পটুয়াখালীর উপকূলে পূর্নিমা’র জো এবং ঘূর্নিঝড় ইয়াস’র প্রভাবে গুড়ি গুড়ি বিৃষ্টিপাত হচেছ।
বিকেলের দিকে বৃষ্টি থামলেও দমকা বাতাস অব্যাহত রয়েছে। সমুদ্র মোহনা ও নদ-নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে অন্তত: ০৮ থেকে ১০ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে।
কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের চাড়িপাড়া ও চম্পাপুর ইউনিয়নের দেবপুর ভাঙ্গা বাঁধ দিয়ে রাবনাবাদ নদীর জোয়ারের পানি প্রবেশ করে পশরবুনিয়া, ১১নং হাওলা, চৌধুরীপাড়া, নাওয়া পাড়া, ধঞ্জুপাড়া, ছোট ৫নং, বড় ৫নং, মুন্সীপাড়া এবং চম্পাপুর ইউনিয়নের দেবপুর, উত্তর নিশানবাড়িয়া গ্রাম পানির নীচে তলিয়ে গেছে।
এসব গ্রামের মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
উপজেলার দশটি গ্রামে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার জো’র প্রভাবে মঙ্গলবার সকাল থেকে পানি প্রবেশ করতে থাকে।
এতে তলিয়ে যায় ফসলি জমিসহ বাঁধের অভ্যন্তরের কয়েকশ’ বসত ঘর।
কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও মিজানুর রহমান জানান, লালুয়ার চাড়িপাড়া বেড়িবাঁধটি ২০১০ সালের পর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার ভাঙ্গা।
এছাড়া সিডরের পর দেবপুর বেড়িবাঁধটি দেড় কিলোমিটার ভাঙ্গা অবস্থায় পড়ে আছে।
এদিকে অস্বাভাবিক পানিতে কলাপাড়া পৌরসভার মাছ বাজার, হ্যালিপ্যাড, পৌরসভার ওয়াপদা বেড়িবাঁধের বাইরে অন্তত: দু’ শতাধিক পরিবার তাদের ঘর-বাড়ী ছেড়ে উঁচু সড়কের উপর আশ্রয় নিয়েছে।
উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া ৫৪ নাম্বার এবং দেবপুর ৪৮ নাম্বার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ বিধ্বস্ত হওয়ায় ৮ টি গ্রামে অন্তত পাঁচ হাজার গ্রামবাসী পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ।
এসব স্থানে রেডক্রিসেন্ট কর্মীরা মানুষের সহায়তায় কাজ করে যাচ্ছে ।
এ ছাড়া কুয়াকাটা সংলগ্ন পশ্চিম খাঁজুরা গ্রামেও বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙ্গে অন্তত: শতাধিক পরিবার পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে ।
তাদের সহায়তায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ এগিয়ে এসেছে ।
এছাড়া জোয়ারের কুয়াকাটা সৈকতের ঝাউ বাগানের ঝাউ গাছ উপড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে ।
লালুয়া ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস জানান, চাড়িপাড়ায় ভাঙ্গা বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ধানখালী ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজ তালুকদার জানান, নিশানবাড়িয়া বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙ্গে ধানখালী গ্রাম সহ লোন্দা, পাঁচজুনিয়া গ্রাম এখন পানিতে পানিতে থৈথৈ করছে
এসব গ্রামের মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ধূলাসার ইউপি চেয়ারম্যান জলিল মাষ্টার জানান, গঙ্গামতি গ্রামের ৩টি বাড়ী বিধ্বস্ত এবং অধিকাংশ বাড়ী পানিতে ডুবে গেছে।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মাছের ঘেরে পানি ঢুকে মাছ ভেসে গেছে।
কলাপাড়া ঘূর্নিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জান খান বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ’ইয়াস’ পায়রা বন্দরের ৪৮০ কি.মি. দক্ষিনে অবস্থান করছিল। এর ৬৪ কি.মি. এর মধ্যে প্রতি বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ৮৯-১১৭ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি ক্রমশ: উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ২৬ মে সকাল ৯টা নাগাদ উত্তর উড়িষ্যা, পশ্চিম বঙ্গ ও খুলনা উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
পায়রা বন্দরকে দুই নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদুল হক জানান, ইতিমধ্যে উপজেলার ১২ টি ইউনিয়ন সহ দু’টি পৌরসভায় ২৫ হাজার টাকা দিয়ে আপাতত শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে ।
এছাড়া ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে, এমন এলাকার মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে