সাধারন অর্থে সাগর বলতে বিস্তৃত জলসীমাকে বোঝায়। ‘সেই সাগরে পানি নেই!’- এমনটি শুনতে বেশ বেমানান মনে হলেও এটাই সত্য যে, পানিশুণ্য হয়ে পড়েছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পোরজনা ইউনিয়ন সংলগ্ন হুরাসাগর নদী ! এক সময়ের প্রবলা, প্রমত্তা, প্রগলভা, উত্তাল, ভয়াল, বিপদসংকূল, সমুদ্রের যোগ্য সহচরী, রাক্ষুসী, প্রলয়ঙ্কারী যমুনার শাখা নদী হুরাসাগর শুষ্ক মৌসুমে ভারতের মরুকরণ প্রক্রিয়ার কু-প্রভাবে শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। ষাটের দশকেও হুরাসাগরে বিজলী বাতি জ্বলা ছোট কার্গো জাহাজ দূর-দূরান্তে চলাচল করলেও সেই প্রলয়ঙ্কারী হুরাসাগরের বুকে বর্তমানে বিরাজ করছে ধু-ধু বালুর চর। বৃট্রিশ শাসনামালে ও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও উপজেলার পোরজনা ঘাট থেকে ছোট ছোট কার্গো জাহাজ হুরাসাগরের বুকে ভেসে কোলকাতা ও আসামে নিয়মিত যাতায়াত করলেও কালের আবর্তে তা বর্তমানে শুধুই স্মৃতি বহন করছে।
তথ্যানুসন্ধ্যানে জানা গেছে, ভারত ও ভূটান থেকে বাংলাদেশে আগত নদ-নদী ও উপনদীগুলোর উজানে বাঁধ, ক্রসবাঁধ, ড্যাম, রাবার ড্যাম নির্মাণ করে প্রতিবেশী দেশ ভারত একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় দেশের বৃহত্তম পদ্মা, যমুনা, মেঘনাসহ সকল নদীর মতোই হুরাসাগরের বক্ষে বর্তমানে কোথাও বা চলছে ফসলের চাষাবাদ, আবার কোথাও বা শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে । তাছাড়া ফারাক্কা বাঁধও বাংলাদেশের জন্য মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
ভারত একতরফাভাবে নদ-নদীগুলোর স্বাভাবিক গতিপথ রূদ্ধ করে দেয়ায় সুজলা-সুফলা, শষ্য-শ্যামলা বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে মিনি মরুভূমিতে পরিণত হতে চলেছে। ভারতের মরুকরণের এ কু-প্রভাব দেশের কৃষিখাত, মৎস্যখাত ছাড়াও নদী তীরবর্তী পরিবেশ ও জীববৈচিত্রকে করছে ভারসাম্যহীন। এসব কারণে দেশের সকল নদ- নদীগুলোর গতি প্রকৃতির দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। এসব কারণে আমরা হারাতে বসেছি আমাদের অনেক গ্রামীণ ঐহিত্য। নদীতে পানি না থাকায় আবহমান কাল থেকে চলে আসা গ্রামীন জনপদের মানুষের প্রিয় সুস্বাদু নানা দেশী প্রজাতির মাছ পাওয়া সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। এখন আর দেখা যায় না গ্রামীণ ঐহিত্যের অনুসঙ্গ নৌকা বাইচ, খরা জাল, সূতি ফাঁদ, সেঁচের মাধ্যম দাঁড়। মৎসভান্ডার সংকুচিত বা শুকিয়ে যাওয়ার ফলে অনেক মৎসজীবী বেকার হয়ে পড়েছে। পর্যাপ্ত পানির অভাবে কৃষি খাতের পাশাপাশি মৎস্য খাতসহ বিভিন্ন খাতেও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে।
উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের ঘোষপাড়া মহল্লার শুশান্ত ঘোষ ও পোরজনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক অনিল কুমার ঘোষ বলেন, ‘অতীতকালে ভারতের বৃন্দাবনসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট ছোট কার্গো জাহাজ নিয়ে পোরজনার হুরাসাগর ঘাট সংলগ্ন ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গ ভজন আশ্রমে অসংখ্য সেবায়েত ও ভক্তবৃন্দ আসতো। কিন্তু বর্তমানে হুরাসাগর নদীটি শুকিয়ে যাওয়ায় সেই নৌ-যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে উপজেলার পোরজনা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, ‘অতীতে প্রবাহমান হুরাসাগর কালের অবর্তনে সময়ের পরিধিতে সংকুচিত হয়ে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। নদী বক্ষে পানি না থাকায় হুরাসাগরের বুকে আর চলেনা বিজলী বাতি জ্বলা জাহাজ। যৌবন হারানো হুরাসাগর নদীর হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।