তৃতীয় পর্ব – খুব সহজেই নেগেটিভ চিন্তা দূর করার উপায়
আপনি কি সবসময়ই নেগেটিভ চিন্তা করছেন? আবার সাফল্যের চূড়ায় পৌছনোর স্বপ্নও দেখছেন? আপনার কি মনে হয় এই ধরনের নেগেটিভ চিন্তা, আপনার স্বপ্ন পূরণের পথে কখনো বাধা হয়ে দাঁড়াবে না? নিশ্চয়ই দাঁড়াবে।
নেগেটিভ চিন্তা দূর করতে হলে যেসব চর্চা করতে হবে –
১। মেডিটেশন –
চিন্তাভাবনাকে নিজের আয়ত্তে আনতে মনকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী। আর মনকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে মেডিটেশনের বিকল্প আর কিছু নেই। মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ধ্যান বা মেডিটেশন করা খুব উপকারী একটি বিষয়। যখন নেগেটিভ চিন্তাগুলো মনে আসে তখন মানসিক দৃঢ়তা কমে যায়। এই ধরনের চিন্তা মানসিক শক্তিকে দুর্বল করে দেয়। মানসিকতা দুর্বল হয়ে গেলে আমাদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যায়। আর আমরা জানি আত্মবিশ্বাস একবার হারিয়ে গেলে কাজের অনুপ্রেরণা থাকে না। তখনই সেই কাজের উপর আমাদের অনিহা চলে আসে। কাজটি করতে আর আমাদের মন বসে না। ফলে আমাদের সেই কাজটি অসম্পন্ন থেকে যায়। আর আমরা সাফল্যের করিডরের খুব কাছাকাছি এসেও আমরা ব্যর্থতার তকমা কপালে দেই। কিন্তু নিয়মিত মেডিটেশনের অভ্যাস মনকে শান্ত করে এবং দৃঢ় রাখতে সাহায্য করে। আর মন ঠিক থাকলে নেগেটিভ চিন্তা আসে না ফলে অনুপ্রেরণার ঘাটতি থাকে না।
চিন্তা করুন কিন্তু নেতিবাচক চিন্তা নয়। চিন্তা হোক মুক্ত উদার। ইতিবাচক বা পজিটিভ চিন্তা যেমন মানুষের আত্মবিশ্বাস অটুট রাখে, অনুপ্রেরণার ঘাটতি মেটায়, নিজের সত্ত্বার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে ঠিক তেমনি নেতিবাচক অর্থাৎ নেগেটিভ চিন্তা মানুষের অবনতি ঘটায়, মানুষের চিন্তাশক্তিকে একেবারে মেরে ফেলে। নিজেকে গঠনের ক্ষেত্রে পজিটিভ ভাবনা বা চিন্তা যতটা প্রখর, নিজেকে ধ্বংস করার জন্য নেগেটিভ চিন্তা তার চেয়েও বেশী প্রখর, বেশী শক্তিশালী। কেননা নেগেটিভ চিন্তা সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সাফল্যের করিডরে পৌঁছানোর আগেই ব্যর্থতার তকমা কপালে লেপে দেয়। সাফল্যের স্বর্ণশিখড়ে পৌঁছোতে হলে চাই আত্মবিশ্বাস আর অশেষ প্রেরণা। আত্মবিশ্বাস আর অনুপ্রেরণার উপর ভিত্তি করেই মানুষ সাফল্যের সিঁড়ির ছক কষে। আর সেই সিঁড়ির উপর ভর করেই সাফল্যের দেখা মেলে। বলা চলে আত্মবিশ্বাস আর অনুপ্রেরণাই সাফল্য অর্জনের মূল খুটি। খুটিতে ভাঙ্গন ধরলে ঘরেও ভাঙ্গন ধরবে এটাই তো স্বাভাবিক।
আর এই ভাঙ্গনটি ধরায় মানুষের নেগেটিভ চিন্তা। কোন ক্ষেত্রে এই নেগেটিভ চিন্তার প্রভাব এতোটাই ভয়াবহ যা ছড়িয়ে পড়ে রন্ধ্রে রন্ধ্রে। নিজের অজান্তেই এটি মানুষের বিপুল পরিমাণে ক্ষতি সাধন করে। নেগেটিভ চিন্তা কাজের ক্ষেত্রেও বিরূপ ধারনা পোষন করায়। ফলে কাজের প্রতি মন মানসিকতার পরিবর্তন ঘটায়। কাজের প্রতি প্রবল অনিহা সৃষ্টি হয়। আর তখনই ঘটে বিপর্যয়। পারব কি পারব না এই দ্বন্দ্বের মাঝে পরে মানুষ নিজের আত্মবিশ্বাসকে গলা টিপে হত্যা করে। আর আত্মবিশ্বাসের অভাবে অনুপ্রেরণার ঘাটতি ঘটে। আর সাফল্যের খুটিই যদি নড়বড়ে হয়ে যায় তাহলে সাফল্যের স্বাদ গ্রহন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
