পুলিশকে উদ্দেশ্য করে মেয়র সাদিক
আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মানে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
6 মিনিটে পড়ুন
বিসিসি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ

বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ও তার অনুসারীদের সাথে মহানগর পুলিশের দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। বিভিন্ন জনসভায় তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন এবং এই বলে হুশিয়ারী দিয়েছেন যে – আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা মানে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা।’

সম্প্রতি বরিশালে মেয়র অনুসারীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও ইভটিজিং সহ বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে তাদের গ্রেফতার করেও ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। পুলিশ সাধারণ মানুষের সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসলে শুরু হয় এই দ্বন্ধের। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ বলছেন, মেয়রের মন্তব্যগুলো একান্তই তার ব্যক্তিগত। শুধু সিটি করপোরেশন নয়, পুলিশ সকল সংস্থার সমন্বয়ে নাগরিক সেবা দেয়ার কাজ করছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মহানগর পুলিশের সঙ্গে মেয়র সাদিকের অনুসারী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বিরোধের শুরু চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি থেকে।

এদিন বরিশাল নগরীর ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ হাওলাদারকে বিসিকের ফরচুন সুজ কোম্পানিতে ইভটিজিংয়ের অভিযোগে আটকে মারধরের অভিযোগ ওঠে এবং সোহাগকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রতিবাদে কাউনিয়া থানা ঘেরাও করেন মেয়র সাদিকের অনুসারী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

- বিজ্ঞাপন -

মেয়র সমর্থক নেতা-কর্মীদের কাউনিয়া থানা ঘেরাও ও একপর্যায়ে সোহাগকে ছাড়াতে না পেরে তারা বরিশালের বাস, লঞ্চ, থ্রি হুইলার ও রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেন। কয়েক ঘণ্টা পর সোহাগকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ।

এরকম আরো কয়েকটি ঘটনায় পুলিশ হস্তক্ষেপ করতে আসলে মেয়র অনুসারীরা বাধা দেয় ও অসদাচরণ করে পুলিশের সাথে।

সবশেষ গত ২৭ মে নগরীর ২১নং ওয়ার্ডের মানু মিয়ার লেনে ৯৯৯-এর কলে বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার টিম। সেখানে উপস্থিত বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সাইয়েদ আহম্মেদ মান্না পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে পরিদর্শক আনোয়ার হোসেনকে হেনস্তা এবং পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে মান্নার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে পরে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ।

এসব ঘটনার জেরে গত ১৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে নগরীর কালিবাড়ির সেরনিয়াবাত ভবনে মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত সভায় মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ পুলিশকে কড়া ভাষায় হুঁশিয়ার করেন।

তিনি পুলিশের উদ্দেশে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ বরিশালকে অশান্তির দিকে ডেকে নেবেন না। আমি এখানে ভেসে আসিনি। আগের থেকে বরিশাল আওয়ামী লীগ অনেক শক্তিশালী। এত বড় আওয়ামী লীগকে আপনারা আটকাতে পারবেন না। বরিশালে অশান্তি হলে সে দায়ভার আপনাদেরকেই নিতে হবে।’

- বিজ্ঞাপন -

পুলিশের উদ্দেশে মেয়র সাদিক আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তৃণমূলের দল। আমরা পুলিশি ক্ষমতায় চলি না, আমরা তৃণমূলের ক্ষমতায় চলি। আপনারা যা করছেন সেটা দলের জন্য বদনাম।’

বরিশালের পুলিশ প্রশাসন বাইরের কোনো গোষ্ঠীর টার্গেট পূরণে ব্যস্ত রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

২৯ মে সেরনিয়াবাত ভবনে মহানগর আওয়ামী লীগের বিশেষ সভায়ও পুলিশের প্রতি ব্যাপক ক্ষোভ জানান মেয়র সাদিক। ওই সভায় তিনি বলেন, ‘কোনো থানায় কি আমি কখনও কাউকে ছাড়াতে ফোন দিয়েছি? কাউকে মোটরসাইকেলসহ ধরলে আমি কি ফোন দেই ছাড়ানোর জন্য? সমস্যাটা কোথায়?

