বরিশাল জেলায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াস’র আঘাতে ক্ষয়ক্ষতি সরেজমিনে পরিদর্শন করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার দের নিদের্শনা প্রদান করেছেন জেলা প্রশাসক বরিশাল জসীম উদ্দীন হায়দার।
বরিশাল জেলায় এখন পর্যন্ত কোন জান মালের ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার কারনে সংযুক্ত ড্রেন দিয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়কে জোয়ােরের সময় পানি উঠে ভাটার সময় নেমে গেছে।
বুধবার দুপুরে তিনি বরিশাল জেলা প্রশাসকের অফিস কক্ষে বরিশাল জেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্বিক দিক পর্যবেক্ষন করে ইয়াসের আঘাতে ক্ষয় ক্ষতির পরিমান তুলে ধরেন।
তিনি জানান বরিশাল জেলার ১০ টি উপজেলায় ৩১৬ টি আশ্রয়কেন্দ্র, ৭৫৫ টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা ও পর্যাপ্ত শুকনো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।
প্রতি উপজেলায় উপজেলার প্রশাসনের তত্তাবধানে ‘নিয়ন্ত্রণ কক্ষ’ স্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া পর্যাপ্ত পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপজেলাসমূহে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মেডিকেল টিম ও ফায়ার সার্ভিস প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে। তবে ভাটার সাথে সাথে পানি কমছে। এ উপজেলার শ্রীপুরে বাহেরচর ৫টি ঘর জোয়ারের পানির চাপে পড়ে গেছে, স্থানটি পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় এর পানিতে জয়নগর, দড়িচর-খাজুরিয়া, বিদ্যানন্দপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন বাঁধ, রাস্তা ও ব্রীজ-কালভার্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উলানিয়ার কালিগঞ্জ ঘাটের পল্টুনের দুটো শিকল ছিঁড়ে গেছে। বিআইডবিলিউটিএ-কে অবহিত করা হয়েছে। দড়িচরখাজুরিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওর্য়াডের সিকদার হাটে অবস্থিত কমিউনিটি ক্লিনিকটি নদী ভাঙ্গনের মুখে। মাছের ঘের, ইরি ধান ও পানের বরজ জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে।
জেলার মুলাদী উপজেলায় ভাটার সাথে সাথে প্লাবন কমছে। উপজেলার কাজীরচর এলাকায় একটি রাস্তা ভেঙ্গেছে।
হিজলা উপজেলায় ভাটার সাথে সাথে জোয়ারের পানি কমেছে। হিজলা বাঁধের ৩০০ মিটার বাঁধ ধ্বসে গিয়েছে। তাছাড়াও গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন এর এইচবিবি রাস্তার ক্ষতি হয়েছে।
বাকেরগঞ্জ উপজেলার নলুয়া ইউনিয়ন এর বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে বাঁধ মেরামত করা হয়েছে। অন্যান্য ইউনিয়ন এ জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে।
বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া, শায়েস্তাবাদ, চন্দ্রমোহন ও চরমোনাই ইউনিয়নে জোয়ারের প্রভাবে প্রায় ১০০০ পরিবার পানিবন্দী হয়েছে। এ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে।
বাবুগঞ্জ উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকা জোয়ারে প্লাবিত হয়েছিল। ভাটায় পানি নেমে যেতে শুরু করেছে। ২৫ মে রাত আনুমানিক ১১ টার দিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দোয়ারিকা ও শিকারপুর ব্রিজদ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে একটি গাছ ভেঙ্গে পড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে বাবুগঞ্জ উপজেলা ফায়ার সার্ভিস এর সহযোগিতায় মহাসড়কের উপর থেকে গাছ অপসারণ করে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত উপজেলার কোথাও নদী ভাঙ্গন কিংবা বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলায় ৫ টি ইউনিয়নে জোয়ারের পানি উঠে ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ডে জোয়ারের পানি উঠেছে। বাড়ী ঘর ক্ষয় ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
বানারীপাড়া উপজেলায় নদী-খালে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোন ক্ষয় ক্ষতির খবর পাওয়া যায় নি।
গৌরনদী উপজেলায় নদী-খালে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোন ক্ষয় ক্ষতির খবর পাওয়া যায় নি।
জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলায় এখন পর্যন্ত কোন ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
জেলা প্রশাসন সূত্র বলেছে, জরুরি ভিত্তিতে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস’র আঘাতে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহের কাজ অব্যাহত রয়েছে। হালনাগাদ তথ্য প্রাপ্তি সাপেক্ষে সকলের মাঝে তুলে ধরা হবে।