মানিকগঞ্জে সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র এহিয়া হোসেন মির্জা ওরফে নূর মোহাম্মদ (১৬) নামের এক কিশোর গুলিতে আহত হয়েছে। শনিবার রাত ১০টার দিকে বেউথা হলি চাইল্ড স্কুলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ এহিয়া হোসেন মির্জাকে সাভারের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে হাসপাতলে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, ইউটিউবে ভিডিও দেখে তৈরি করা পিস্তল দিয়ে প্রেমের প্রতিপক্ষ এহিয়া হোসেন মির্জাকে শিক্ষা দিতে গুলি করে তৌফিকুর রহমান সীমান্ত (২৪) নামে এক যুবক। সে বেয়ালিয়া এলাকার ফার্মেসি ব্যবসায়ী মোঃ মাসুদ হোসেনের ছেলে।
আহত এহিয়া হোসেন মির্জা সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লি গ্রামের মৃত ইমরান হোসেন মির্জার ছেলে।
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে এহিয়া মির্জার ছোট বোন শুভেচ্ছা মির্জা বলেন, আমার ভাই তারাবির নামাজ শেষ করে বাসায় ফেরার পথে সীমান্ত নামের একজন তাকে হলি চাইল্ড স্কুলের সামনে ডেকে নিয়ে গিয়েতাকে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে। এরপরে আমার ভাই এহিয়া গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দৌড়ে বাসায় আসে এবং জানায় সীমান্ত নামের এক ছেলে তাকে গুলি করেছে। এরপর আমার মা ও অন্যান্য মিলে তাকে দ্রুত মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয় বাসিন্দা মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পুটাইল ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল মোল্লা সাংবাদিকদের জানান, আমরা বাসায় ছিলাম হঠাৎ লোক জনের চিৎকার শুনে রাস্তায় বেড় হয়ে দেখতে পাই আমাদের পাশের বাড়ির একটি ছেলেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তার মা এবং বোন হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করছে।
মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স নবীন মিয়া বলেন, আহত এহিয়ার ঘাড়ে একটি গুলির চিহ্ন রয়েছে। উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
ঘটনাটির পরপরেই মানিকগঞ্জ সদর পুলিশ সার্কেল ভাসকর সাহা পিপিএম এবং সদর থানার অফিসার ইনচার্জ আকবর আলি খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও অভিযুক্ত সিমান্তকে আটকের জন্য দ্রুত অভিযান পরিচালনা করে এবং সদর উপজেলার নবগ্রামের নানাবাড়ি থেকে রাত ১টার দিকে অভিযুক্ত সিমান্তকে আটক করা হয়। এই ঘটনায় আহত এহিয়ার মা নূরজাহান বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়াও অস্ত্র আইনে সদর থানার এসআই শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে সীমান্তের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করছেন। রোববার দুপুরে সীমান্তকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
মানিকগঞ্জ সদর সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা জানান, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা জয়রা এলাকায় মাসুদুর রহমানের ছেলে তৌফিকুর রহমান সীমান্ত ছবি আঁকা, ইন্টেরিয়র ডিজাইনসহ বহু সৃষ্টিশীল কাজ করেন। তিনি ৯ম শ্রেণিতে পড়ুয়া একটি মেয়েকে পছন্দ করেন। কিন্তু ওই মেয়ের সঙ্গে এহিয়া হোসেন মির্জা ওরফে নূর মোহাম্মদের সম্পর্ক হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এহিয়াকে শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন সীমান্ত। পরে ইউটিউব ঘেঁটে সবচেয়ে কম খরচে কম পরিশ্রমে কীভাবে পিস্তল বানানো যায় তা রপ্ত করেন। পরে বানিয়ে ফেলেন বারুদ আর সীসার বুলেটের পিস্তল।
পুলিশ সুপার আরও জানান, ওই পিস্তল নিয়ে শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এলজিইডি অফিসের পাশে এহিয়ার বাসার সামনে এসে নিজের তৈরি পিস্তল দিয়ে তাকে গুলি করেন সীমান্ত। গুলিটি এহিয়ার গলায় গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাকে রাতেই উন্নত চিকিৎসার জন্য সাভারের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার ব্যপারে অভিযুক্ত সীমান্ত প্রাথমিক ভাবে ঘটনার দায় স্বীকার করে জানিয়েছে, আমার প্রেমিকার কাছে এহিয়া হোসেন মির্জা প্রায়ই আমার সম্পর্কে বাজে খারাপ কথা বলত। তার এসব কথা শুনে আমার ভেতরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃস্টি হয়ে এবং কথার রাগের মাথায় এহিয়াকে ভয় দেখানোর সিদ্ধান্ত নেই। এরপরেই ইউটিউব দেখে নিজেই ঘরে বসে পিস্তল তৈরি করি। এহিয়াকে ভয় দেখানোর সময়ে এক পর্যা্য়ে আমার হাতে থাকা বন্দুকের ট্রিগারে চাপ লাগলে একটি গুলি তার শরীরে লাগে।