- বিজ্ঞাপন -

মেয়র বলেন, ‘বরিশাল কি আপনাগো সম্পত্তি মনে করতে আছেন আপনারা। কার বিরুদ্ধে কাজ করতেছেন আপনারা? এই সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করতেছেন? আমার বিরুদ্ধে কাজ করতেছেন নাকি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কাজ করতেছেন? আমার বিরুদ্ধে কাজ করা মানেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কাজ করা।’

মেয়র সাদিক বলেন, ‘আমি কাজ করতেছি এইটাই কি অপরাধ আমার। আপনারা উইঠা পইরা লাগছেন আমার পেছনে। আমি তো সব শান্ত কইরা রাখছি, এটাই মনে হয় আমার অপরাধ। প্রশাসন যা করছে সেটা আমরা মহানগর আওয়ামী লীগ আমাদের অভিভাবক ঊর্ধ্বতন নেতাদের জানাব।’

আমি নিজের পকেটের টাকায় বরিশালে উন্নয়নের কাজ করি বলে দাবী করেন তিনি।

তিনি বলেন, ’২১ নম্বর ওয়ার্ডে কী হইছে, মারামারি হইছে? মার্ডার হইছে? কী বড় ঘটনা ঘটছে যে ওইখানে দাঙ্গা পুলিশ নিয়া যাওয়া লাগছে? শুনছি ফোন নিয়া গেছে পুলিশের। ইন্টেলিজেন্সরা তদন্ত করবে বিষয়টা। এইটা একটা ষড়যন্ত্র। আমার না আমার দলের, আমার নেত্রীর ক্ষতি করতে আছে।’

মেয়র সাদিক বলেন, ‘নতুন ডিসি আসছে ভালো কথা। মন্ত্রী মহোদয়রা ইদানীং বরিশাল আসলে সেই চিঠিও আমি পাই না।আমাদের সঙ্গে মন্ত্রী মহোদয়দের কথা হলে কি আপনাদের সমস্যা? এসব ষড়যন্ত্র করতে বারবার মানা করছি আপনাদের।

আপনাদের ক্ষমতা নিয়ে তো আমি এখানে হই নাই, আমি জনগণের ক্ষমতায় হইছি। জনগণ আমারে ভালোবাসে। আপনাগো পিছনে জনগণ হাঁটে না, সেটা কি আমার দোষ? প্রশাসন আমার গায়ের ওপর লাফাইয়া পড়তে চায় কেন? এটা তো আপনাদের কিছু না। বহুত সহ্য করছি, মনে করেন কি বুঝি না কিছু?

সাদিক বলেন, ‘চার পুরুষের রাজনীতি শরীরে, সবকিছুই বুঝি। আমারে ঠ্যালা দিয়া ফালাইয়া দেয়া এত সহজ না। আমার নেতা-কর্মীদের আমি ফালাইয়া দেব, আবার আমিই কোলে নিব। এর মধ্যে কেউ ওগো পকেটে ভইরা নিয়া যাইবে, সেইটা হইবে না।’

বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘এই ষড়যন্ত্র নতুন না। ষড়যন্ত্রকারীরা বারবার ষড়যন্ত্র করে। সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে বিতর্কিত করার জন্য অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে সাদিক আব্দুল্লাহ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে এটাই প্রত্যাশা আমাদের।’

বিভিন্ন সভায় মেয়রের বক্তব্য সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শাহাবুদ্দিন খানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘বরিশালে সন্ত্রাসীদের ঠাঁই নেই। পুলিশের ওপর যে হামলার ঘটনা, সেই ঘটনায় মামলা না হলেও বিষয়টির তদন্ত চলছে। অনুসন্ধান ও তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এতে যত বড়ই রাঘববোয়াল থাকুক না কেন তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘মেয়র সমর্থকদের প্রতিপক্ষ পুলিশ নয়। সিটি করপোরেশন জনগণের জন্য কাজ করে, আমরাও কাজ করি জনগণের জন্য। যদি কোনো জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে ঘটনা ঘটে, তাহলে সেটা আমরা বিচ্ছিন্নভাবেই নিয়েই থাকি। মেয়রের ব্যক্তিগত অভিরুচিতে বা মতামতে সেটা তিনি বলতে পারেন, এটা তার ইস্যু। আমরা জনসেবায় নিয়োজিত, এতে সকল সংগঠনের সহযোগিতা চাই। সেখানে যদি কমিউনিকেশন গ্যাপ থাকে, তাহলে সেটি পূরণের চেষ্টা রয়েছে আমাদের।’

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!