দেবালয়ের সীমানা পেরিয়ে
একদিন নক্ষত্ররা হয়ে উঠুক রংমশালের উল্কি,
গালিচা চাপা চৌহদ্দিটায় নেমে আসুক
গভীর আগুনের আঁচ,
যে ক্ষিদের রাতগুলো ধুলো জমে আস্তর–
দেবালয়ের কার্নিশে কার্নিশে;
সেও ভিজুক!
শব্দ পাক নির্লিপ্ত চাহিদারা,
ষোড়শীর গালে ফুঁটে ওঠা– লাল আভার ক্ষত,
রোমাঞ্চ নায়িকার স্বপ্ন আদল ছেড়ে
নেমে আসুক সাদামাটা প্রেক্ষাপটে
শাশ্বত উষ্ণতায়।
শরীরের আড়ালে যে শরীর থাকে,
যেটা কীল ঠাসা হয়ে আছে
বরফের জাজিম, তোশকে —
গলে পড়া মেঘেদের চোখে চোখ রেখে
খোলা আকাশের গায়ে, উন্মোচিত হোক
দোরোখা অভিব্যক্তির আভরণ;
সহজাত অনুরক্তির প্রাচীনতম দাবীতে…
ছেঁদো কথা
যাদের নাড়িতে দিন বদলের খিদে,
তারা রক্ত হয়ে ঝরে পড়ছে
লাঠির আঘাতে ;
আর ডিজিটাল পোকারা মশারির ভাঁজে
জিতে নিচ্ছে নরম পলাশীর মাঠ ।
যদিও এসব ছেঁদো কথার চেয়ে
গ্যালারি ভর্তি হাত-তালি ভালো ।
বড় রাস্তা দিয়ে আবার কে যেন বলে গেলো–
“সুদিন আসছে”
আমাদের ক্যালেন্ডার শুধু পাতা ওল্টাতে জানে…..
শাশ্বত আকাশের দিনগুলি
অনেক কাল আগের কথা,
আমরা মাঠে মাঠে ঘুড়ি ওড়াতাম।
দুপুর রোদে কয়েক ক্রোশ পথ পেরিয়ে
সাঁতরে আসতাম ইছামতীর পাড়।
বিকেল গুলো সজনে গাছের ডাল পুতে
কল্পনায় সাজিয়ে নিতাম–
‘ফিফা কিংবা আইসিসি ওয়ার্ল্ডকাপ।’
অনেক কাল আগের কথা, যখন পৃথিবীটা
হাতের মুঠোয় বন্দী হয়নি;
যখন অন্তর্জালিকা ঢেকে দেয়নি,
শাশ্বত আকাশকে–
যখন আমাদের শৈশবে, আস্তরণ ফেলেনি–
‘চশমার মোটা পুরু কাঁচ।’
পিছুটান ১
পথগুলো তার ঠিকানা জিইয়ে ক্লান্ত
আঁখি পল্লবে বেঁধো না মায়াজাল,
দুর্গম রাত একটি মাথার বালিশে–
চৌকাঠ আঁকড়ে রেখো না পিছুটান !
পিছুটান ২
আকাশটা এখনো নীল
রবি প্লিজ তুমি যেও না–
এপথ আমার বড়ই অচেনা,
রাত্রি সে কথা জানে না!
বাস্তবতার খন্ডচিত্র
অনেকবার কাঁচা দেওয়াল ভেঙে
যে মাটিতে ভিত পুজো হয়,
অনেকবার বাঁশের খুঁটি বদলে
ভাঙা টালিগুলো সরানোর পর—
যে মাটিতে ইট গাঁথা হয়;
সে মাটি বোঝে একটা সম্পর্কের দাম।
স্নাতকোত্তর পাশ করার পর
বাস্তবতার কঠিন থাপ্পড় খাওয়া ছেলেটি—
যে বাড়ি বাড়ি শিক্ষা ফেরি করে বেড়ায়
আর এক কাপ চায়ের সাথে প্রতিদিন
ক্ষয় হয় অভিমান; শিক্ষক হওয়ার !
সে খুব কাছ থেকে অনুভব করে রোজ বেকারত্বের স্বাদ।
ফসল কাটার ঠিক আগের দিন
ভেসে যায় যে চাষির মাঠ;
বৃষ্টির শেষে কাস্তে হাতে, ছুটে যায় দ্যাখে;
নুয়ে পড়া সোনালী ধানের শীষ—
ঠিক যেন মায়ের মুখ; বিসর্জনের পর !
স্বপ্ন ভাঙার কষ্টটা, তোমায় ঠিক বুঝিয়ে দেবে সে উদভ্রান্ত কৃষক।