রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়া নামের তরুণীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় করা মামলায় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম শহিদুল ইসলামের আদালত এই আদেশ দেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে গুলশান থানার নিবন্ধন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আবেদন করেছিলেন গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা আবুল হাসান। আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেছেন। সেই সঙ্গে ইমিগ্রেশন পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন— সায়েম সোবহান আনভীর যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন।
গতকাল সোমবার ওই তরুণীর বোন নুসরাত জাহান বাদী হয়ে ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া’র অভিযোগ এনে বসুন্ধরার এমডির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মোসারাত জাহান (২১) মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। দুই বছর আগে মামলার আসামি সায়েম সোবহান আনভীরের (৪২) সঙ্গে মোসারাতের পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর থেকে তারা বিভিন্ন স্থানে দেখা সাক্ষাৎ করতেন। তাদের মধ্যে সার্বক্ষণিকভাবে কথাবার্তা ও যোগাযোগ হতো। এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
২০১৯ সালে মোসারাতকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে আসামি রাজধানীর বনানীতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। সেখানে তারা বসবাস করতে শুরু করেন। ২০২০ সালে এক নারী আসামির পরিবারকে তাদের এই প্রেমের সম্পর্কে অবহিত করে। এরপর আসামির মা মোসারাতকে ডেকে ভয়ভীতি দেখান এবং তাকে ঢাকা থেকে চলে যেতে বলেন। বিয়ের আশ্বাস দিয়ে আমার বোন মোসারাতকে কুমিল্লায় পাঠিয়ে দেন।
সর্বশেষ গত ১লা মার্চ মোসারাতকে প্ররোচিত করেন আসামি। তিনি বাসা ভাড়া নিতে বাদী নুসরাত ও আমার (বাদী নুসরাত) স্বামীর পরিচয়পত্র নেন। আসামী আনভীর ফুসলিয়ে মোসারাতকে ঢাকায় আনেন। তিনি গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কে বাসা (ফ্ল্যাট-বি-৩) ভাড়া নেন। ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে আসামি ও আমার (বাদী নুসরাত) বোনের স্বামী-স্ত্রীর মতো ছবি তুলে তা বাঁধিয়ে দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা হয়। আসামি বাসায় এলে কক্ষটি পরিপাটি করে রাখা হতো।
বোনের মাধ্যমে মামলার আমি জানতে পারি, আসামি তাকে বিয়ে করে বিদেশে স্থায়ী হবেন। কারণ, দেশে থাকলে আসামির মা–বাবা আসামিকে কিছু না করলেও তার বোন মোসারাতকে মেরে ফেলবেন। গত ১লা মার্চ থেকে আসামি মাঝেমধ্যে ফ্ল্যাটে আসা-যাওয়া করতেন।
বাদী এজাহারে আরো উল্লেখ করেন, ২৩ এপ্রিল মোসারাত আমাকে(বাদী নুসরাত) ফোন করেন বলেছে, আনভীর তাকে বকা দিয়ে বলেছেন, কেন তিনি (মোসারাত) ফ্ল্যাটের মালিকের বাসায় গিয়ে ইফতার করেছেন, ছবি তুলেছেন? ফ্ল্যাটের মালিকের স্ত্রী ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেছেন। এ ছবি পিয়াসা দেখেছেন। পিয়াসা মালিকের স্ত্রীর ফেসবুক বন্ধু। এখন পিয়াসা তার মাকে সবকিছু জানিয়ে দেবেন। তিনি (আসামি) দুবাই যাচ্ছেন, মোসারাত যেন কুমিল্লায় চলে যান। আসামির মা জানতে পারলে তাকে (মোসারাত) মেরে ফেলবেন।
দুদিন পর ২৫ এপ্রিল মোসারাত আমাকে (বাদী নুসরাত) ফোন করেন। ওই সময় মোসারাত কান্নাকাটি করে বলেছে, আনভীর তাকে বিয়ে করবেন না, শুধু ভোগ করেছেন। আসামিকে উদ্ধৃত করে মোসারাত বলেন, আসামি তাকে বলেছেন, মোসারাত তার শত্রুর সঙ্গে দেখা করেছেন। মোসারাতকে তিনি ছাড়বেন না।
মোসারাত চিৎকার করে বলেন, আসামি তাকে ধোঁকা দিয়েছেন। যেকোনো সময় তার বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আমরা (বাদী নুসরাতের পরিবার) যেন দ্রুত ঢাকায় চলে আসি। এরপরে আমি ও আমার আত্মীয়স্বজন নিয়ে বেলা দুইটার দিকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় রওনা দেন। আসার পথে বারবার মোসারাতের ফোনে ফোন করেছি কিন্তু সে আর ফোন ধরেননি। গুলশানের বাসায় পৌঁছে দরজায় নক করলে ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে নিচে নেমে আসি। তারা নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষ থেকে বাসার ইন্টারকমে ফোন করেন। পরে ফ্ল্যাটের মালিকের নম্বরে ফোন দিলে মিস্ত্রি এনে তালা ভেঙে ঘরে ঢোকার পরামর্শ দেন। মিস্ত্রি ডেকে তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকার পর তিনি দেখেন, তার বোন ওড়না পেঁচিয়ে শোয়ার ঘরের সিলিংয়ে ঝুলে আছেন।
এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, পুলিশ এসে ওড়না কেটে মোসারাতের মৃতদেহ নামায়। আলামত হিসেবে আসামির সঙ্গে ছবি, আসামির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে লেখা ডায়েরি ও তার ব্যবহৃত দুটি মুঠোফোন নিয়ে যায় পুলিশ।