মেয়েকে বিয়ে দিলে বেহেশত পাওয়া যাবে- এমন ফতোয়া দিয়ে এক বিধবা নারীর কিশোরী মেয়েকে বিয়ে করার অভিযোগ উঠেছে এক মসজিদের ইমামের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার মামুদের পাড়া গ্রামে।
এ ঘটনা জানাজানি হলে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলার কাকিনা এলাকার মোতালেব হোসেন নামের এক ব্যক্তি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার চেংমারী ইউনিয়নের মামুদেরপাড়া গ্রামের মসজিদে ইমামতি করার পাশাপাশি পাশের একটি বাড়িতে কয়েক বছর ধরে লজিং থেকে এবং মক্তবে ছেলে-মেয়েদের আরবি পড়ায়।
ঐ গ্রামের বিধবা মমতাজ বেগমের একমাত্র কিশোরী কন্যা মনিকা আখতার মীমের ওপর দৃষ্টি পড়ে ইমাম মোতালেব হোসেনের। সম্প্রতি ঐ চতুর ইমাম বিধবা নারী আত্মীয় আব্দুল জলিলসহ গ্রামের ২/৩ জনকে ম্যানেজ করে তার বাসায় যায়। সেখানে মসজিদের ইমাম মোতালেব ফতোয়া দেয়, ইমামের সঙ্গে তার দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া কিশোরী মেয়ে মনিকা বিয়ে দিলে নিশ্চিতভাবে সে বেহেশত যাবে। এরপরে গত শুক্রবার বিধবা নারীর ১৪ বছর বয়সী নাবালিকা মেয়েকে সে বিয়ে করে।
বিয়ের পরেই ঐ নাবালিকা মেয়ের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায় বলেও অভিযোগ উঠেছে ঐ ইমামের বিরুদ্ধে। নির্যাতনের মুখে মেয়েটি পালিয়ে মায়ের কাছে চলে এসে তার ওপর ইমামের নির্যাতনের বর্ণনা দেয় এবং বলে সেখানে আর যাবে না। বিষয়টি গ্রামে জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়।
বেহেশত নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নাবালিকাকে বিয়ে করায় মসজিদের ইমাম মোতালেবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা পরিষদে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ওই মেয়ের মা মমতাজ বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ইমাম খুব খারাপ লোক। তারা বুঝতে না পেরে এবং জান্নাত পাওয়ার আশায় বিয়েতে মত দিয়েছিলেন।
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, এখন ওই ইমাম গ্রামের ২/৪ জনকে ম্যানেজ করে তার মেয়েকে আবারও তার বাড়িতে নিয়ে যাবার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। অন্যথায় সালিশ ডেকে একঘরে করে রাখার হুমকি প্রদান করছে। তিনি ঘটনার বিচার দাবি করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে ইমাম মোতালেব হোসেনের সঙ্গে কথা বললে তিনি প্রথমত এবিষয়ে কথা বলতে চাননি। উল্টো বলেন, মেয়ে এবং তার মা দেনমোহরের নামে আমার কাছে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করেছিল। আমি তাদের কথায় রাজি না হওয়ায় তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথাবার্তা বলছে।
এদিকে পুলিশের ডি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান মিঠাপুকুর থানার এসআই এনামুল হককে ঘটনাস্থলে তদন্ত করতে পাঠান। ওই এসআই জানান, তিনি এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টির সত্যতা পেয়েছেন। এ ব্যাপারে আইনগত বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান।
মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, সরেজমিন তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।