তাই সাফল্যের চূড়ায় নিজেকে আবিষ্কার করতে হলে নেগেটিভ চিন্তাকে সরিয়ে দিয়ে পজিটিভ চিন্তায় মনোনিবেশ করতে হবে। তাহলেই সাফল্যের দীর্ঘ সিঁড়ি পার করা সম্ভব। ব্যর্থতার তিক্ততায় নিজেকে রিক্ত করতে না চাইলে পজিটিভ চিন্তার চর্চা করাই শ্রেয়। নিজেকে সফল এবং সুন্দর ব্যক্তিত্বে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে আপনাকে অবশ্যই নেগেটিভ চিন্তা থেকে দূরে থাকতে হবে।
২। ইতিবাচক বা পজিটিভ বন্ধু জীবনে প্রয়োজন –
পজিটিভ মানুষের সাথে সবসময় মেশা উচিত। জীবনে উন্নতি করতে হলে পজিটিভ চিন্তার অধিকারী হতে হবে। আর নেগেটিভ মানুষের সাথে মেলামেশা করলে পজিটিভ চিন্তা করা কখনোই সম্ভব নয়। কেননা খারাপ দিকটি মানুষকে বেশি প্রভাবিত করে। নিষিদ্ধ দিকে মানুষের বরাবরই আকর্ষণ বেশি। তাই আপনি নেগেটিভ মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করলে আপনার চিন্তাশক্তির উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। এবং ধীরে ধীরে আপনার চিন্তাও নেগেটিভ দিকে রূপ নেবে এবং যেটা আপনার জীবনে ভয়ংকর প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু আপনি যদি পজিটিভ মানুষের সাথে মেলামেশা করেন তাহলে আপনার চিন্তাশক্তিও তাদের সংস্পর্শে পজেটিভ হবে। এবং তাদের কাছ থেকে অনেক শিক্ষা নিয়ে জীবনে চলার পথে কাজে লাগিয়ে উন্নতি সাধন করা সম্ভব। এই নিয়ে একটা বাংলা প্রবাদ বাক্য রয়েছে ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’।
৩। ইতিবাচক বা পজিটিভ বিষয়ে পড়াশোনা –
পজিটিভ চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি করতে চাইলে পজিটিভ উক্তি পড়ার বিকল্প আর কিছু নেই। মোটিভেশন ছাড়া জীবনে বেঁচে থাকা কঠিন। মোটিভেশন আমাদের প্রভাবিত করে, আর এটাকেই আপনাকে কাজে লাগাতে হবে। পজিটিভ বা ইতিবাচক উক্তি পড়লে সেই উক্তি গুলো আমাদের চিন্তাশক্তিকে প্রভাবিত করবে। আমাদের উদ্বুদ্ধ করবে পজিটিভ চিন্তা করতে, সঠিক রাস্তা দেখাতে, যেই রাস্তা ধরেই সাফল্যের করিডরে পৌঁছানো সম্ভব। অন্যদিকে নেগেটিভ বা নেতিবাচক কিছু পড়লে সেটাও আমাদের প্রভাবিত করে, কিন্তু সেটা খারাপ দিকে। যেটা আপনার জীবনে বয়ে আনতে পারে ব্যর্থতা। তাই পজিটিভ বা ইতিবাচক উক্তি শুধু পড়লেই হবে না, সেই অনুযায়ী নিজেকে তৈরি করতে হবে।
৪। নিজের মতো জগৎ তৈরি –
নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন, নিজের মতো করে জগৎ তৈরি করতে পারলে খুব ভাল হয়। কেউই নিখুঁত নয় কিন্তু আমরা বার বার অন্যদের সঙ্গে নিজের তুলনা করি৷ নিজের যা নেই, তা নিয়েই বেশি মাথা ঘামাই। আর এসব ভাবনাই আমাদের চিন্তাশক্তিকে নেগেটিভ করে তোলে। আমরা হতাশ হয়ে যাই এসব ভাবনার সাগরে ডুবে গিয়ে। নিজেদের প্রাপ্তি নিয়ে নেগেটিভ চিন্তা করতে শুরু করি। তখনই আমাদের আত্মবিশ্বাসে ভাঙ্গন ধরে। বিরূপ প্রভাবের সৃষ্টি হয় আমাদের মনের মধ্যে। তখন বেঁচে থাকার আসল মজাটাই চলে যায়। কিন্তু আমরা যদি আমাদের নিজেদের অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট না থাকি তাহলে সুখী হওয়া কঠিন এবং পজিটিভ চিন্তা করাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে ৷ তাই আমাদের যা আছে, তা নিয়েই বেশি ভাবা উচিত ৷ বিশেষ করে কঠিন সময়ে আমরা সেটা মেনে নিতে শিখলে এবং নিজের প্রতি আরো সদয় হলে জীবনে আনন্দ বাড়বে ৷ অন্যদেরও তাদের মতো করে মেনে নিতে সুবিধা হবে৷ তখন আমরা পজিটিভ চিন্তা করতে সক্ষম হবো।
৫। নিজেকে ক্ষমা করতে শিখতে হবে –
ভুল করা অন্যায় নয় কিন্তু বারবার ভুল করা মহা অন্যায়। আমরা মানুষ আমাদের দ্বারা ভুল হবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু ভুলটাকে ঠিক না করে সেই ভুল পুনরায় করা অন্যায়। আর বেশিরভাগ মানুষ সেই কাজটাই করে প্রতিনিয়ত। জীবনের চলার পথে ভুলভ্রান্তি হয়েই যায় কিন্তু অনেকেই সেই ভুলের জন্য নিজেকে দোষারোপের মাধ্যমে সেই ভুলটাকেই আঁকড়ে ধরে বসে থাকে। ভুলের জন্য নিজেকে দোষারোপ করার প্রক্রিয়া চলে প্রতিনিয়ত। আর এই কারনে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা যায়। নতুন কোন কাজে হাত না দিয়ে নিজেকে দোষ দিয়ে বসে থাকে অনেকেই। যার ফলে তারা কখনই সাফল্যের শীর্ষচূড়ায় অবতারণ করতে পারে না। কিন্তু এই ভুলকে পাশ কাটিয়ে নিজেকে নিজেই ক্ষমা করে, আপন উদ্যমে কাজে নেমে পড়লে তখন ফলাফলটা ভিন্ন হতো। সাফল্য তখন নিজে থেকেই আপনার জালে ধরা দিত। তাই অতীতের করা ভুলের জন্য নিজেকে দোষারোপ না করে নিজেকে ক্ষমা করার মধ্যমে নতুন করে কাজে নেমে পড়লে আমাদের জীবন সফলতায় ভরে উঠবে। আর এই প্রক্রিয়াই আমাদের পজিটিভ বা ইতিবাচক চিন্তা করতে সাহায্য করবে।
৬। ব্যর্থতাকে একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহন করুন –
ইংরেজিতে একটি প্রবাদ বাক্য রয়েছে, ‘Failure is the pillar of success’ আসলেই কিন্তু তাই, ব্যর্থতার থেকে শিক্ষা লাভ করে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছানো সম্ভব। আমরা যদি ব্যর্থ হয়ে পথচলা বন্ধ না করি, সেই ব্যর্থতাকে কাজে লাগিয়ে, সেই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাই আপন উদ্যমে তাহলে বিজয় নিশ্চিত। তাই আমাদের প্রয়োজন ব্যর্থতাকে কাজে লাগানো। ব্যর্থ হওয়া মানেই সব শেষ হয়ে যাওয়া না এই কথাটা মনের মধ্যে গেঁথে নেওয়া উচিত সারাজীবনের জন্যে। এই কথার বীজ রোপন করলে পরবর্তীতে এটাই গাছ হয়ে আপনাকে মিষ্টি ফল দেবে । তাই ব্যর্থ হলেই থেমে যাওয়া যাবে না। ব্যর্থতা হওয়ার ত্রুটিগুলোকে সরিয়ে দিয়ে সেই ভুলগুলোকে শুধরে নিয়ে এগিয়ে চলতে হবে, তাহলে সাফল্যের হাসিটা আপনার মুখেই ফুটবে। তাই ব্যর্থতাও আপনাকে পৌছে দিতে পারে সাফল্যের শীর্ষচূড়ায়।
(চলবে)