বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের ৩ শিক্ষার্থীর তৈরী ৩টি রোবট এখন এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। রোবট তৈরীতে যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছে এইসব তরুণরা। প্রতিদিন এই রোবট গুলো দেখতে ভীড় করছে অনেকেই। এই তিন শিক্ষার্থীরা সবাই ১৮৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত গৈলা মডেল মাধ্যমিক স্কুলের বর্তমান ও সাবেক ছাত্র। একেকটি রোবট যেনো পূর্বের রোবটের চেয়ে আরো বেশী কার্যকর। এসব তরুণদের নেই কোন প্রশিক্ষণ এমনকি কম্পিউটার ছাড়াই শুধুমাত্র মোবাইল ব্যবহার করেই তারা এগুলি তৈরী করেছে। রোবট তৈরী করা শিক্ষার্থী ও স্বজনেরা জানান, রোবট তৈরীতে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তারা আরো সুন্দরভাবে এগিয়ে যেতে পারবে।
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের উত্তর সিহিপাশা গ্রামের বাসিন্দা, বর্তমানে একাদশ শ্রেণীর ছাত্র শুভ কর্মকার। গত ২০১৯ সালে, শুভ যখন ১০ ম শ্রেণীর ছাত্র, তখন রবীন নামে এক রোবট বানিয়ে সে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। তার এই রোবট বাংলা ও ইংরেজীতে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে, সেই সাথে নিজে থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ ছাড়া আগুনও গ্যাস লিক হলেও সংকেত দিতে পারে।
শুভ জানায় ঢাকায় সোফিয়া নামে এক রোবট টিভিতে দেখেই রোবট তৈরীতে অনুপ্রাণিত হয়। সে মাত্র ২৫ হাজার টাকা খরচ করে। ‘ইতিমধ্যে রবীন তৈরীর পর আমি আরো একটি উন্নত ধরনের রোবট তৈরীর কাজ সে চালিয়ে যাচ্ছি’ বলে জানায় সে।
শুভ’র বাবা সন্তোষ কর্মকার জানান, পড়াশুনায় ডিষ্টার্ব হবে ভেবে আগে আমরা তাকে নিবৃত্ত করতাম, কিন্তু তার আগ্রহ রোবট তৈরীতে হওয়ায় এখন আমরা এতে উৎসাহ দেই’
একই গ্রাসের বাসিন্দা সুজন পাল , বর্তমানে আগৈলঝাড়া কলেজে একাদশ শ্রেণীর ছাত্র । গত অক্টোবরে এস এস এস সি পাশের পর তাকে একটি স্মার্ট ফোন কিনে দেয়া হলে সে এই স্মার্ট ফোন দিয়েই ৪০ হাজার টাকা খরচ করে ‘বঙ্গ’ নামে একটি রোবট তৈরী করে। বঙ্গ বাংলা ইংরেজী, হিন্দী ছাড়াও আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। সেই সাথে সাথে আগুন ও গ্যাস লিক হলে ফায়ার সার্ভিসে খবর দিতে পারে। সেও সোফিার দেখাদেখি রোবট বানাতে অনুপ্রাণিত হয়েছে বলে জানায়।
সে জানায় কম্পিউটার না থাকায় মোবাইলের মাধ্যমেই সে রোবোটিক্স বিষয়টি বুঝে, রোবট তৈরীতে হাত দেয়।
সুজনএর বাবা জয়দেব পাল জানান, ’মাত্র কয়েক মাসের প্রচেষ্টায় সে একা একাই এটি তৈরী করে। আমার মাটির তৈরী জিনিসপত্র তৈরী করলেও এই দিকে তার নজর ছিল না। ছোট বেলা থেকেই সে বিভিন্ন জিনিস তৈরী করতো।’
একই ইউনিয়নের ভদ্রপাড়া গ্রামের ১০ ম শ্রেণীর ছাত্র শাওন সরদার, ১৮ হাজার টাকা ব্যায়ে ২০২০ সালেই ‘মেডিকেল এ্যাসিষ্ট্যান্ট’ নামে একটি রোবট তৈরীতে হাত দেয়, অবশেষে ২০২১ সালে এস সফল হয়। শাওন জানান কোভিড আক্রান্ত রোগীর কাছে ওষুধ ও পথ্য নিয়ে যাওয়ার জন্যই ‘মেডিকেল এ্যাসিণ্ট্যান্ট’ তৈরী করা হয়েছে। এটি চিকিৎসা সহায়তা ছাড়াও আগুন লাগলে ফায়ার বিগ্রেডকে মেসেজ দিতে পারবে। শাওনের কোন কম্পিউটার না থাকলেও সে মোবাইল ব্যবহার করে রোবোটিক্স এর ধারনা নেয় বলে জানায়, শাওন।
শাওনের বাবা একজন জুতা ব্যবসায়ী। তিনি জানান, শাওন নিজ আগ্রহেই রোবট তৈরীতে এগিয়ে এসেছে। তিনি চার শাওন যেন এই বিষয়ে উচ্চতর গবেষণার সুযোগ পান।
রোবট তৈরীতে সফল এই তিন ছাত্র গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. জহিরুল হক জানান, এটি আমাদের অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে তিনজনই এই স্কুলের ছাত্র। তিনি জানান এই স্কুলে বিজ্ঞান শিক্ষা ও বিজ্ঞান প্রজেক্ট তৈরীতে সুনাম রয়েছে। এই স্কুলটির সাফল্য সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে ৩টি রোবট দেখতেই দূর দুরান্ত থেকে প্রচুর মানুষ আসছে। অনেকে শিক্ষার্থী এই রোবটদেখে অনুপ্রাণিত হয়ে বাড়িতে এই রোবট তৈরীতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছে এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম টিটু।