ঘূর্নিঝড় ‘ইয়াস ও পূর্নিমার জো’র প্রভাবে সৃষ্ট অস্বাভাবিক জোয়ারে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার রাবনাবাদ নদী পাড়ের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোনা পানি প্রবেশ করে লালুয়া ইউনিয়নের পশরবুনিয়া, চারিপাড়া, নয়াকাটা, নাওয়াপাড়া, চৌধুরীপাড়া, মুন্সীপাড়া, মঞ্জুপাড়া, চান্দুপাড়া সহ অন্তত: ১০ গ্রাম এখন জোয়ারে ডুবছে, ভাটায় ভাসছে।
এতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো তাদের বসতবাড়ী পানিতে তলিয়ে থাকায় আশ্রয় নিয়েছে বাঁধের উপর। সেখানে নেই দু’বেলা দু’মুঠো খাবার, বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা। ধান, চাল, বিছানা পত্র, থালা বাটি সহ সহ ব্যবহার্য সকল কিছু হারিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন এসব পরিবার।
মুক্তিযোদ্ধা বাজারের প্রায় আধাকিলোমিটার পর থেকে বেড়িবাঁধের উপরে বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নেয়া পরিবার গুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
সকলের এখন একটাই জিজ্ঞাসা, কবে পানি নামবে? কবে ঘরবাড়ি ফিরতে পারবেন তারা? দরিদ্র এ মানুষগুলোর অভিযোগ আমাদের নামমাত্র সামান্য কিছু শুকনা খাবার সহায়তা দিয়েও কেউ কেউ ছবি তোলে ১০বার।
আর্থিক সঙ্কটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন প্রায় তিন কিলোমিটার বাঁধের উপরে ঝুপড়ি ঘর তুলে আশ্রয় নেয়া এসব পরিবার।
সেখানে ঘুরে দেখা যায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবকিছু হারিয়ে এখন নি:স্ব ফাতেমা বেগম-শাকিল দম্পতির চারজনের সংসার।
মাছ ধরা ট্রলারে কাজ করেন শাকিল। ৬৫ দিনের অবরোধ চলায় উপার্জনহীন। ঘরে হাঁটু সমান পানি। ইটের কিংবা মাটির অস্থায়ী চুলাই তাদের রান্নার ভরসা। তাও যার আর্থিক সঙ্গতি রয়েছে তার পক্ষে রান্না সম্ভব। খাবার-ব্যবহারের পানি আনতে হচ্ছে অন্য ইউনিয়ন থেকে ।
বাঁধের উপর বসে থাকা চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র রাকিব জানায়, ঝুপড়ির নিচের তক্তার পাটাতনে পাঁচটি মানুষ রাত কাটান। কেউ বসে থাকে। কেউ একটু ঘুমিয়ে নেয়। এমনি পালা করে রাত কাটছে তাদের।
শাকিল প্যাদা জানান, বাবা-মাসহ আটজনের সংসারে এখন তালপাতা, খেজুর পাতা, পলিথিন ভরসা। রান্না তো চলে না।
রাকিবুল আকন জানালেন, একটি ঝুপড়ির মধ্যে দুই ফ্যামিলির সাত জনে তিনদিন তিন রাত থেকেছি। একটা চুলায় চার পরিবার রান্নার চেষ্টা করছি।
সাজিম হওলাদার জানান, একটি পলিথিনের নিচে ছয় জনের সংসার। রান্না করছিলেন রোজিনা বেগম; জানালেন, ২০০৭ সালের সিডরের পরে এতো বেশি পানির প্রবেশ আর দেখেননি।
ফয়সাল আকন জানান, চাল-চুলা সব গেছে। হাঁস-মুরগি নেই। মরে গেছে। গবাদিপশু পর্যন্ত পালন করা সম্ভব হচ্ছে না।
লালুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস জানান, অধিকাংশকেই সরকারী প্রদত্ত সহায়তার টাকায় চাল-ডাল কিনে দেয়া হয়েছে। কোন সঙ্কট নেই।
তারপরও অর্ধশত পরিবার পানিবন্দীর কারণে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। যাদের দুই এক জনের যার দরকার তাকেই খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, সরকারের দেয়া সহায়তা স্ব স্ব ইউপি চেয়ারম্যানকে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারপরও কারও কোন খাদ্যসহ কোন
সমস্যা থাকলে বাড়ি পৌঁছে দেয়া হবে।