পাঁচ পর্বের সমাজ-ভাবনা; কোভিড-১৯ এর দায় কার! (শেষ পর্ব)
করোনা বা কোভিড-১৯ এখন বিশ্বময় আতঙ্কিত আরেকটি নাম! ভীতিতে সারাবিশ্ব অবরুদ্ধ! তাইতো, পৃথিবীর প্রায় সব সাধারণ মানুষ গৃহবন্দী! নির্বাক দর্শক হয়ে থাকা ছাড়া, এই মুহূর্তে সাধারণ মানুষের কিছুই করার নেই। অযথা ঘরে বসে বিশ্ব-জুজুর ভয়ে ‘মরার আগে বারবার মরে’ কি লাভ সাধারণ মানুষের! লাভের মধ্যে মনোবল হারিয়ে সংক্রামক ঝুঁকিকে নিমন্ত্রণ! এ দায় কার!
সভ্য যুগে ভদ্রভাবে লিখন-বলোন-চলোন, সাধারণ সৌজন্যতা! সর্বাগ্রে মানুষের নিজ বিবেক ও সত্বার সচেতনতা কিন্তু অদৃশ্য কোভিড-১৯ দংশনসহ নানা দুঃসংবাদ প্রচার সাধারণ মানুষ সামাজিক মাধ্যমে ব্যতিব্যস্ত, ইতিবাচক সংবাদ অতল গহ্বরে হারিয়ে যায়। তাইতো, মুহূর্তে আতঙ্ক ‘exponential’ হারে বিশ্বময় চাউর! করোনা জুজুর ভয়! এই প্রেক্ষাপটে সমাজ-ভাবনায়; বিশ্বময় মানুষ কি বলে সেটি গৌণ ‘অধিকাংশ লোকের বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের ফলে সত্য বদলায় না’ তাই নিজ বিবেক কি বলে সেটাই মুখ্য। শান্তি এখন নিজের অনুভূতিতে ‘হাম ভালো তো জগৎ ভালো’ মন্ত্র জপাই মূল কাজ! কখনো মনুষ্য মন বলে; সব দেখেও না দেখার ভান করা, মনে হয় সুখের সংজ্ঞা! কেউ বলেন; অতি লোভকে গন্ডিভূত করতে পারাই সুখের সংজ্ঞা, তাইতো সামাজিক দূরত্বে সঙ্গ নিরোধ জেগে ঘুমিয়ে, একুরিয়ামের সোনালী মাছের (gold fish) মত ক্ষণিকেই সব ভুলে যাওয়া! ভুলো মনের বোধহীন অনুভূতির নামই হয়তো এখন, মানুষের ভালো থাকা…! অধিকাংশ মানুষ তাই আজ এই সাধনার কসরত রত…!
এমনিতেই, মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য ভুলোমনা। তাই সকল মানুষের ভুল ত্রুটির জীবন…! পৃথিবীময় মানুষ ভুলে যাবার ভয়ে জরুরী বিষয় সমূহ ই-বুক, খাতায় বা মাথায় (মস্তিষ্কে) টুকে রাখে, কিছু মানুষ তা স্মরণ করে কাজে পরিণত করে…! অন্যদের দৃষ্টিতে তাদের যোগ্যতা অতুলনীয়, স্মরণশক্তি বিস্ময়কর প্রখর! কৃত্রিম বুদ্ধি-মেধাসম্পন্ন (AI) কল্পিত যন্ত্রমানবের মত! আবার যে ফেরেস্তা আদমকে করেছে সেজদা, তার সাথে মানুষের তুলনা! যা সবার জানা। ধর্ম স্পর্শকাতর বিষয়, তাই সে দিকে না যাই। তাইতো, বিশ্বের নামি-দামি প্রতিষ্ঠানে, রক্ত-মাংসের মানুষের বদলে, আশঙ্কাজনক হারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন যন্ত্রের ব্যবহার! একের পর এক মানুষের স্থান দখল করছে যন্ত্র মানব! উদ্বৃত্ত মূল্য তত্ত্বমতে, শ্রমিকের শ্রম শোষণ করেই পুঁজির পাহাড় গড়ে ওঠে কিন্তু সেথায় এখন দখল করছে কম্পিউটার ও রোবট! তাহলে?
উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে কার্ল মার্ক্স (কার্ল হাইনরিশ মার্ক্স) এর উদ্বৃত্ত মূল্য তত্ত্ব মতের আশঙ্কা থেকেও,শ্রমিক শ্রেণীর উপর কল্পনাতীত ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এমনকি গোটা শ্রমিক শ্রেণী অস্তিত্বহীন হয়ে, অন্য কোনো রূপে আবির্ভূত হতে পারে বলে, ক্ষুদ্র-জ্ঞানে ধারনা। বিষয়টি মার্কসীয় তাত্ত্বিক গবেষকরা ভালো বলতে পারবেন, এখনকার এই মহা-দুর্যোগের অসময়ে; এই আলোচনা বড্ড বেমানান। তাই, ওদিকে না যাই…
সমাজ ভাবনা; বিজ্ঞান ও সর্বধর্ম মতে, ধ্রুব সত্য এই সুন্দর পৃথিবী একদিন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে বিলীন হবে…! ইতিমধ্যে পৃথিবী অতি ধীরে হলেও তার গতি মন্থর হচ্ছে! এ ভাবে একদিন পৃথিবী স্থির হয়ে, মহা প্রলয় হবে। মানুষ তা বিলম্বিত বা তরান্বিত করতে পারে মাত্র। ক্ষুদ্র অনুজীব যদি বিশ্বব্যাপী এমন মৃত্যুর মিছিল তৈরি করে। তবে, কোনো এক সময় মানুষ যদি যন্ত্রের উপর পরিপূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে যায়, তখন যদি জগতের সকল যন্ত্রমানব (স্বল্প জ্ঞান- অনুভূতি সম্পন্ন, উন্নত AI-রোবট) একসাথে বিদ্রোহ করে অথবা কেন্দ্রীয় সিস্টেমে গোলমাল বাধে। তবে পৃথিবীতে কী ধ্বংসলীলা হতে পারে তা মানুষের কল্পনার বাইরে…! বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী অধ্যাপক স্টিফেন উইলিয়াম হকিং অনেকবার শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন; ভিন গ্রহের মানুষ নিয়ে। কোনো দিন যদি, স্টিফেন হকিং এর শঙ্কা বাস্তবে ঘটে যায় ! তখন হয়তো, বিশ্বের কিছু উচ্চ সুবিধাভোগী বৃত্তবান মানুষ টাইটানিক জাহাজ ডুবার সময় যেমন বিশেষ সুযোগ পেয়েছিলেন তেমনি, অদুর ভবিষ্যতে তখনকার উন্নত বিজ্ঞানের spaceship (রকেটের উন্নত সংস্করণ) Aliens Saucers চেপে মঙ্গল যাত্রার পথে…! বিপদের অতি তড়িঘড়িতে, সূক্ষাতিসূক্ষ হিসেবে গড়মিল হয়ে, অনেক কিছুই ঘটতে পারে! হতে পারে টাইটানিক এর মত কিছু!
spaceship ভেঙে, কলম্বাস ভারত যেতে যেমনটি আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলেন। তেমনি হয়তো, অনিচ্ছায় আবিষ্কৃত হতে পারে, কোনো সুন্দর সবুজ গ্রহ! একদিন হয়তো, সেই নতুন পৃথিবীতে বসে সমগ্র মহাজগৎ নিয়ন্ত্রণ করবে, অত্যাধুনিক বিবর্তিত অন্য কোনো ধরনের মানুষ প্রজাতি…!
