গাড়িখানা জামে মসজিদ ঐতিহাসিক নাটোরের এক অনন্য নিদর্শন মুঘল স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত। মসজিদে টানানো নামফলক থেকে নির্মান কাল জানা যায় ১৬৮৭ খ্রিষ্টাব্দে এবং পুনঃসংস্কার করা হয় ২০০২ সালে। বর্তমানে মসজিদটি আধুনিকায়নের কাজ চলছে।
জনশ্রুতি রয়েছে নাটোর রাজের গোড়াপত্তন হয় ১৭০৫ সাল থেকে ১৭১০ সালের মধ্যে। তাহলে ১৬৮৭ সালে কিভাবে মোগল স্থাপত্য শৈলীতে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। এব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা যায় এই মসজিদের ইতিহাস সংরক্ষিত নেই। জনশ্রুতি থেকে উঠে আসা কাহিনীই এই মসজিদের ইতিহাস
সতের শতকে রাজা জমিদারের বাস ভুমি খ্যাত নাটোর শহরের গাড়িখানা এলাকায় নির্মান করা হয় এই মসজিদটি। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট ষাট ফুট উচ্চতার ও সাড়ে তিন ফিট চওড়া দেওয়াল, চুনসুরকির অপুর্ব নির্মান শৈলী এখনও অটুট রয়েছে।
কথিত আছে মরহুম ‘চামু বক্স শাহ’ নামের এক জমিদার নির্মান করেছিলেন, তিনি মুঘল সম্রাজ্যের জমিদার ছিলেন। যদিও জন্মসুত্রে তিনি ইরানের অধিবাসী ছিলেন। এই মসজিদটি নাটোর শহরের প্রাচীন ও দ্বিতীয় মসজিদ।
মুঘল আমলে নির্মিত প্রাচীনতম এই মসজিদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে মসজিদের সম্মুখের কাঠামো ঠিক রেখে নির্মান করা হয়েছে দ্বিতীয়তলা। প্রবীণদের মুখে শোনা গল্পই মসজিদের ইতিহাস।
এই মসজিদের ইতিহাস সংরক্ষিত নেই। জনশ্রুতি থেকে বিভিন্নভাবে উপস্থাপিত হয়েছে চারশত বছরের প্রাচীন এই মসজিদটির ইতিহাস। বর্তমানে সংস্কার করা হচ্ছে। মূল কাঠামো ঠিক রেখেই মসজিদটি আরও বড় আকারে তৈরী করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গাড়িখানা জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক মো. আয়াজ উদ্দিন জানান, বর্তমানে মসজিদটি ১৪ শতক জায়গার উপর নির্মিত দোতলা। এই মসজিদে এক জামাতে কয়েক হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে মোগল আমলে ‘চামু বক্স শাহ্’ যখন মসজিদটি নির্মাণ করেন তখন দুই শতক জায়গার উপর ছিল মসজিদটি।
তখন দুই কাতারে ৫৬ জন মুসল্লির এক সঙ্গে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা ছিল। ধীরে ধীরে নামাজ আদায়ের জন্য আগত মুসল্লির সংখ্যা বাড়তে থাকে বিশেষ করে শুক্রবারে জুম্মার নামাজের সময় জায়গা না হওয়ার কারণে রাস্তাতে নামাজ আদায়ের জন্য ব্যবস্থা করা হত।
পরবর্তীতে মুসল্লিদের অনুদানে জায়গা ক্রয় করে ইমারত নির্মাণ করা হয়। সরকারী ভাবে তেমন কোন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। একবার জেলা পরিষদ থেকে ও প্রত্নতত্ব অধিদপ্ততের কর্মকর্তারা এসে পরিদর্শন করে গেছেন এই প্রাচীন স্থাপনা। তারপর আর কেউ ফিরও তাকাননি বলে জানালেন তিনি।
মসজিদ পরিচালনা করতে প্রতি মাসে ব্যয় হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা যা আসে মসজিদের নামে দান করা তিনটি বাড়ির ভাড়া থেকে এবং বাকিটা আসে সকলের অনুদান থেকে। তারপরও অপ্রতুল মসজিদ পরিচালনার ব্যয় যার ফলে উন্নয়ন কর্মকান্ড অসম্পূর্ণ হয়ে আছে অনেক দিন ধরে। ঐতিহাসিক এই মসজিদ এবং মোগল স্থাপত্য রক্ষার জন্য সরকার থেকে বিশেষ বরাদ্ধ আসা উচিত বলে মনে করেন এলাকাবাসী।
মসজিদ কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান বাবলু জানান, মসজিদটি প্রাচীন ঐতিহ্যের একটি অংশ। যুগ যুগ ধরে ধরে মুসল্লিগণ ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এই ইতিহাস ঐতিহ্য রড সিমেন্ট দ্বারা নির্মিত।
এই ইমারত কালের স্বাক্ষী। বিভিন্ন সময়রে মসজিদ পরিচালনা কমিটির হাত ধরে সাধিত হয়েছে নানা রকম উন্নয়ন। এখন মসজিদের দেয়াল পুরোটা টাইল্সের মোড়ানো, যুক্ত করা হয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা ও উন্নত মানের শব্দ যন্ত্র। শুধু ধর্মীয় দিক দিয়েই নয় প্রাচীন স্থাপনার দিক দিয়েও সকলের আবেগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মসজিদটি।
গাড়িখানা মহল্লার মো. রেজওয়ানুল হক জানান, দেশ বিদেশের বহু মুসল্লি এই মসজিদে আসেন পরিদর্শন করতে এবং নামাজ আদায় করেন তারা। তবে সরকারী ভাবে কোন তথ্য সংরক্ষণ করা হয়নি। সরকারী ভাবে সার্বিক সহযোগিতার দাবি জানান তিনি।
গাড়িখানা মহল্লার আরেক বাসিন্দা মো. শাহ্ আব্দুল ওহাব রনি জানান, প্রায় পাঁচ পুরুষ আগে তারই পূর্ব পুরুষ চামু বক্স শাহ্ নির্মাণ করেছিলেন এই মসজিদটি। ঐতিহাসিক এই মসজিদটি নিয়ে রয়েছে নানান ইতিহাস ও কাহিনী তবে তা লিপিবদ্ধ আকারে কোথাও নেই। মুখে মুখে চলে আসছে এই সব কাহিনী ও মসজিদের ঐতিহ্য।
কালের বিবর্তনে আর জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণেই বাড়াতে হয়েছে মসজিদের পরিসর। নিজের গৌরব নিয়ে কালের স্বাক্ষী এই মসজিদটি অম্লান হয়ে থাকবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এমন প্রত্যাশা মুসল্লিদের।