২০১৬ সালের চট্টগ্রামের মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এর আগে তাকে চট্টগ্রামে ডেকে পাঠানো হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, ‘বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এ বিষয়ে যা বলার বুধবার বলব।’
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরের দিকে পিবিআইয়ের উপমহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাদী নিজেই চট্টগ্রামে গিয়েছেন।
গত সপ্তাহে মাহমুদার বাবা মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে কথা বলেন পিবিআই কর্মকর্তারা। মোশাররফ হোসেন মেয়ে হত্যার জন্য জামাতা বাবুল আক্তারকে দায়ী করে আসছিলেন।
মাহমুদার মা সাহেদা মোশাররফ জানান, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাবুল আক্তারের বাবা আবদুল ওয়াদুদ তাদের ফোন করে ছেলে নিখোঁজ থাকার খবর জানান। বাবুল আক্তারের বর্তমান স্ত্রী তাকে এই খবর দিয়েছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে পিবিআই এর সাক্ষাতের পর থেকে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও ফোন বন্ধ রয়েছে বাবুল আক্তারের বাবা আবদুল ওয়াদুদ সহ ভাই হাসিবুর রহমানেরও।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। এ ঘটনায় ঢাকায় মিতুর স্বামী এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে নিজের জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন। তবে একপর্যায়ে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জামাতা বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগ করেন নিহত মিতুর বাবা মোশারফ হোসেন।
পিবিআই সূত্র জানা গেছে, মিতু হত্যার এই মামলাটি প্রথমে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ও চট্টগ্রামের গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করে। ২০২০ সালের জানুয়ারী মাসে আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার পিবিআই-কে দেওয়া হয়। পিবিআই তদন্তে নেমে প্রথমবারের মতো মামলার বাদী ও সন্দেহভাজন হিসেবে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের সঙ্গে কথা বলেছে। কয়েকদিন আগে নিহত মিতুর বাবার সঙ্গেও পিবিআইর তদন্ত কর্মকর্তারা কথা বলেছেন বলে জানা গেছে।
এরপরে বাবুল আক্তারকে পুলিশ সুপারের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে বাবুল আক্তার স্বেচ্ছায় ইস্তফা দিয়েছেন বলা হলেও তিনি পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনও করেছিলেন বাবুল। পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পর তিনি প্রথমে প্রথমে ঢাকার মেরাদিয়ায় শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন। ঐ বছরেই ২৪ জুন বাবুল আক্তারকে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে এনে প্রায় ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে কিছু দিন রাজধানীর একটি হাসপাতালে চাকরি করেন। বর্তমানে তিনি চীন থেকে পানি পরিশোধনকারী যন্ত্র এনে বিক্রির ব্যবসা শুরু করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।