শাহজাদপুরে সরকারি আইন অমান্য করে বিভিন্ন স্থানে গাছে পেরেক দিয়ে ব্যানার ব্যানার ফেস্টুন লাগালো হচ্ছে। ফলে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে গাছ। গাছে পেরেক বিদ্ধ করে সাইনবোর্ড না লাগাতে গত ২০০২ সালের ৭ জুলাই জাতীয় সংসদে আইন পাস করা হলেও তা অমান্য করে শাহজাদপুরে অবাধে গাছে পেরেক দিয়ে বিভিন্ন প্রচারপত্র লাগালো হচ্ছে।
জানা গেছে, গাছ পরিবেশ ও মানুষের পরম বন্ধু। গাছেরও যে প্রাণ আছে, সেটা অবলীলায় ভুলে গিয়ে এলাকার অনেকেই গাছে পেরেক দিয়ে বিভিন্ন প্রচারপত্র লাগাচ্ছেন। উপজেলার বিভিন্ন সড়কের পাশের গাছে গাছে পেরেক দিয়ে লাগানো হচ্ছে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টারসহ বিভিন্ন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং পণ্যের বিজ্ঞাপন। এতে গাছগুলো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। মরে যাচ্ছে অনেক গাছ। হারিয়ে যাচ্ছে গাছের স্বাভাবিক সৌন্দর্য্যও।
জীববিজ্ঞান বিশারদগণের মতে, পেরেক লাগানোর কারণে গাছের গায়ে যে ছিদ্র হয়, তা দিয়ে পানি ও এর সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া এবং অণু জীব ঢোকে। এতে গাছের ওই জায়গায় দ্রুত পচন ধরে। ফলে খাদ্য ও পানি শোষণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। পরবর্তীতে গাছ মারাও যেতে পারে। গাছের পরিবহন সিস্টেম হলো জাইলেম আর ফ্লোয়েম। পানির সঙ্গে দ্রবীভূত খনিজ লবণও জাইলেম টিস্যুর মাধ্যমে ওপরে প্রবাহিত হয়। আবার গাছের পাতা থেকে যে খাদ্য তৈরি হয়, সেটা গাছের বাকল দিয়ে ভেতরে যায়। বাকলের নিচে ফ্লোয়েম এর অবস্থান। পাতা থেকে সেটা গাছের নিচের দিকে আসে। যদি গাছে ছোট আকারের পেরেক ঠুকে দেয়া হয়, তাহলে ফ্লোয়েম ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এতে পাতায় উৎপাদিত খাদ্য সঞ্চালনে বাধা পাবে। আর যদি বড় পেরেক ঠুকে দেয়া হয়, তাহলে পানি ও খনিজ লবণ সঞ্চালনে বাধা পাবে। এমনকি সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত গাছের পাতা ছেঁড়া বা গাছ কাটা যাবেনা, এই সময়ে গাছ খাদ্য গ্রহণ তথা শোষণ করে।’
পরিবেশবিদরা বলছেন, ‘যেখানে গাছ লাগিয়ে তার পরিচর্যা দরকার, সেখানে উল্টো গাছের ক্ষতির চেষ্টা করা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মুক্ত বাতাসে বিশুদ্ধ অক্সিজেনের অভাবে একসময় হয়তো প্রাণটাই হারাতে হবে।’
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুস সালাম জানান, ‘গাছে পেরেক মারায় গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়। ফলবান বৃক্ষের ক্ষেত্রে ফলের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতেও বিঘ্ন ঘটে। গাছ যেহেতু একটা জীব, সেহেতু এটা অমানবিকও বটে। তাছাড়া দেশে প্রচলিত আইনানুসারেও গাছে পেরেক মেরে প্রচারপত্র লাগানো অপরাধ।’
বিজ্ঞমহলের মতে, ‘পরিবেশ, জলবায়ু ও জীববৈচিত্র রক্ষায় গাছের অবদান ও গুরুত্ব অপরিসীম। তাই গাছে পেরেক দিয়ে প্রচারপত্র না লাগাতে এলাকায় সচেতনতা সৃষ্টি সহ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত সংশ্লিষ্টদের। অন্যথায় গাছের জীবন ক্রমাগত বিপন্ন হবার পাশাপাশি মানব জীবনেও এমনকি এর কু-প্রভাব সকল জীবের স্বাভাবিক জীবনে পড়তে পারে। এজন্য গাছে পেরেক দিয়ে লাগানো সকল প্রচারপত্র অপসারণ জরুরী হয়ে পড়েছে।