ঘূর্ণিঝড় ’ইয়াস’ ও পূর্নিমার জো’র প্রভাবে সৃষ্ট অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে ডুবে পটুয়াখালী জেলায় দুুুইজন নিহত হয়েছেন।
এদের মধ্যে জেলার দুমকি উপজেলার মুরাদিয়া ইউনিয়নের সন্তোষদি গ্রামের হাফেজ হাওলাদারের স্ত্রী হাসিনা আক্তার (৫৫) বৃহস্পতিবার দুপুরে বিল থেকে গৃহপালিত গরু আনতে গিয়ে এবং একই দিন দুপুরে কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের নাচনাপাড়া গ্রামের ফরিদ হাওলাদারের শিশু কন্যা ছায়েবা (৯) গোসল করতে গিয়ে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে ডুবে মৃত্যূবরণ করেছে।
দুমকি’র নারী হাসিনা আক্তারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরী।
আর কলাপাড়ার টিয়াখালীতে শিশু কন্যার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মশিউর রহমান শিমু।
এদিকে ঘূর্নিঝড় ’ইয়াস’ ক্ষতিগ্রস্ত পটুয়াখালী উপকূলের বহু মানুষের দিন কাটছে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বন্দিদশায়। তাদের রান্নার চুলা জ্বলছেনা।
তাই কখনও নৌকায় আবার কখনও হাঁটু পানিতে নেমে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে বাড়ী বাড়ী এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র পক্ষে ত্রান সহায়তা দিচ্ছেন দাড়ালেন অধ্যক্ষ মহিব্বুর রহমান এমপি।
ঘূর্নিঝড় ’ইয়াস’ আতংক কেটে গেলেও জোয়ারের পানিতে বাড়ীঘর তলিয়ে থাকা মানুষের কাছে ত্রান নিয়ে যাচ্ছেন তিঁনি।
বৃহস্পতিবার দিন ভর তিঁনি কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া, গন্ডামারি, চম্পাপুর ইউনিয়নের দেবপুর বেড়িবাঁধ ঘাট, বাংলাবাজার, মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর, ধূলাসার ইউনিয়নের চাপলিবাজার, লতাচাপলি ইউনিয়নের খাঁজুরা, কুয়াকাটা, লালুয়া ইউনিয়নের চারিপাড়া, চান্দুপাড়া এবং রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া, বড় বাইশদিয়া, চালিতাবুনিয়া, রাঙ্গাবালী সদর, ও চরমোন্তাজ ইউনিয়নের বানভাসি মানুষের মাঝে এ ত্রান বিতরণ করা হয়। এসময়ে ৫ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ১ লি: তেল, ১ কেজি আলু ও ১ প্যাকেট লবন সম্বলিত ২১০০ প্যাকেট খাদ্য সহায়তা তিনি প্রাথমিক ভাবে বিতরন করেছেন।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক এমপি’র সহধর্মীনি অধ্যক্ষ ফাতেমা আক্তার রেখা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড’র কলাপাড়া শাখা ব্যবস্থাপক তরিকুল ইসলাম হিরন, এমপি’র ব্যক্তিগত সহকারী তরিকুল ইসলাম মৃধা, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইয়ামিন আহমেদ, ধানখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহজাদা পারভেজ টিনু মৃধা প্রমূখ।
ঘূর্নিঝড় ’ইয়াস’র তান্ডবে জেলায় ৪৮৪টি কাঁচা ঘর সম্পূর্ন বিধ্বস্ত এবং৪২০৯টি কাঁচা ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে।
’ইয়াস’ মোকাবেলায় জেলায় এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ, শিশু ও গো-খাদ্যের জন্য ২ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা প্রাথমিক ভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া চাল, ডাল, আলু, লবন, তেল সম্বলিত ৩ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার প্যাকেট বরাদ্দের কথা জানিয়েছেন জেলা দুর্যোগ ও ত্রান কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার সরকার।
কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: হালিম সালেহী বলেন,বৃহস্পতিবার ২৭ মে সকালেও কলাপাড়ার আন্ধারমানিক, টিয়াখালী, খাপড়াভাঙ্গা ও রাবনাবাদ নদীর পানি বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালের জোয়ারে কুয়াকাটা সৈকতের ব্লক পয়েন্টেরর নিচ খেকে থেকে প্রায় পাঁচ ফুট মূল বাঁধের রিভার সাইড ভেঙ্গে গেছে। সাগরের বিক্ষুব্ধ ঢেউয়ের আঘাতে সরে গেছে সৈকত রক্ষার কয়েকটি ব্লক।
প্রচন্ড ঢেউয়ের তোড়ে সৈকতের প্রায় দেড় ফুট বালুক্ষয় হওয়ায় লেম্বুর বন, গঙ্গামতি ও কুয়াকাটা ইকোপার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে কলাপাড়া ঘূর্নিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ঘূর্নিঝড় ’ইয়াস’ আতংক কেটে গেলেও পূর্নিমার জো’র প্রভাবে সৃষ্ট মেঘমালার কারনে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরকে আজও ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।