নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলায় আহসানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের পশ্চিম দিকে রাস্তা ধরে কিছুটা এগোতেই দৃষ্টি কাড়ে লম্বাটে একধরনের হলুদ রঙের ফুল। মনে হচ্ছিল যেন আকাশের দিকে চোখ মেলে তাকিয়ে আছে। ঝোপের মাঝে এই সম্মিলিত ফুলগুলোর সৌন্দর্য মুগ্ধ হওয়ার মতোই। সুবিন্যস্ত পাতাও চোখ এড়ানোর নয়। ক্যামেরবন্দী করতে ভুল হলো না।
এদের সাথে ইতিপূর্বে নাটোরে কোথাও দেখা হয় নাই। নাটোরের বৃক্ষপ্রেমিক ও প্রবীনদেরকে ছবি দেখালে, জানা যায় নাটোরের প্রত্যন্ত অঞ্চল সহ বিভিন্ন রাস্তার ধারে ইতিপূর্বে দেখা যেত, তবে কেন? কোন অভিমানে ঔষধি গুণ সমৃদ্ধ এই গাছটি নাটোর থেকে হারিয়ে গেছে? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া অসম্ভব এবং বিস্ময়কর তো বটেই।
উদ্ভিদতত্ত্ববিদদের মতে ‘দাদমর্দন’নামেই এই গাছ সর্বাধিক পরিচিত। বৈজ্ঞানিক নাম Senna alata, ইংরেজি নাম Candle Bush। পথের ধারে, পরিত্যক্ত জমিতে, খেতের মধ্যবর্তী এবং অনাবাদি স্থানে ‘দাদমর্দন’ গাছ আপনা থেকেই জন্মায়। এটি মূলত গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। দ্রুত বর্ধনশীল। সাধারণত এক থেকে দুই মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়।
ফুল ফোটার মৌসুম সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি। ডালের আগায় ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার খাড়া ডাঁটায় হলুদ রঙের ফুল নিচ থেকে ওপরের দিকে ফোটে। ফুলের পর ফল আসে। চিকন লম্বাটে ফল হয়। একটি ফলে প্রচুর বীজ থাকে। ফল পুষ্ট হয়ে ফেটে ঝরে পড়ে। সেখান থেকে সহজেই চারা জন্মে। এর আদি নিবাস মেক্সিকো, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা।
ঔষধি গাছ হিসেবে ‘দাদমর্দন’সুপরিচিত। উদ্ভিদটির নামের মাঝেই এর মাহাত্ম লুকিয়ে আছে। দাদ ও পাঁচড়া তথা চর্মরোগে এই গাছের পাতার রস বেশ কার্যকরী। মেছতার দাগ নির্মূলে দাদমর্দনের সুফল পাওয়া যায়। একটা সময় গ্রামাঞ্চলের কবিরাজই ছিলেন একমাত্র চিকিৎসক। চারপাশে ছিল নানা জাতের ঔষধি গাছের সমারোহ।
নাটোরে প্রতিনিয়ত ভরাট হচ্ছে জলাশয়। অবরুদ্ধ হচ্ছে বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের পথ। বাড়ছে জনসংখ্যা। কমছে জমি, জলাশয়। প্রকৃতি হারাতে বসেছে তার ভারসাম্য। উজাড় হয়েছে বন। দিনে দিনে নাটোর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঔষধি গুণে ভরা গাছ।
নাটোরের প্রকৃতিপ্রেমীদের স্বপ্ন আবারো নাটোরের পথ প্রান্তর একদিন ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ ফুল গুল্মে ভরে উঠবে, উদ্ধার হবে অবৈধবাবে দখলকৃত সরকারি জলাশয়সহ পানিনিষ্কাশনের পথ, প্রকৃতি ফিরে পাবে তার আপন সৌন্দর্য এমনটাই প্রত্যাশা।