বুড়িগঙ্গা আগেরই মতোন কলকল ধ্বনিতে
বয়ে যাচ্ছিলো; লাফিয়ে লাফিয়ে সুন্দরবনে ছুটছিলো
পাল পাল হরিণ; ঢেঁকিতে ঘুমঘোরে পাড় দিচ্ছিলো
কৃষানিরা; মাঝনদীতে মাঝিরা আগেরই মতোন
ভাসিয়েছিলো পালতোলা নাও; যথারীতি একঝাঁক
পাখির কলরবে মুখরিত হচ্ছিলো রমনা পার্ক,
কিন্তু, শ্রাবণ নিশিতে আকাশে একটি কালো সূর্য
উঠেছিলো; শরতের প্রথম প্রভাতে ফুটেছিলো
অজস্র কালো শিউলি ফুল, এখনো ফোটে, অঝোরে
ঝরেছিলো নোনা বৃষ্টি; অঝোরে শ্রাবণ হেক্যুবার
মতো কেঁদেছিলো, এখনো কাঁদে, আকাশ হতে তার
অতি আদুরে ধ্রুবতারাটি চিরতরে খসে গেছে;
না হ্যালির ভয়ংকর ধূমকেতুর ঘুটঘুটে আঁধার
না ব্ল্যাকহোলের মহাভয়ংকর অন্ধকার গ্রাস
করতে পেরেছিলো তাঁর একতিল আলো; কেমন করে
অই ঈশান কোণের কালবৈশাখীর কালোমেঘ
গ্রাস করলো নিরন্তর দীপ্তিমান নক্ষত্রের সব
আলো! সরলতা আর অগাধ বিশ্বাসভরা দরাজ
হৃদয়হিমালয় কেমন করে কোন্ ভূকম্পনে
ধসে পড়লো! বিশ্বাসের এ কেমন মূল্য দিলে! কোটি
কোটি দিকভোলা নাবিকের বাতিঘর, সে অনন্য
বাতিঘরের সকল আলো নিভিয়ে দিয়ে অথৈ
সমুদ্দুরের উত্তাল ঊর্মিমালার ঘূর্ণিপাকে
কেমন করে পারলে এ জাতির স্বপ্নতরি ডুবাতে!
হাস্যোজ্জ্বল নিষ্পাপ একরত্তি কুঁড়ি, বিকশিত
হবার আগে, কেমন করে কোন্ বুনো হাওয়ায়
ঝরে গেলো! কেমন করে প্রস্ফুটিত একবাগান
ফুল নির্দয়ভাবে ঝরে গেলো! তাই কি ওগো জননী
তোমার এখনো এই ক্রন্দন? বটবৃক্ষের মতো
শীতল ছায়াদানকারী আকাশের মতোন উদার
মহীয়সী এক মাতা, জাতির অনন্ত অনুপ্রেরণা,
সারা জীবন জাতির জন্য নিজেকে উজাড় করে
দেওয়া এক অনন্যা; তীব্র ঝড়-ঝঞ্ঝা যে বৃক্ষের
একটি পাতাও কখনো ঝরাতে পারেনি, কেমনে
সহসা কোন্ দমকা হাওয়ায় সে বৃক্ষ সমূলে
উপড়ে গেলো! তাই কি ওগো মাতা তোমার এখনো
এই বুকফাটা আহাজারি?
কে বলে তোমরা নেই? তোমরা আছো তোমরা থাকবে
যতোদিন পৃথিবীটা টিকে থাকবে; তোমারা আছো
কোটি কোটি পরানের ভিতর অগ্নিশিখার মতো
চিরভাস্বর, কোটি কোটি হৃদয়ে অফুরন্ত প্রেরণা
হয়ে তোমরা সর্বদা বিরাজমান,বাগানে বাগানে
ফুল হয়ে ফুটে আছো সৌরভ ছড়িয়ে, জ্যোৎস্না
ফোটা রাতের উঠানে তোমরা আছো খেটে-খাওয়া
জনতার লাগাতার কিচ্ছার আসরে, যতোসব
কবিগানে, জারিগানে, মাঝনদীর নায়ের সব
মাঝির মন ভোলানো সারিগানে, শিশুর মধুর
খইফোটা হাসি আর কৃষকের খুশির ঝিলিকে ;
তোমাদের নামে যুগে যুগে অমর কবিরা রচনা
করবে অমর পংক্তিমালা।