ফরিদপুরে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে রিমান্ডে থাকা অবস্থায় আবুল হোসেন মোল্লা নামের এক আসামির মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার (১লা মে) ভোর ছয়টার সময় ডিবি পুলিশের একটি দল ওই আসামিকে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ব্যাপারে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি)।
নিহত আবুল হোসেন মোল্লা (৪৮) সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের গোপালীয়া গ্রামের মৃত ইমানউদ্দিন মোল্লার ছেলে। তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ের বাবা।
আবুল হোসেনকে গত ৫ এপ্রিল রাতে সালথায় সংঘটিত সহিংস ঘটনার জন্য ১৬ এপ্রিল গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি ওই ঘটনায় পুলিশের করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন না। তদন্তে তাঁর নাম আসায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশ বলছে, ২৮ এপ্রিল পাঁচ দিনের রিমান্ডে আবুল হোসেনকে জেলা পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়। ডিবি কার্যালয়ে রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল।
গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুনীল কুমার কর্মকার জানান, আবুল হোসেনের রিমান্ড চলছিল। সকালে তিনি সাহ্রি করেছেন। আজ ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে তিনি শৌচাগারে যান। অনেকক্ষণ ধরে কোনো সাড়াশব্দ না পাওয়ায় নিরাপত্তা রক্ষী দরজা খুলে দেখেন, তিনি মেঝেতে পড়ে আছেন। তাকে দ্রুত ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
জেনারেলর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. তোফাজ্জেল হোসেন জানান, পুলিশ আবুল হোসেনকে হাসপাতালে নিয়ে এলে পরীক্ষা করে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। মৃতের শরীরে দৃশ্যমান কোনো আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি।
আবুল হোসেনের মেয়ে তানিয়া আক্তারের বলেন, আমার বাবা কোনো অপরাধ করেনি। আমার বাবারে রিমান্ডে নিয়া মাইরা ফেলান হইছে। আমার বাবা সাধারণ মানুষ ছিলেন। তিনি কোনো দল-পক্ষে থাকেন না। তিনি গরুর খামার নিয়ে থাকতেন। মেয়ে তার বাবা হত্যার বিচার চান।
সোনাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. খায়রুজ্জামান বলেন, আবুল হোসেন নিরীহ ধরনের মানুষ ছিলেন। তার একটি গরুর খামার আছে। তিনি ওই খামার নিয়েই থাকতেন। তিনি রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন।
ফরিদপুরের এসপি মো. আলিমুজ্জামান বলেন, আবুল হোসেন মোল্লার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ণয় করতে ময়নাতদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) জামাল পাশাকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ১দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৫ এপ্রিল সালথা উপজেলা পরিষদে লকডাউনের গুজব ছড়িয়ে বিভিন্ন সরকারি অফিসে একদল উত্তেজিত জনতা তাণ্ডব চালায়। এ সময় দুটি সরকারি গাড়িসহ বেশ কয়েকটি অফিসে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় এবং দুই যুবক নিহত হয়। এ ঘটনায় অজ্ঞাত কয়েক হাজার ব্যক্তিতে আসামি করে ৪টি মামলা দায়ের করা হয়।