ঢাকার লালবাগে বসবাস করেন মো. নাহিদ মিয়া ও সুমা বেগম আক্তার দম্পতি। ঈদকে সামনে রেখে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সুমা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে রওনা হয়েছিলেন নাহিদ মিয়া নিজ গ্রামের বাড়ি বরিশালের হিজলা উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে। দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকায় তারা ট্রলারে পদ্মানদী পাড়ি দেওয়ার সময় দেখেন কঠোর কড়াকড়ি চলছে। তখন ট্রলার চালক জাজিরা উপজেলার পূর্বনাওডোবার পাইনপাড়া পদ্মা নদীর চরে জোরপূর্বক তাদের নামিয়ে দেন। সেখান থেকে হেঁটে ২ কিলোমিটার অতিক্রম করার পরে সুমার প্রসববেদনা উঠলে চরের একটি বাড়িতে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় এবং বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে একটি কন্যাসন্তান প্রসব করেন অন্তঃসত্ত্বা সুমা বেগম।
স্থানীয় লোকজন মারফত খবর পেয়ে মাঝির ঘাটের আবদুর রাজ্জাক মাতব্বরকে ছুটে আসেন। তিনি জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশ্রাফুজ্জামান ভূঁইয়াকে ফোন করে ঘটনা অবহিত করেন। এরপরে ইউএনও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানকে বিষয়টি জানান। তারপরেই তারা স্বাস্থ্যকর্মীদের পাঠিয়ে নৌ অ্যাম্বুলেন্সে করে ওই প্রসূতি ও নবজাতককে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে নিয়ে আসে। সন্ধ্যার দিকে তাদের সেখানে ভর্তি করা হয়। বর্তমানেমা ও মেয়ে দুজনই সুস্থ আছেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের কাপড়, শিশুর দুধসহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়।
হাসপাতালে নেওয়ার পর ওই দম্পত্তিদের সাথে মুঠোফোনে কথা বলেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান। তিনি তাদের অভিনন্দন জানান, চিকিৎসা ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন। আর পদ্মা নদীর চরে সন্তান প্রসব হওয়ায় তার নাম রাখেন ‘পদ্মা’। সানন্দে তা মেনে নেন নাহিদ ও সুমা দম্পত্তি।
মো. নাহিদ মিয়া বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন জুন মাসের ১১তারিখ তাদের সন্তান জন্ম নেবে। এ কারনে স্ত্রীকে তার বাবার বাড়ি রাখার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। তারা জানতো না যে পদ্মা নদীতে কোন নৌযান চলে না। মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া এসে আটকা পরেন। নদীর তীর দিয়ে দুই কিলোমিটার হাঁটার পর দুপুরের দিকে একটি ট্রলারে চরে পদ্মা নদীর একটি চরে নামেন। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে রওনা হন। পথিমধ্যে স্ত্রীর প্রসব বেদনা ওঠে। তখন গ্রামবাসীরা তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন। আল্লাহর রহমতে আমি কন্যা সন্তান পেয়েছি। আমাদের বিপদে যে ভাবে মানুষ পাশে দাঁড়িয়েছে তাতে আমরা কৃতজ্ঞ।
জাজিরা উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা জানান,সন্তান সম্ভবা স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে নাহিদ তাদের গ্রামের বাড়ি বরিশালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে পদ্মার চর দিয়ে প্রায় ২ কিলোমিটার হাঁটার পর সুমার প্রসববেদনা ওঠে।তখন পাইনপাড়ার বাসিন্দারা তাদের পাশে দাঁড়ান। ওই গ্রামের নারীদের সহায়তায় সুস্থ ভাবেই সুমা বেগম সন্তান প্রসব করেন। তারা বুঝতে পারেননি পদ্মা নদীতে কোনো নৌযান চলে না। নাহিদ মিয়ার বাড়ি বরিশালের হিজলা উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে।দেড় বছর আগে সুমাকে বিয়ে করেন নাহিদ।ঢাকার লালবাগ এলাকার একটি স্টিলের ফার্নিচারের কারখানায় কাজ করেন নাহিদ। এটা তাদের প্রথম সন্তান।
সোমবার মা ও নবজাতককে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকরা দেখবেন। তারা সুস্থ থাকলে নৌ অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে তাদেরকে বরিশালের হিজলা পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।