বগুড়ায় বিয়ে করে বরিশালে এনে কলেজ ছাত্রীকে হত্যা করলো পাষণ্ড স্বামী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রেমের সম্পর্কের পর বিয়ে, তারপর নিখোঁজ কলেজ ছাত্রীকে হত্যার বিষয়টি ঘাতক স্বামী সাকিব স্বীকার করলেও মরদেহ এখনো খুঁজে পায়নি পুলিশ। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলছে সাকিব। ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধারে মঙ্গলবার সারাদিন বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের হরহরগ্রামে অভিযান চালিয়েও সন্ধান মেলেনি। তবে একটি সেপট্রি ট্যাংক পরিস্কার করে শরীরের চামড়ার কিছু অংশ, দুটি নখ ও ওড়না উদ্ধার করা হলেও মরদেহ উদ্ধার করতে হয়নি।
ঘাতক স্বামী বগুড়ায় জাহাঙ্গীরাবাদ সেনানিবাসের ঝাড়ুদার সাকিব হোসেন হাওলাদার। সে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার নতুনচর জাহাপুর গ্রামের বাসিন্দা ভ্যানচালক আব্দুর করিম হাওলাদারের ছেলে। বর্তমানে গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের হরহরগ্রামে ভাড়াটিয়া বাসায় বসবাস করে সাকিবের পরিবার। কলেজ ছাত্রী নাজনিন আক্তার বগুড়া সদরের সাবগ্রাম (উত্তরপাড়া) এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফের মেয়ে। বগুড়ার গাবতলী সৈয়দ আহম্মেদ কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিল নাজনিন।
গ্রেফতারকৃত ঘাতক সাকিব হোসেন হাওলাদারের সাথে কথা বলে জানা গেছে,মোবাইলে তাদের প্রেমের সম্পর্কের পর পর গত বছর ২৩ আগস্ট বগুড়ার একটি পার্কে প্রথম দেখা করে এবং বিয়ের দিন ঠিক করে। ৩০ সেপ্টেম্বর নাজনিনের বাড়িতে তাদের বিয়ে হয়। নাজনিনের খালু এই বিয়ে পড়ান। বিয়েতে সাকিব নিজের ঠিকানা গোপন রাখে। এ বছর ২৪ মে বগুড়ার চারমাথা থেকে নাজনিনকে নিয়ে বরিশাল নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে। সাকিবের বাবা-মা বিয়ে সম্পর্কে কিছুই জানতো না। তারা নানাবাড়িতে অবস্থান করার সুযোগে সে নাজনিনকে বাড়িতে নিয়ে আসে।
সাকিব বলে, নাজনিন বাড়িতে এসে আমাদের টিনের ঘর এবং ওয়াশরুম দেখে আমার সাথে খারাপ আচরণ করে। এমনকি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। এতে করে নাজনিনের উপর আমার প্রচণ্ড রাগ হয়। এরপর বাহির থেকে লাইলন রশি এনে নাজনিনের গলায় লাগিয়ে ফাঁস দেই। মৃত্যু নিশ্চিত করতে বিছানার উপর ফেলে বালিশ দিয়ে চাঁপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করি এবং নাজনিনের লাশ কাঁধে তুলে আমাদের বাড়ির সেপটি ট্যাংকের মধ্যে ফেলে দেই।
২৬ মে বগুড়া সেনাবাহিনী থেকে সাকিবকে কাজে যোগদান করতে বলা হয়। যোগদানের পরপরই ইউনিট অফিসারের জিজ্ঞাসাবাদে সে সকল ঘটনা খুলে বলে । সেনাবাহিনী তাকে বগুড়া পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
নাজনিন আক্তারের ভাই আব্দুল আহাদ প্রমানীক জানান,গত ২৪ মে সাকিব তার পিতার অসুস্থ্যতার কথা বলে বোনকে নিয়ে বরিশালে আসে। পরবর্তীতে আমার বোন ও সাকিবের মোবাইল বন্ধ থাকায় কোন যোগাযোগ করতে না পারায় ২৬ মে আমার বাবা বগুড়া সদর থানায় সাধারন ডায়েরী ও সেনানিবাসে অভিযোগ করেন। এরপরই গ্রেফতার করা হয় সাকিবকে। সাকিবের স্বীকরোক্তি অনুযায়ী বোনের লাশ উদ্ধারে গৌরনদীতে আসি।
এ ব্যাপারে গৌরনদী মডেল থানার ওসি আফজাল হোসেন জানান, সাধারন ডায়েরী ও অভিযোগের সুত্র ধরে পুলিশ সাকিব হোসেন হাওলাদারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে স্বীকার করে নাজনিনকে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস ও বালিশ চাঁপা দিয়ে হত্যা করে ল্যাট্রিনের সেফটি ট্যাংকির মধ্যে লাশ গুম করে। সেখান থেকে কিছু আলামত পাওয়া গেলেও লাশ উদ্ধার হয়নি। সাকিব এক এক সময় এক এক ধরনের তথ্য দিচ্ছে।
অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্কে সাকিব নাজনিনকে বিয়ে করে। কিন্তু প্রেম ও বিয়ের সময় নাজনিনকে সে ভুল তথ্য দেয়। সে জানায় তাদের নিজস্ব ভবনসহ আর্থিকভাবে স্বচ্ছল। এর এক পর্যায়ে গত বছর ৩০ সেপ্টেম্বর সাকিব ভূয়া ঠিকানা ব্যবহার করে কলেজ ছাত্রী নাজনিনকে বিয়ে করে। ২৪ মে নাজনিনকে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসার পর হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে সাকিব। মরদেহ ট্যাংকির মধ্যে ফেলার কথা বললেও সেখানে নাজনিনের দেহ পাওয়া যায়নি। আমরা ট্যাংকির আশেপাশের নাজনিনের দেহ তল্লাশী করছি।