কাকু, কোথায় যাচ্ছো?
কেরে?
কে? “অঙ্গ যায় জ্বলিয়া রে।”
“শুনো,শুনো, ম্যায় কিসিকা আঙ্কেল নেহি। “হ্যাঁ, এ-ই কথাটাই শুনতে হয়েছিল, বরুণ ধাওয়ানকে।
পারিবারিক সুত্রে ছোট্ট বেলাথেকেই কাকা ডাকে সলমনকে। ফিল্মসিটিতে ওই ধমকই কাফি।
তাই…আমাকে আশীষ দা বললেই চলবে। উঁহু, কাকু জেঠু একদম না। এখনো সেন্টু মেরে আয়নার সামনে দাঁড়ালে একদম “কলেজ কুমার” লাগে। আর এসব কি কথা। নোংরা কথা। হজম করতে কষ্ট।
ভাইঝি প্রায়ই বলে,তোমরা সেকেলে। একাল আর সেকালের মধ্যে জিরো পয়েন্ট কোন যায়গা দিয়ে গেছে। গালিভার ট্রাভেলস খ্যাত জনাথন সুইফট্,একবার বলেছিলেন, “সবাই দীর্ঘ জীবন পেতে চায়, কিন্তু কেউই বুড়ো হতে চায় না। “অনেক দেশেই প্রবীণদের বুড়ো বুড়ী বলা যায় না। তারা এখনোও উইক এন্ডে পার্টিতে উপস্থিত থাকে। যাইহোক, আপনার সাথে আপনার কোন কোন জায়গায় মেলে একটু টেস্ট করা যাক…
আমি বাসে “সিনিয়র সিটিজেন” দের জন্য সিট খালি থাকলেও বসি না। আচ্ছা,বাসে মহিলা দাঁড়িয়ে থাকলে থাকলে আপনি সিট ছেড়ে উঠে পড়েন তো? নাকি আবার উল্টো দিকে আপনার বউ চোখ কটমট করলে,উঠতে গিয়েও উঠলেন না। এমনটা করে থাকলে নেগেটিভ মার্ক। অনুষ্ঠান বাড়িতে, খাবারের সময় মাংস,মাংস করে মনটা টানে । যদি বেশি টানে, তাহলে হ্যান্ডশেক। বাজারে যাবার সময় কি কি আনতে হবে, সেটা আমি লিখে নিয়ে যাই। চিল চিৎকার, “তোমাকে দিয়ে কি হয়, শুনি? সব কি আমার কপালেই জুটলো। “কিচ্ছু মনে থাকে না।”
“সহমত।” তবে ওটা আবার বরাবরের।
এটাও শুনতে হয়, “তুমি তো আবার কানেও কম শোন। “সহমত, অস্বীকার করি না। তবে, তবে পাশের ঘরে ফিসফিস করে আমার নামে কিছু বললে, আমি কিন্তু শুনতে পাই।
বুঝতে দিই না। কলকাঠি তো পরে নাড়বো।
তবে হ্যাঁ, এই তো কদিন আগে হাফ প্যান্ট আর গেঞ্জি গায়ে রিকশার পেছনে ছুটছি। রিক্সার মাইকে একজন বলে চলেছে, “আজ থেকে বিমলা সিনেমা হলের রূপোলী পর্দায় মুক্তি পেতে চলেছে “…” অভিনয়ে “…” লোকটা, ফ্যাকাশে হলুদ আর লাল কাগজ ছড়িয়ে চলেছে, তার উপর, আবার বিশ্রী ছাপা। আর ও-ই কাগজ গুলো কুড়ানোর জন্যই পেছনে ছুটছি। আমি পেয়েছি পাঁচটা আরেকজন আটটা। পাশের গ্রামে এসে গেছি।
এই য্যা! মা সেই সকালে পাঁচশ গ্রাম চিনি আনতে বলে ছিল না? কিরে? এতক্ষণ কোথায় ছিলি? ব্যাস, যেই উস্টুম-ধুস্টুম শুরু, তার আগে থেকেই “ওরে বাবা মরে গেলাম, মেরে ফেললো। ” মার বন্ধ। যা একশো আটটা “ওঁ স্বরস্বতী নমঃ লেখ। হায়! হায়! এর চেয়ে মার খাওয়াই ভালো ছিল। সেই সময়ে আমার। “ক” বলতে কপাল ফাটে আর “চ” লিখতে গেলে চমকে উঠি।
