করার পর আদালতে জবানবন্দি ও ধর্ষণ সংক্রান্ত মেডিকেল পরীক্ষার জন্য ওই তরুনীকে বৃহস্পতিবার (০৩ জুন) সকাল ১০ টার দিকে হিজলা থেকে বরিশালে পাঠানো হয়।
মামলায় মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার বিদ্যানন্দনপুর ইউনিয়নের মাধবরায় গ্রামের খলিল হাওলাদারের ছেলে মাইদুল ইসলামকে (৩০) আসামি করা হয়েছে। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি চালক।
অন্যদিকে ওই তরুনীর বাড়ি একই এলাকায়। ওই তরুনীর বাবা-মা নেই। তিনি ঢাকায় একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করেন।
মামলার এজহার সূত্রে জানা গেছে, ওই তরুনী ঈদে ছুটি নিয়ে বাড়িতে এসেছিলেন। ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরে যেতে তিনি গত শনিবার (২৯ মে) সন্ধ্যায় মেহেন্দিগঞ্জের ভাষানচর থেকে এমভি রাজহংস-১০ নামে লঞ্চে উঠেন। তিনি ওই লঞ্চের দ্বিতীয় তলার ডেকের যাত্রী ছিলেন।
অন্যদিকে ওই দিন একই লঞ্চে কেবিনে করে ঢাকা যাচিছলেন মাইদুল ইসলাম। লঞ্চ ছেড়ে দেয়ার কিছুক্ষন পর সাইদুল ইসলাম তার কাছে এসে গায়ে পড়ে কথা বলা শুরু করেন। পূর্ব পরিচিত হওয়ায় ওই তরুনীও সরল মনে কথা বলেন। দীর্ঘক্ষন কথা হয় তাদের মধ্যে।
একপর্যায়ে তরুনীকে কুপ্রস্তাব দেন মাইদুল। তবে তরুনী রাজি না হলে মাইদুলের গ্রামের বাড়ি তার নামে লিখে দেয়ার কথা বলেন। এতেও কাজ না হলে বিয়ে ও ঢাকায় ফ্লাট কিনে দেয়ার কথা বলেন মাইদুল। বিয়ের প্রস্তাবে তরুনীর মন গলতে শুরু করে। এরপর ওই তরুনীকে মাইদুল তার কেবিনে নিয়ে যান।
সেখানে নিয়ে গিয়ে রাত ৯ টা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত ওই তরুনীকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন মাইদুল। তরুনী সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন ঢাকার সদরঘাটে লঞ্চ পৌছে গেছে। তবে মাইদুল কেবিনে নেই।
মাইদুলকে অনেক খোজাখুজির পর না পেয়ে তরুনী লঞ্চ থেকে নেমে যান। এরপর মাইদুলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেন তরুনী। তবে তরুনীর কল রিসিভ করেননি মাইদুল। এরপর মাইদুলের ঢাকার কর্মস্থলে গিয়ে জানতে পারেন মাইদুল সেখানে নেই। ঢাকায় মাইদুলের সন্ধান না পেয়ে তরুনী গ্রামে ফিরে আসেন।
সোমবার গ্রামে গিয়ে তরুনী মাইদুলের বাড়িতে যান। মাইদুলকে না পেয়ে তার বাবা খলিল হাওলাদারকে বিষয়টি জানান তরুনী। তবে সব কথা শুনে উল্টো তরুনীর ওপর ক্ষিপ্ত হন মাইদুলের বাবা খলিল হাওলাদার।
এসময় তরুনী মাইদুলের বিরুদ্ধে মামলার করার কথা জানালে খলিল হাওলাদার তাকে ১০ হাজার টাকা দেয়ার কথা বলেন। বিনময়ে মামলা বা কারো কাছে এ বিষয় কিছু বলতে নিষেধ করেন। তবে ওই প্রস্তাব প্রত্যাখান করে মাইদুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে হিজলা থানায় বুধবার রাতে মামলা করেন তরুনী।
হিজলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অসীম কুমার সিকদার জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর মাইদুল ইসলামকে ধরতে ওই এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে। তবে এলাকায় খোজ নিয়ে জানা গেছে ঘটনার পর থেকেই তিনি আত্মগোপন করেছেন। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
পাশাপাশি আদালতে জবানবন্দি ও ধর্ষণ সংক্রান্ত মেডিকেল পরীক্ষার জন্য সকাল ১০ টার দিকে ওই গৃহবধূকে বরিশালে পাঠানো হয়েছে।