চরফ্যাশনে ডাবল হত্যা:
জমি বিক্রির বাকী টাকা না দিতেই খুন করা হয়েছে ২ভাইকে- আসামীদের স্বীকারোক্তি

সুশান্ত ঘোষ
সুশান্ত ঘোষ
5 মিনিটে পড়ুন

চরফ্যাশনে দুই ভাই খুনের ঘটনায় প্রধান ঘাতককে চট্টগ্রাম থেকে সোমবার রাতে চট্টশ্বেরী এলাকার একটি পাহাড়ি এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে ভোলা পুলিশ

চাঞ্চল্যকর ডাবল খুনের ঘটনার তদন্ত কারী কর্মকর্তা জানান, প্রধান আসমি বেল্লাল হোসেনের স্বীকারোক্তি মোতাবেক পুলিশ অভিযান চালিয়ে শরীফুল ইসলামকে (২৮) গ্রেফতার করে।‘ শরীফুল ইসলামের সাথে বেল্লাল হোসেনের আড়াই লাখ টাকায় দুই ভাইকে খুনের চুক্তি হয়েছিল। সে অনুযায়ী কিছু টাকা সে পেলেও সে অধিকাংশ টাকা পায়নি, ঘটনার পরে সে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। এর আগে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী বেল্লাহ হোসেন, আবু ও কাসেম মাঝিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

তদন্ত কর্মকর্তা জানান দুই ভাই হত্যার ঘটনার পরিকল্পনা হয় ৩রা এপ্রিল বেল্লাল হোসেনের ভগ্নীপতির সালাহউদ্দিনের চট্টগ্রামের বাসায়। সালাহউদ্দিন চট্টগ্রামে সিএনজি চালায়। তার বন্ধু শরীফুলও প্রাইভেট কারের চালক। তার বাড়িও একই জায়গায় চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা এলাকায়।

এদিকে এই ঘটনায় ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মো. কায়সার দুপুরে এসপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দুইভাই হত্যার ঘটনার মূল ঘাতক ও তার পরিকল্পনা বিষয়ে সাংবাদিকদের সংবাদ সম্মেলনে জানান।

- বিজ্ঞাপন -

পুলিশ সুপার সরকার মো. কায়সার জানান, একজন বাদে সকল আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই হত্যাকান্ডের প্রধান পরিকল্পনাকারী বেল্লাল, ও প্রধান ভাড়াটে খুনী বেল্লাল।

এর আগে চরফ্যাশন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহম্মদ মনির হোসেন মিয়া জানান গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চরফ্যাশন পৌরসভা সংলগ্ন আসলামপুর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়াররড এর জামাল ভুইয়ার বাগানে ৮ এপ্রিল আগুনে পোড়া অবস্থায় দুইটি লাশের দেহাবশেষ উদ্ধার করি। এই ঘটনার গুরুত্বের কারনে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটও আলামত সংগ্রহ করে। এই ঘটনায় চরফ্যাশন থানায় এস আই নুরুজ্জামান অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে ৯ এপ্রিল চরফ্রাশন থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েরকরে।

মামলার আইও সাব ইনসপেক্টর প্রবোধ দাস জানান, চরফ্যাশন পৌরসভা সংলগ্ন আসলামপুর ইউনিয়নের ৭ ওয়ারর্ডে উপপেন চন্দ্র সরকারের ৩ পুত্র বসবাস করতো। বড়ো ছেলে তপন সরকার ,৫০ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ও মেজ ছেলে দুলাল চন্দ্র সরকার ,৪৫,২০ বছর যাবৎ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতে থাকে। ও ছোটো ছেলে নৃপেন চন্দ্র সরকার পৈতৃক বাড়িতেই থাকতো। ২০১৮ থেকে বড়ো ভাই ও মেজভাই এর সাথে জমি জমা বিরোধে নৃপেন চন্দ্র শীল আদালতে বন্টন মামলা করে যা চলমান। গত ২০১৯ সালে দুলাল চন্দ্র সরকার ও বড়ো ভাই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী তপন সরকার তাদের প্রতিবেশী মো. বেল্লাল হোসেনের কাছে ২০ লক্ষ টাকায় সাড়ে ৪৬ শতাংশ জমি বিক্রি করে দেয়। কিন্তু নগদ সাড়ে চার লাখ টাকা হাতে পেলেও বাকী টাকা রেজিষ্ট্রি করার সময় ভিকটিম হাতে পায়নি। বেল্লাল জমি বিক্রির টাকা দিতে গড়িমসি করে। পরে বেশ কয়েকবার টাকার জন্য চাপ দেয়া হলেও টাকা আদায় হয়নি।

