বাংলা ভাষা তার সীমানা পেরিয়ে প্রায় ১৫ হাজার মাইল দূরে আফ্রিকার একটি ছোট্ট অপরিচিত দেশে শুধু পৌঁছেই যায়নি, সবার মুখের ভাষা হয়ে উঠেছে।
দেশটির নাম সিয়েরা লিওন। এর উত্তর দিকে রয়েছে গিনি, দক্ষিণ-পূর্বে লাইবেরিয়া আর দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে রয়েছে আটলান্টিক মহাসাগর।
এর মোট আয়তন ৭১ হাজার ৭৪০ বর্গকিলোমিটার। মোট জনসংখ্যা প্রায় ৭০ লক্ষ। সিয়েরা লিওনে ১৯৯১ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তুমুল যুদ্ধ হয়েছিল। সেই যুদ্ধে প্রায় পাঁচ লক্ষেরও বেশি মানুষ মারা যান। দেশের কাঠামো একেবারে ভেঙে পড়ে। তলানিতে এসে ঠেকে জনগণের গড়পড়তা আয়।
ফলে দলে দলে কুড়ি লক্ষেরও বেশি মানুষ অন্যান্য দেশে শরণার্থী হিসাবে চলে যেতে বাধ্য হন। এখানে প্রায় ১৬টি জাতি বাস করেন। যাঁদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা ভাষা, আলাদা আলাদা সংস্কৃতি।
সিয়েরা লিওনের সরকারি কাজকর্ম মূলত ইংরেজি ভাষায় হলেও এখানে আরও প্রায় ২০টি ভাষা প্রচলিত আছে। তার মধ্যে মেন্দে ও তেমনে ভাষা উল্লেখযোগ্য। প্রায় ১০ শতাংশ লোক ইংরেজি ভাষাভিত্তিক একটি ক্রেওল ভাষা, ক্রিও-তে কথা বলেন।
এই ক্রেওলটি সিয়েরা লিওনের প্রায় সবারই দ্বিতীয় ভাষা ছিল। মেন্দা ভাষা দক্ষিণাঞ্চলে, তেমনে ভাষা মধাঞ্চলে এবং ক্রিও ভাষা প্রায় সার্বজনীন ভাষা বা লিঙ্গুয়া ফ্রাংকা হিসেবে ব্যবহৃত হত।
এখানে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে গৃহযুদ্ধ যখন প্রকট আকার ধারণ করে তখন জাতিসংঘ শান্তি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নেয়। বাংলাদেশ-সহ আরও ১২টি দেশ এই মিশনে যোগদান করে। সবাই মিলে সেই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। প্রধানত বাংলাদেশের সেনারা ওখানকার গেরিলা নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলো পুনরুদ্ধার করেন। সংঘাত দমন করেন এবং পুনরায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। ফলে খুব সহজেই সেখানকার সাধারণ মানুষজনের মন জয় করে নেন তাঁরা। হয়ে ওঠেন আপনজন। আর এই সময়েই কথা বলার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষাও প্রাধান্য পেতে শুরু করে।
ওই সেনারাই ওখানকার সাধারণ মানুষকে বাংলা ভাষার সঙ্গে সঙ্গে বাংলা সংস্কৃতিও শেখাতে শুরু করেন। ফলে অচিরেই এই বাংলা ভাষা আফ্রিকার ওই ছোট্ট দেশটির অন্যতম ভাষায় পরিণত হয়।
শুধুমাত্র বাংলাতে কথা বলাই নয়, এঁরা বাংলা ভাষাতে গান, নাচ, আবৃত্তিও করা শুরু করে দেন। অনেক সময় নিজেদের মধ্যেও মাতৃভাষায় নয়, বাংলা ভাষাতেই কথা বলেন।
আর এ জন্যেই সুদূর আফ্রিকার একটি ছোট্ট দেশে ইংরেজির পাশাপাশি কেজো ভাষা হিসেবে দ্বিতীয় সরকারি ভাষার স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছে আমাদের এই বাংলা ভাষা। আর এখন ওই দেশের প্রায় সকলেই বাংলা ভাষাতেই কথা বলেন।