প্রতি কিলোমিটার পথ মাত্র ১৫ টাকা. মোটরসাইকেল নিয়ে যাত্রী পরিবহনের চেষ্টায় নেমেছে বরিশালের শত শত যুবক। একটি মোটরসাইকেলকে সম্বল করে তাদের এই উপার্জনের পথে প্রধান বাধা ট্রাফিক পুলিশ। কারণ প্রায়শই চালকসহ তিনজন হওয়ায় এবং ওভারলোডের কারণে মামলায় জড়িয়ে যায় এখানকার বেশিরভাগ বাইকার। তবে আশার কথা এই যে খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে নীতিমালা আনছেন বরিশাল বিআরটিএ।
মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ এখন আর নতুন কোন পেশা নয়। নয় লজ্জার কিছু। কোনো কাজ ছোটো নয়। খুবই সৎ পথে সময় আর শ্রমের বিনিময়ে উপার্জন এই মোটরসাইকেল যাত্রী পরিবহন। প্রচুর শিক্ষিত যুবক এখন এই পেশায় নিজেকে নিযুক্ত করছে। তাই তাদের উৎসাহিত করতে বর্তমান সরকারও বাইক রাইডের অনুমতি দিয়েছেন। এসেছে পাঠাও, উবার, সহজ সহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান।
সম্ভবত আশির দশকে বাংলাদেশে যশোর, সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকার কিছু যুবক প্রথমে বাইসাইকেল (হেলিকপ্টার বলা হতো) পরে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাত্রীকে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিতেন অর্থের বিনিময়ে, এরপরেই এটাই একটি পেশায় রূপান্তরিত হয় এবং অনেকেই উপার্জনের পথ হিসেবে বাইকারের পেশাটি বেছে নেন। ৯০ দশকে এসে এটি বিভিন্ন জেলায় গ্রামগুলোতে ছড়িয়ে পরে। পরবর্তীতে ইন্টারনেট সুবিধা সম্প্রসারিত হলে ২০১৪ সময়ে (আগে পরে হতে পারে) ঢাকায় প্রথমে পাঠাও ও উবার এ্যাপস র্নিভর মোটরসাইকেল যাত্রী পরিবহন সেবা সরকার কর্তৃক অনুমোদন পায়।
এ সময়ে মফস্বল শহরের মোটরসাইকেল চালকেরা বেশিরভাগই ঢাকামুখী হয়ে পরে। অন্যরা সমিতির মাধ্যমে নিজেদের একত্রিত করার চেষ্টা করলেও তা দায়িত্বহীন ও দায়ছাড়া আচরণের কারণে নিন্দিত হয়।
একই চিত্র বরিশাল ও আশেপাশের জেলাগুলোতে। এখানে বেশ কয়েকটি পয়েন্টে মোটরসাইকেল চালকদের জটলা লক্ষ্যনীয়। শহরের নতুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডে, লঞ্চঘাট, হিরন পয়েন্ট, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোড়, রূপাতলী, ভোলা রোড, লাহার হাট, তালুকদার হাট, চরামদ্দি, গোমা এবং বেকুটিয়া ফেরীঘাট ইত্যাদি স্থানে জরিপ চালিয়ে দেখা গেল প্রায় পাঁচশত যুবক এই পেশায় জড়িত এই অঞ্চলে। যাদের উপার্জনের প্রধান উৎসই মোটরসাইকেল।
যদিও এদের অনেকেরই কাগজপত্র বৈধ নয়, অনেকেরই ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। তারপরও এরা জীবিকার তাগিদে ছুটে চলছে। এখানকার নিয়মে চালকসহ তিনজন কখনো চারজনও যাত্রী বহন করে এরা। তানা হলে যা ভাড়া পাওয়া যাবে তা দিয়ে সংসার চলবে না।
কর্ণকাঠী এলাকার মোটরসাইকেল চালক আবুল হোসেন আবু জানান, গড়ে ১৫ টাকা কিলোতেই আমাদের যাতায়াত। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোড় থেকে গোমা বা লাহারহাট ২৬ কিলোমিটার পথ। ৩৯০ টাকা ভাড়া আসে। আমরা কেউ একা যেতে চাইলে ২৫০ টাকায় চলে যাই। বেশিরভাগ যাত্রী দরিদ্র শ্রেণির, তারা একা যেতে চায়না। খরচ কমাতে আরো একজন নিতে অনুরোধ করে। তখন বাধ্য হয়েই আমাদের ওভারলোড নিতে হয়। এভাবে জনপ্রতি ১৫০ বা ১৬০ টাকার হিসেবে যাত্রী সেবা হয়।
একই ভাবে ভাড়ার ও দুইজন যাত্রীসহ চালক মোট তিনজন বহনের ব্যাখ্যা দিলেন ঝালকাঠির সাইফুল। রূপাতলী মোড় থেকে পিরোজপুর বা বেকুটিয়া ফেরীঘাটে তার যাতায়াত। প্রায় ৫০ কিলোমিটার এই পথের ভাড়ার হিসেব দিলেন ৮০০ টাকা। তবে বেশিরভাগ সময়ে একজন নিয়ে পিরোজপুর শহরে পৌঁছে দেন ৭০০ বা ৬৫০ টাকায়। আর বেকুটিয়া ফেরীঘাটে দুজনের ভাড়া ৫০০ টাকা।
এদের মধ্যে আবার অপেশাদার চালক নেতাদের সংগঠনও আছে। যারা সংগঠনের নামে চালকদের থেকে চাঁদাবাজি করছেন। সিরিয়াল বসিয়ে কার পর কে যাবে তা নির্ধারণ করছেন এবং বাইক প্রতি নির্দিষ্ট চাঁদা আদায়ও করছেন। বছরে একটা পিকনিক করেই এই সংগঠনগুলো খালাশ। চালকদের সুবিধা অসুবিধা দেখার কেউ নেই এখানে। কোনো র্দুঘটনা ঘটলে পরিবার পরিজন ছাড়া কেউই এগিয়ে আসেনা। এরপরও রয়েছে বিভিন্ন বাধা। করোনার কারণে গণপরিবহন বন্ধ। তাই এখন মোটরসইকেল চালক বা বাইক রাইডের চাহিদা আছে। অভ্যন্তরীন রুটের কিছু বাস আসে যা নির্দিষ্ট নেতাদের। এই বাস যতক্ষণ চলে না যাবে ততক্ষণ কোনো যাত্রী বহন করা যাবেনা বলে জানালেন বাইকার স্বপন। আর পুলিশের বাধা তো নিত্যদিনের ঘটনা।
সব শুনে বরিশালের বিআরটিএ উপপরিচালক জিয়াউর রহমান জানালেন আশার সংবাদ। কেউ যদি আগ্রহী হয়ে এ্যাপস ভিত্তিক বাইক রাইডিং করতে চায়, আমি তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবো। দু একজনের সাথে ইতোমধ্যে যোগাযোগও করেছে, হয়তো খুব শীঘ্রই এ্যাপস নির্ভর হবে বরিশালসহ আশেপাশের মোটরসাইকেল পেশাজীবীরা। তার আগে পর্যন্ত আমি তাদের আইন মেনে বাইক চালানোর অনুরোধ জানাবো।