২০২০ সালে,গত লকডাউনের সময় দুলাল সরকার চট্টগ্রামের একটি ভাড়া বাড়িতে থেকে মাঝে মাঝে বেল্লালকে টাকার জন্য তাগাদা দিতে থাকলেও বাকী টাকা পায়নি। বেল্লাল তখন পর্যন্ত ছোটভাই নৃপেনের জন্য জমি দখলে নিতে পারে নি। নৃপেন এই জমিতে প্রিয়ামসন মামলা করে যা আদালতে চলমান। এসময় বেল্লাল টাকা না দেয়ার জন্য দুই ভাইকেই খুন করার পরিকল্পনা গ্রহন করে।

মামলার আইও জানান, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আড়াই লক্ষ টাকায় ঘটনার ৩দিন আগে স্থানীয় কিলার ভাড়া করা হয়। সে অনুয়ারী বেল্লাল, দুলালকে মোবাইলে টাকা নেয়ার জন্য ভোলায় আসার অনুরোধ জানালে দুলাল ও তপন চ্ট্টগ্রাম থেকে ভোলায় ৬ এপ্রিল আসলে তাদেরকে এক আত্নীয়র বাড়িতে রাখে পরে তাদের ২ জনকে বাড়ি নেবার কথা বলে। রাত সাড়ে ৮ টায় তাদের জামাল ভুইয়ার বাগান বাড়িতে নেয়া হয়।

- বিজ্ঞাপন -

পুলিশের সূত্রটি জানায়, তাদের গলাটিপে প্রথমে হত্যা করা হয়। তারপরে দেহথেকে মাথা কেটে সুন্দরীখালে মাথাও চাকু ফেলে দেয়া হয়। মরদেহ দুইটি পরে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে দেয়া হয়। পুলিশ এসে পরদিন দেহাবশেষ উদ্ধার করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে আসায় পরের দিন সুন্দরী খাল থেকে মাথা ২ টি উদ্ধার করে মহিবুল্লার বাড়ির সেফটি ট্যাংকিতে রাখে আসামিরা

এই ঘটনায় পুলিশ মোবাইল ফোন ট্রাক করে বেল্লাল হোসেন, আবু ও কাসেম মাঝি নামে ৩ জনকে ২২ এপ্রিল গ্রেফতার করেছে। এই তিনজন পরের বিকেলে ভোলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে জবানবন্দীতে ঘটনায় তাদের সংশ্লিষ্টতা ও পরিকল্পনা সবিস্তারে জবানবন্দী দিয়েছে। আসামীদের জবানবন্দী অনুসারে পুলিশ শুক্রবার সুন্দরী খাল থেকে দা ও এর আগে আাসামী কাসেমের বক্তব্য অনুসারে বৃহসপতিবার বিকেলে মহিবুল্লার বাড়ির সেফটি ট্যাংক থেকে ২ টি মানুষের মাথা উদ্ধার করে বলে নিশ্চিত করে চরফ্যাশন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তিনি জানান এই মাথাও এর আগে উদ্ধারকৃত দেহাবশেষ এর ডিএনএ টেষ্ট করার জন্য পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আরো অন্তত ২আসামীকে পুলিশ খুঁজছে বলে তিনি জানান।

এছাড়াও একজন ভিকটিম অন্ধ ও অপরজন কলকাতায় থাকে- এই সুযোগটিই নিতে চাইছিল আসামীরা, যাতে করে বাকী টাকা না দেয়া লাগে সেজন্যই এই রোমহর্ষক হত্যাকান্ড করা হয় বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

- বিজ্ঞাপন -

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
সাংবাদিক, গবেষক ও সাংস্কৃতিক কর্মী
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!