বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিভাগীয় শহর বরিশাল। মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, খান বাহাদুর হেমায়েতউদ্দীন, জীবনানন্দ দাশ সহ অসংখ্য খ্যাতনামা জ্ঞানী গুণীজনের পদচারণা মুখরিত এই বরিশালের বর্তমান চিত্র যদি আঁকতেন কোন চিত্রকর তবে তা হতো হীরক রাজার রাজত্বের শহরে বসবাসের করুণ চিত্র।
শহরের প্রধান কয়েকটি সড়কের অবস্থা মোটামুটি ভালো, কারণ এ পথগুলো ভিআইপি যাতায়াতের জন্যেই বেশি ব্যবহার হয়। বাকী প্রায় সবকটি সড়কের বেহাল দশা।
নগরীর আমতলার মোড় থেকে প্রধান সড়কটি বা বিশ্বরোড়, বগুড়া রোড, পুলিশ লাইন রোড ও সদর রোড সহ কয়েকটি সড়কের চিত্র ভাল ও চলাচলে আরামদায়ক হলেও এ সড়কগুলো দিয়ে প্রতিদিন ভিআইপিদের যাতায়াত, সাধারণত আমজনতা এ পথে চলাচল কম করেন।
উপশহর বা বন্দর থানাধীন কাউয়ারচর, চরকারন্দি, কর্ণকাঠী, ভোলারোডের লাহারহাট সড়ক, চাঁদপুরা ইউনিয়নের বৈরাগবাড়ি, বাদশাবাড়ি সড়কের অবস্থা এতটাই করুন যে অত্র এলাকার চেয়ারম্যান ছবি হাওলাদার ও আমানউল্লাহ আমান সাহেবরা আদৌ জীবিত না মৃত সে বিষয়ে রীতিমত সন্দেহ পোষণ করবেন যে কেউ! গোপের হাট, চরকারন্দি হাইস্কুল ও গজনীর দীঘী পর্যটক। গজনীর দীঘি মুলত বরিশালের উল্লেখযোগ্য একটি পর্যটন স্পট। এটিও বন্দর থানার চাঁদপুরা ইউনিয়নের মধ্যে।
পুর্ব কর্ণকাঠী এলাকার সড়ক ও ব্রীজ নিয়ে ইতিপূর্বে বহুবার পত্রপত্রিকায় সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। এখানের দায়িত্বে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ছবি । তিনি গত ১৫ বছরেও এসব নিয়ে কখনো গুরুত্ব দেননি। আজও এ বিষয়ে কথা বলতে মোটেই আগ্রহী নন বলে পরিস্কার জানিয়ে দিলেন। আর সাংবাদিকদের তিনি দুচোখে দেখতে পারেন না বলে যে সুখ্যাতি আছে তার। সেই বিরক্তিকর আচরণের প্রমাণ রাখলেন।
তবে চেয়ারম্যান সাহেব প্রতিদিন সকাল থেকে কয়েক ঘন্টা অফিস করেন এবং সাধারণ মানুষের সাথে হাসিমুখে কথাও বলেন। তবে কেউ কোন সাহায্য বা সমস্যা নিয়ে এলেই দূর দূর করে তাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। শুধু সনদ বা প্রশংসাপত্রে সই তার কোনো ক্লান্তি নেই।
তিনি পরপর তিনবার একই এলাকায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ছবি হাওলাদার। গর্ব করে তিনি প্রায়ই বলেন, ‘কারো ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হইনি, যাদের সাহায্য নিয়ে চেয়ারম্যান হয়েছি, তাদের পিছনে উন্নয়নের টাকা খরচ করি।’
চাঁদপুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমানউল্লাহ আমান মুলত জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক ছিলেন বলে জানা গেছে। সৎ ও ভালো লোককে বাছাই করে ভোটের মাধ্যমে তাকে নির্বাচিত করেছে চাঁদপুরাবাসী। কিন্তু দলগত কারণে এলাকার কোনো উন্নয়নের কাজেই তাকে কেউ সহযোগিতা না করায় এবং উল্টো তাকে হয়রানী করার অভিযোগ জানালেন স্বয়ং চেয়ারম্যান আমান নিজেই। কাজ করার আগ্রহ আছে, সুযোগ নেই বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তার।
এখানে তালুকদার হাট নামক স্থানের ব্রীজটির নির্মাণ কাজ চলছে খুবই ধীর গতিতে। বরিশালের সড়ক ও জনপথের দায়িত্বে চলছে এই উন্নয়ন।
চাঁদপুরা ইউনিয়নের সাবেক মেম্বর ইউসুফ সিকদার বলেন, মোট ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে এই উপজেলা। এখানের সব কয়টি ইউনিয়নের অবস্থা একই রকম। বাজেট না পেলে চেয়ারম্যান মেম্বার কি করবে? উপর থেকে উন্নয়ন বাজেট গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছলে তবেই তো উন্নয়ন হবে।
একটি বিভাগীয় জেলা সদরের সড়কের উন্নয়নের হালচিত্র যদি এমন হয় তবে বিভাগের অন্যান্য জেলা শহরগুলোর উন্নয়নের চিত্র কেমন হতে পারে?