দ্বিতীয় পর্ব – দুশ্চিন্তা একটা বিরাট বড় খাদ
এমন মানুষ পাওয়া খুবই কঠিন যার কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা এতই ভয়াবহ যে, এটি মানুষের উচ্চ রক্তচাপ তৈরি করতে সহায়তা করে। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষকে দুশ্চিন্তা করতে করতে শয্যাশায়ী হয়ে হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে যেতে পর্যন্ত দেখা গেছে।
দুশ্চিন্তার হাত থেকে দূরে যেতে চাইলে —–
১. যে ঘরটিতে পর্যাপ্ত আলো বাতাস আছে সেই ঘরটিতে থাকতে চেষ্টা করুন। একটি রোদ ঝলমলে ঘরে বসবাস করলে মনটা ভাল হয়ে যায়।
২. কালকের কথা কালকে ভাববেন। কালকে কি হবে বা ভবিষ্যৎ নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করে নিজেকে শেষ করে না দিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত আজকের দিনের জন্য বাঁচুন।
৩. যে কারণে দুশ্চিন্তা হচ্ছে তার সমাধান করতে চেষ্টা করুন, আর একান্তই যদি সেই সমাধানের রাস্তা খুঁজে না পান তাহলে আপনার কি ক্ষতি হতে পারে আগে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন। ধীরে ধীরে সেই ক্ষতিটাকে মেনে নিতে চেষ্টা করুন। নইলে জীবনটাই যদি শেষ হয়ে যায় তাহলে আর কি মানে হল। বরং এই ক্ষতির রেশ কিন্তু কেটে যাবেই। এবং একদিন সবকিছুই আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তাই দুশ্চিন্তা আসলে তাকে কোনোভাবেই মনের মধ্যে জায়গা দেবেন না। সেই সময় শান্ত হয়ে ধ্যান করুন। দেখবেন মন শান্ত হবেই। একদিন জীবনও শান্তিতে ভরে উঠবে।
৩. নিজেকে বারবার মনে করিয়ে দিন এই দুশ্চিন্তার জন্যে আপনার কিন্তু মৃত্যু অবধি হতে পারে।
দুশ্চিন্তা বিশ্লেষণ করার উপায় —
১. কি কারণে দুশ্চিন্তা হচ্ছে তাকে একটা ডায়রিতে এক দুই তিন করে লিখুন।
২. তথ্যগুলো থেকে একটা সিদ্ধান্তে আসুন।
৩. নিজেকে উদ্বেগমুক্ত রেখে ফলাফলের কথা চিন্তা না করে সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ করুন।
৪. যখনই মনে হবে আপনি দুশ্চিন্তা করছেন, নিচের এসব প্রশ্নের উত্তর বের করে লিখুন—
ক. সমস্যাটি কী?
খ. সমস্যাটির কারণ কী কী?
গ. সম্ভবত কী কী উপায়ে সমস্যাটি সমাধান করা যেতে পারে?
ঘ. সমস্যাটি সমাধান করার সবচেয়ে ভালো উপায় কোনটি?
দুশ্চিন্তার অভ্যাসকেও কিন্তু ভেঙ্গে ফেলা যায় ——-
দুশ্চিন্তা কি আপনাকে ভেঙে ফেলছে? যদি মনে হয় তাই, তাহলে সবার আগে আপনি দুশ্চিন্তার অভ্যাসকে ভেঙে ফেলুন। কীভাবে?
১. নিজেকে খুব ব্যস্ত রাখুন।
২. খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে অতো চিৎকার চেঁচামেচি না করাই ভাল।
৩. যেটি নিশ্চিতই হবে, সে সমস্যাটির সঙ্গে সহযোগিতা করে কাজ করুন।
৫. আপনার উদ্বেগ্ন যতটুকু সমস্যা তৈরি করতে পারে, তার চেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা না করার সিদ্ধান্ত নিন।
৬. অতীতকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না।
মানসিক সুখ-শান্তির পথ ———-—
১. শান্তিপূর্ণভাবে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, বাঁচার জন্যে বাঁচা নয়, জীবনকে ভালোবাসতে হবে। নিজেকে নিজেই উৎসাহ দিতে হবে। নিজের শরীরের যত্ন নিতে হবে , আর আশা আর স্বপ্ন দিয়ে মনকে ভরপুর করতে হবে।
২. যেসব মানুষকে আপনি পছন্দ করেন না, তাদের নিয়ে চিন্তা করে আপনার এক মুহূর্তও নষ্ট করবেন না।
৩. মানুষের অকৃতজ্ঞতাকে মেনে নিন।
৪. জীবনকে অযথা একেবারেই জটিল করে তুলবেন না। সমস্যাগুলোকে নয়, আপনার প্রাপ্তিগুলো গণনা করুন।
৫. নিজেকে নিজের মতো করে গড়ে তুলুন। অন্যের মতো করে নয়। প্রতিটি মানুষের বাহ্যিক চেহারা যেমন আলাদা, অন্তরের চেহারাও কিন্তু আলাদা, এমনকি এই পৃথিবীতে প্রত্যেকে প্রত্যেকের মতো। কেউ কারো মতো নয় ।
৬. আপনার জীবনে সব কিছুই কিন্তু খারাপ নয়, ভাল যা কিছু তাকে খুঁজে বের করুন। জীবনে কোনো কিছু ক্ষতি হয়েছে কি? যদি হয়ে থাকে তবে তাকে ভুলে যান ।
কোনো খারাপের মধ্যেও কিন্তু ভাল কিছু থাকে। খুব সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাবেন কোনো একটা শেষের পরেই কিন্তু অন্য একটা শুরুর পথ।
আপনার যা আছে বা যেটুকু আছে তাকেই সুন্দর করে সাজিয়ে তুলুন।
৭. অন্যকে কিভাবে ভাল রাখা যায় তার চেষ্টা করুন। এতে মনটা প্রসারিত হবে ।
দুশ্চিন্তা জয়ের নির্ভুল পদ্ধতি —
১. প্রার্থনা করুন, সকলের জন্যে মঙ্গল প্রার্থনা করুন।
২. আজকের দিনটিকে ভালবাসুন, বর্তমান নিয়ে বাঁচুন।
(চলবে)
প্রথম পর্ব প্রকাশিত ২২ মে ২০২১