মধ্যপ্রদেশের ছান্দিওয়াড়া জেলার সতপুড়া পার্বত্য এলাকাতেই রয়েছে আদিবাসীদের গ্রাম— পাতালকোট। ছান্দিওয়াড়ার সদর শহর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে।
ওই এলাকার গ্রামগুলোতে মূলত ভারিয়া, ভূমিয়া-সহ বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা বাস করেন। পাহাড়ি জঙ্গলে ঘেরা ওই এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই দেখার মতো।
দীর্ঘ দিন ধরে ওই এলাকায় আদিবাসীরা থাকলেও, তাঁদের সম্বন্ধে খুব একটা কিছু জানা যায়নি এত দিন। এমনকী কয়েক বছর আগেও ভারত কেন, মধ্যপ্রদেশের ম্যাপেও ছিল না ওই এলাকার হদিশ।
এখনও শুধুমাত্র পাহাড়ের উঁচু এলাকা থেকে বোঝা যায় ওই পাতালকোট উপত্যকাটির অস্তিত্ব। গ্রামগুলো সমতল থেকে প্রায় ১৭ ফুট নীচে।
ওই এলাকাটিকে ‘পাতালে পৌঁছনোর সিঁড়ি’ বলেও দাবি করেন স্থানীয়দের কেউ কেউ। আদিবাসীদের বিশ্বাস, সীতা ওই এলাকা দিয়েই পাতালে প্রবেশ করেছিলেন।
পাতালকোট এলাকায় রয়েছে কম-বেশি ১২-১৩টি গ্রাম। সেই গ্রামের লোকজনদের জীবনযাত্রা আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো নয়।
ওই এলাকার বাসিন্দাদের দৈনন্দিন যা লাগে, তার জন্য তাঁদের বাজার-হাটে যাওয়ার দরকার হয় না। চাল, গম, আলু, পটল থেকে শাক-সবজি— সব, সব কিছু নিজেরাই চাষ করেন। জঙ্গল থেকেই সংগ্রহ করেন বিভিন্ন ফল-মূল, মধু।
তাঁদের অসুখ-বিসুখ করলে, সেই অসুখ উপশমের জন্য ওষুধের প্রয়োজনও মিটিয়ে দেয় ওই জঙ্গলই। জঙ্গলে রয়েছে বিভিন্ন রকমের ঔষধি গাছ। সেই গাছ থেকেই তাঁরা তৈরি করে নেন বিভিন্ন ধরনের ওষুধ।
ওই কাজ করার জন্য অবশ্য বেশ কিছু লোকও রয়েছেন ওই আদিবাসী গ্রামে। তাঁরাই বংশ পরম্পরায় করে আসছেন ওষুধ বানানোর কাজ।
তাই জীবন ধারণের জন্য নিত্যপ্রয়োজনী খাদ্যদ্রব্যের ব্যাপারে কারওরই মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয় না তাঁদের।
শুধু একটি জিনিসই তাঁদের বাইরে থেকে জোগাড় করে আনতে হয়। আর সেটা হল— লবণ, মানে নুন। একমাত্র এই নুনের জন্যই পাতালকোট এলাকার ওই গ্রামের লোকগুলোকে গ্রামের বাইরে বেরোতে হয়। না হলে ওই গ্রামটাকেই তাঁরা বানিয়ে ফেলতে পারতেন তাঁদের একটা নিজস্ব পৃথিবী।