পাখির অভয়ারণ্য নাটোরের ঐতিহাসিক রাজবাড়ী উত্তরা গণভবনে বিরল প্রজাতির প্রাণী নিধন চলছে। জানা গেছে, কারেন্ট জাল বিছিয়ে এসব প্রাণী হত্যাকরা হচ্ছে।
তিনশত বছরের পুরানো নাটোরের ঐতিহাসিক উত্তরা গণভবন এখন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন। দিঘাপাতিয়ার রাজবাড়ী তথা উত্তরা গণভবন ৪১ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত বিশালাকার এ রাজবাড়িতে আছে দিঘী, বাগান, ইটালিয়ান গার্ডেন, চিড়িয়াখানা সহ বিরল প্রজাতির নানা উদ্ভিদ, মৌসুমি ফল ও ফুলের বাগান- যা দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ইতিমধ্যেই এই রাজবাড়ী জনপ্রিয় এক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। প্রতি বছর দেশ বিদেশ থেকে অনেক পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন। করোনা মহামারী কারণে বর্তমানে বন্ধ রয়েছে দর্শনার্থীর যাতায়াত। তবে বিভিন্ন মৌসুমে বাগায়ের ভেতরের বিভিন্ন প্রজাতির ফল লিজের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। আর এ কারণে অতিনিয়ত শ্রমিকসহ ঠিকাদার অনায়াসেই প্রবেশ করে। ঠিকাদাররা বিভিন্ন পশুপাখির হাত থেকে ফল সংরক্ষণ ও সংগ্রহের জন্য ব্যবহার করেছে কারেন্ট জাল। যা আইনত ব্যবহার করা দন্ডনীয় অপরাধ। ঠিকাদার ব্যবসায়ীরা কারেন্ট জাল বিছিয়ে দিয়ে দিয়ে বিলুপ্ত প্রজাতির বাদুর, লক্ষ্মীপেঁচা এবং একটি চামচিকা হত্যা করছে। এই ভবনের দেখাশুনা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিযুক্ত কর্তব্যরতদের অবহেলায় ইতিপূর্বে অজান্তে এমন বিরল প্রজাতির প্রাণী কতগুলো হত্যা করা হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান কত হতে পারে?
এমন বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণী নাটোর জেলায় আর কোথাও তেমন ভাবে চোখে পড়ে না, যা ঐতিহ্যবাহী এই রাজবাড়ীতে টিকে আছে তবুও তাদেরকে যদি এভাবে দিনের পর দিন নিধন করতে থাকা হয় তাহলে পরিবেশ ও প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনভিসি) জুয়েল আহমেদ’এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন, তবে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেন তিনি।
নাটোর উত্তরা গণভবন ২০১৭ সালে পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই পাখির অভয়ারণ্যে বিরল প্রজাতির প্রাণী কারেন্ট জাল দ্বারা নিধন!
প্রসঙ্গত, বাংলার রাজা-জমিদারদের মধ্যে দিঘাপতিয়া রাজবংশ একটি উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে আছে। নাটোরের রানি ভবানী তার নায়েব দয়ারামের উপরে সন্তুষ্ট হয়ে দিঘাপতিয়া পরগনা উপহার দেন। ১৯৪৭ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত করে। এরপর ১৯৫২ সালে দিঘাপতিয়ার শেষরাজা প্রতিভানাথ রায় সপরিবারে রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করে কলকাতায় চলে যান। পরবর্তীতে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত রাজপ্রাসাদটি পরিত্যক্ত থাকে। ১৯৬৬ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার সরকারি ভবন হিসেবে এ প্রাসাদের সংস্কার করে। ১৯৭২ সালে এটিকে উত্তরা গণভবন হিসেবে অভিহিত করা হয়। চারদিকে মনোরম লেক, সুউচ্চ প্রাচীর পরিবেষ্টিত ছোট-বড় ১২টি কারুকার্যখচিত ও দৃষ্টিনন্দন ভবন নিয়ে আজও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে মাথা উঁচিয়ে রেখেছে উত্তরা গণভবন।