ইঁদুরের আঁকা প্রথম ছবিটির দামই ৯২ হাজার টাকা

সিদ্ধার্থ সিংহ
সিদ্ধার্থ সিংহ
3 মিনিটে পড়ুন
ছবি: সংগৃহিত

ইঁদুরটির নাম— ‘গুস’। এটি শুধু ইঁদুরই নয়, চিত্রকরও বটে! কারণ, তার পায়ে আঁকা প্রথম ছবিটাই বিক্রি হয়ে গেল প্রায় ৯২ হাজার টাকায়৷

ম্যানচেস্টারের ড্রয়লসডেনের ১৯ বছরের এক তরুণ, জেস ইন্ডসেথ ২০১৮ সালে একজন ব্রিডারের কাছ থেকে একটি ইঁদুরছানা কিনে আনেন পোষার জন্য। আদর করে তার নাম রাখেন— গুস। ক’দিন পরেই তিনি টের পান যে, তাঁর অন্যান্য পোষ্য, এমনকী তাঁর আরও যে চার-চারটে ইঁদুরছানা রয়েছে, তাদের চেয়েও এই ইঁদুরছানাটি অনেক শান্ত স্বভাবের।

জেস যেহেতু পেশায় একজন সাঁতার প্রশিক্ষক ছাড়াও একজন চিত্রশিল্পী এবং পশুপ্রেমীও, তাই তিনি যখন আঁকতে বসতেন, তখন তাঁর অন্যান্য পোষ্যদের মতো এই ইঁদুরছানাটিও তাঁর তুলি ধরে টান মারত। রংয়ের প্লেটে এসে উঁকিঝুঁকি মারত। ক্যানভাস বেয়ে তরতর করে উপরে উঠে যেত। তবু উনি বিরক্ত হতেন না।

একদিন তিনি যখন ছবি আঁকবেন বলে মনস্থির করেছেন, ক্যানভাস টাঙিয়ে, রংটঙের প্লেট রেডি করেছেন, ঠিক তখনই তাঁর এক বন্ধু এসে হাজির। ড্রইংরুমে বসে বন্ধুর সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করে বেরিয়ে আসার পর তিনি যখন ছবি আঁকার জন্য আবার সেই ক্যানভাসের সামনে এলেন, ক্যানভাসের দিকে তাকিয়েই তিনি একেবারে হতবাক হয়ে গেলেন। এই ছবিটা কে আঁকল! অসম্ভব ভাল একটা ছবি। এত সূক্ষ্ম তুলির টান তো তাঁর পক্ষেও দেওয়া সম্ভব নয়! তা হলে কে আঁকল!

- বিজ্ঞাপন -

তখনই তাঁর চোখে পড়ল সেই ইঁদুরটি। ইঁদুরটির পায়ে নানা রকম রং লাগানো। তার মানে, সে এখানে ছুটোছুটি করেছে। এক-একটা রঙের প্লেটের উপর দিয়ে ছুটে গিয়ে ওই ক্যানভাসে উঠেছে। তাই তার পায়ে লাগা ওই রং আর তার নিজস্ব ঢঙে ছোটাছুটিটাই ক্যানভাসের ওপরে এই অদ্ভুত সুন্দর ছবি ফুটিয়ে তুলেছে।

এর পর থেকে জেস তার পায়ে নানান রং লাগিয়ে দেন। সামনে তুলে ধরেন ছোট্ট ছোট্ট ক্যানভাস। গুস সেই ক্যানভাসে পা দিয়ে আঁচড় কাটে। হেঁটে-চলে বেড়ায়। আর এ ভাবেই তৈরি হয়ে যায় গুসের এক-একটা অসামান্য চিত্রাঙ্কন।
নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ম্যানচেস্টারের এই যুবক তাঁর শিল্পকলা ও কারুশিল্পের বেশ কয়েকটি নমুনা রাখেন গুসের সামনে। সেই সঙ্গে রাখেন নানান রকম রং আর কিছু সাদা কাগজ।

ব্যস, গুসও চোখের সামনে মিনি ক্যানভাস আর রং পেয়ে শুরু করে দেয় তার শিল্পকর্ম। ফুটিয়ে তোলে ভিন্ন ধারার চোখ-ধাঁধানো এক-একটি ছবি।

গুসের আঁকা সেই চিত্রকর্মগুলো তাঁকে তো অবাক করেছেই, তাঁর পোষ্য বলে কথা! তিনি তো অবাক হতেই পারেন, কিন্তু যাঁরা সত্যিকারের শিল্পরসিক, শিল্পবোদ্ধা কিংবা চিত্র সমালোচক, তাঁদেরও কি এই ছবিগুলো একই রকম ভাবে মুগ্ধ করবে! তাই সেই ছবিগুলো বিক্রির জন্য একদিন অনলাইনে পোস্ট করলেন জেস। এবং পোস্ট করার কিছুক্ষণের মধ্যেই অপ্রত্যাশিত ভাবে সাড়া পান তিনি। শুধু তাঁর নিজের দেশ থেকেই নয়, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, এমনকী ফ্রান্সের মতো ছবি-নির্ভর দেশের শিল্পবোদ্ধারাও ওই ছবিগুলো কেনার জন্য যোগাযোগ শুরু করে দেন তাঁর সঙ্গে। দেশ-বিদেশের বহু আর্ট গ্যালারি গুসের ছবি প্রদর্শনী করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে। আর এটা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই গুসের আঁকা ছবির দাম চড়চড় করে বাড়তে শুরু করেছে। সেই দাম যে কোথায় গিয়ে থামবে কেউ জানে না।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
২০২০ সালে 'সাহিত্য সম্রাট' উপাধিতে সম্মানিত এবং ২০১২ সালে 'বঙ্গ শিরোমণি' সম্মানে ভূষিত সিদ্ধার্থ সিংহের জন্ম কলকাতায়। আনন্দবাজার পত্রিকার পশ্চিমবঙ্গ শিশু সাহিত্য সংসদ পুরস্কার, স্বর্ণকলম পুরস্কার, সময়ের শব্দ আন্তরিক কলম, শান্তিরত্ন পুরস্কার, কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত পুরস্কার, কাঞ্চন সাহিত্য পুরস্কার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা লোক সাহিত্য পুরস্কার, প্রসাদ পুরস্কার, সামসুল হক পুরস্কার, সুচিত্রা ভট্টাচার্য স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, অণু সাহিত্য পুরস্কার, কাস্তেকবি দিনেশ দাস স্মৃতি পুরস্কার, শিলালিপি সাহিত্য পুরস্কার, চেখ সাহিত্য পুরস্কার, মায়া সেন স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ছাড়াও ছোট-বড় অজস্র পুরস্কার ও সম্মাননা। পেয়েছেন ১৪০৬ সালের 'শ্রেষ্ঠ কবি' এবং ১৪১৮ সালের 'শ্রেষ্ঠ গল্পকার'-এর শিরোপা সহ অসংখ্য পুরস্কার। এছাড়াও আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত তাঁর 'পঞ্চাশটি গল্প' গ্রন্থটির জন্য তাঁর নাম সম্প্রতি 'সৃজনী ভারত সাহিত্য পুরস্কার' প্রাপক হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!