হয়তো কোনো এক সময়, পূর্বের মতো পৃথিবীর সভ্যতা ধ্বংসের পর ঘুরে দাঁড়াবে। আবার, সভ্যতার ক্রম বিকাশ ঘটবে! তখন, সবুজ গ্রহ হতে বিবর্তিত অত্যাধুনিক মানুষ এলিয়নের হয়ে শেকড়-নাড়ির টানে এ ধরণীতে আসতে পারে…! তখন একে অপরের শত্রু (Enemy) ভেবে, মহাজাগতিক ভয়াবহ যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে! এ বিষয়েও বিশ্ব বিজ্ঞানীরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাই, এ ভাবনা অমূলক নয়। জানা মতে, এখন বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ এলিয়েন নিয়ে বিশাল অংকের বাজেটে গবেষণায় মত্ত! এর আগেও পৃথিবীর সভ্যতার চরম শিখরে পৌঁছে কয়েকবার বিনাশ হয়েছিলো; যা বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত সত্য, তখনও যে কাল্পনিক ভাবনার এই ঘটনা বাস্তবে ঘটেনি, তাই বা কে জানে…! ধর্ম ও বিজ্ঞানের হিসাব মতে আদম এর আগমনের পূবের্র মানুষ প্রজাতির মতই কঙ্কালের ফসিল মিলছে ধরণীতে, তারা কী এলিয়েন মানুষের অন্য রুপের পূর্বসূরী! হতেই পারে! হতে পারে অন্য কোনো প্রজাতি! মানুষের মতই জ্বিন প্রজাতি…!
একই ভুল নিশ্চয় বারবার করবে না উন্নত সেই মানুষ প্রজাতি। তাই, বর্তমানে ফিরে আসি। সঙ্গ নিরোধ এখন একমাত্র রক্ষা কবচ মনে করা হচ্ছে কিন্তু একা মানুষের স্বর্গ থেকেও সুখ নেই। সেই সামাজিক জীবকে নগণ্য অণুজীবের ভয়ে, এখন সামাজিক দূরত্বে সঙ্গ নিরোধে বিচ্ছিন্নতায় থাকতে হচ্ছে…! এই ভয়াবহ মহাদুর্যোগ মুহূর্তে, গোটা পৃথিবী যখন মহাশূন্যে গোলক ধাঁধায় নিজেই ঘুরপাক খাচ্ছে! সেখানে, এখন ব্যক্তি মানুষের নিশ্চিত স্থায়ীত্ব কিছু প্রত্যাশা করা বোকামী বৈ অন্য কিছু নয়। করোনা বা কোভিড-১৯ প্রভাব যে কোথায় যেয়ে শেষ হবে তাই বা কে জানে?
মানুষের জীবনে-কাজে-কর্মে, প্রকৃতি ও পরিবেশ প্রভাব প্রতীয়মান হয়। তাই হয়তো, ‘চুন খেয়ে গাল পুড়ে দই দেখে ভয় হয়’ বিশ্বমারি অনুজীব অদৃশ্য কোভিড-১৯ যন্ত্রণায় অবরুদ্ধ তাই শঙ্কা; প্রকৃতির সন্তান মানুষ, অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে ভার্চুয়াল ভাবমানুষের জগতে! তাইতো, আগামীতে কৃত্রিম বুদ্ধি-মেধাসম্পন্ন (উন্নত-AI) রোবট কি বিস্ময় নিয়ে অপেক্ষা করছে তা কে জানে?
স্রষ্টার কাছে সৃষ্টির রহস্য থাকে। তাই, দ্রুততার সাথে সৃষ্টিকর্তার পক্ষে তার সৃষ্টির সৃষ্ট যে কোনো সমস্যা বা দুর্যোগের মোকাবেলা করতে পারে; হতে পারে করোনারও ডায়রিয়ার মত প্রকৃতিতে তার সহজ সুরক্ষা আছে কিন্তু তার আগেই অজানায় কত শত সহস্র নিরীহ মানুষ বেঘোরে প্রাণ হারায় তার কোনো ইয়াত্তা নাই! মানুষ যুগে যুগে বারবার এভাবে অনর্থক বলির পাঠা হয়! এ দায় কার?