তবে তখন মার খাওয়া ছিল সংস্কৃত ক্লাসে । ছ’ফুট লম্বা আর আড়াই হাত কঞ্চি।
স্যার যেন দেখতে না পায় মাথা আড়াল করা, আর ঢোক গিলে আমতা আমতা করা। কতকাল? আগামী কাল ক্লাস টেস্ট। সেদিন কামাই করে ফেললাম বাঁচতে। ওমা, পরের দিন গিয়ে শুনি, গতকাল হয়নি, ও-ই পরীক্ষা আজ হবে, অবস্থা তখন আমার প্রমথনাথ বিশীর ভাষায়…
“হে হরি, হে দয়াময়,
কিছু মার্ক দিও আমায়,
তোমার শরনাগত, নহি সতত,
শুধু এ-ই পরীক্ষার সময়।”
পরে একদিন স্যার পরীক্ষার খাতা নিয়ে ক্লাসে এলেন। সবারই ফল মোটামুটি খারাপ। দাঁড়া সব বেঞ্চির উপর। হাতে চাবুক পড়লো সবার। আমার সান্ত্বনা, অল ইকুয়াল। এরপর চেষ্টা চালিয়ে, সংস্কৃতকে অংকের সমীকরণ লাগিয়ে একটা সমাধানের রাস্তা বের করলাম। পরীক্ষায় নব্বুই শিওর। কিন্তু না, যথারীতি তেত্রিশ। ক্লাস এইটের পর বাদ গেল মুক্তি।
সবে সাবালক, অঞ্চলটা অজগ্রামের সেজদা।
একদিন পড়তে, পড়তে হঠাৎ মনে হলো সিনেমা দেখে আসি। দেরি হয়ে গেছে। গেলাম। হলের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। সাইকেল গ্যারেজ করেই টিকিট কাটলাম। ছাদ টিনের। সমস্ত চেয়ারগুলো মোটা দড়ি দিয়ে বাঁধা, এমাথা থেকে ওমাথা। মাঝে কোন যাতায়াতের ব্যবস্থা নেই। যাক বিজ্ঞাপন চলছে। “স্বাস্থ্য কে রক্ষা করে লাইফবয়, লাইফবয় যেখানে স্বাস্থ্য ও সেখানে, লা ই ফ ব য়।” হ্যাঁ, ও-ই লাইফবয় দিয়েই মাথায় শ্যাম্পু আর গা ঘষা।
সিনেমা শুরু হতেই দেখি এক গরীব লোক চাটাই উপর বসে আকাশ দিয়ে উড়ে চলেছে। কি হলো? এদের সাইনবোর্ডটা ছোট আবার বড়োরাস্তার দিকে।
ধা’ করে বেড়িয়ে এলাম। ঘুরে দেখি “শ্রীকৃষ্ণ সুদামা। “আমার কাছে খবর ছিল রাজকুমার এর ছবি। যা আবার গিয়ে অঙ্ক কর।
বাড়িতে টেলিফোন ছিল না। তবে সামান্য দূর হলেই টেলিফোনে কল বুক করে বসে থাকা, হাত-পাখা নিয়ে। মশা তাড়ানোর জন্য। কতো মিছিল গেল শ্মশান ঘাটে । মরার খাটে টেলিফোনটা কে ফুল মালা সাজিয়ে, হরিবোল ধ্বনি, আর সংকীর্তন করতে করতে।
“…উয়ো দিন কুছ আজিব থি…”
তবে একটা ব্যাপারে নিশ্চিন্ত ছিল পাড়ার মেয়েদের গার্ড নিয়ে। পাড়ার ছেলেরা ও-ই চাকরিটা মন দিয়ে করতো। গলিতে পর পর দুদিন ঢুকলেই প্রশ্নের মুখে। আগে পাড়ার ছেলেদের হাত করতে হয়। দীপক শুনেও শুনলো না। পরের দিন সুন্দরীর দেখা দূর থেকে তো মিললোই না, উল্টে, যাওয়া মাত্র ঘুষি মেরে বাড়ি পাঠিয়ে দিল। ভরসা সেই চিরকুট। ঠিক মতো ছুঁড়লে যুদ্ধ জয়ের অনুভূতি। ফসকালে, ভোকাট্টা। “সময় হেঁটে পশ্চিম দিকে চলে গেল।”
দীপক এখন ষাটোর্ধ। সেই মহিলারও হাতে এখন জপমালা। মোবাইলে কথা হয় কখনো সখনোও…
“অনন্ত কুয়োর জলে চাঁদ ডুবে আছে।”