বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের বর্জ্য সংগ্রহ করে তা বিক্রি করা হচ্ছে নগরীর বিভিন্ন ভাঙারির দোকানে। তা আবার নানা হাতঘুরে পার্শ্ববর্তী জেলা সহ ঢাকাতেও যাচ্ছে এই বর্জ্য। যা থেকে করোনা সংক্রমন আরও বৃদ্ধি পাওয়ার শংকা দেখা দিয়েছে।
এদিকে করোনা সংক্রমনের পূর্বে সিটি করপোরেশন এই বর্জ্য সংগ্রহ বন্ধ করে দেওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেশ বিপাকে পড়েছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে বর্জ্য মাটি চাপা দিয়ে আপাতত স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বরিশাল বিভাগের মধ্যে করোনা সংক্রমণে অন্যান্য জেলার থেকে বরিশাল নগরীতে চারগুন বেশি। আর এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুষ্ঠ সমাধান বা বর্জ্য নষ্ট করতে না পারলে করোনা সংক্রমন বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা চিকিৎসকদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ভবনের সামনে এবং হাসপাতালের স্টাফ ক্যান্টিনের পিছনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে হাসপাতালের বর্জ্য। কয়েক টন বর্জ্যে স্তূপ আকার ধারণ করেছে করোনা ইউনিটের সামনে। ওই ইউনিটের সকল বর্জ্যই ফেলা হয় ইউনিটটির সামনেই। গ্লোভস, মাস্ক, বেড শিট, সিরিঞ্জ, পানির বোতল, পোষাক ও প্লাস্টিকসামগ্রী থেকে শুরু করে করোনা রোগীর ব্যবহৃত সকল বর্জ্যই ফেলা হয় সেখানে।
ষাটোর্ধ্ব রহিম মিয়াকে দেখা যায় করোনা ইউনিটের সামনে থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করতে। এমনিতেই যেখানে করোনা সংক্রমণের আশংকা, সেখানে কোনো সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াই বর্জ্য সংগ্রহ করছেন তিনি। করোনা ইউনিটের সামনে থেকে কেন বর্জ্য সংগ্রহ করছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে রহিম মিয়া বলেন, ‘এহান দিয়া প্লাস্টিকের বোতল, কাগজ সহ আরও অনেক কিছু লইয়া ভাঙ্গারির দোকানে বেচি।’ যে ভাঙারির দোকান মালিকরা এই বর্জ্য কিনছেন কথা হয় তাদের সাথে। তারা জানান, মেডিকেলের যে গ্লোভস আছে, আরও অনেক কিছুই আছে। হেইয়া কিন্না আবার আমরা বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করি।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোর ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডাঃ সৌরভ সুতার বলেন, এমনিতে হাসপাতালের বর্জ্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এরপর যদি করোনা আক্রান্ত রোগীর বর্জ্য হয়, সেগুলো তো আরও মারাত্মক ক্ষতিকর। সঠিকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না করলে স্বাস্থ্যের জন্য চরম ঝুঁকি। এসব বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলা অথবা মাটি চাপা না দিলে যে কেউ সহজেই সংক্রমিত হতে পারে।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, বরিশাল সিটি করপোরেশনের এসব বর্জ্য অপসারণের কথা। কিন্তু তারা তা করছে না। বর্তমানে আমরা মাটি খুড়ে তার নিচে এই বর্জ্যগুলো চাপা দেয়ার চেষ্টা করছি স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, বর্জ্য অপসারণের দায়িত্ব মেডিকেল কর্তৃপক্ষের। মেডিকেলের বর্জ্য মেডিকেলের মধ্যেই ধ্বংস করতে হবে। ওই বর্জ্য নিয়ে বর্জ্যের গাড়িগুলো সারা বরিশাল নগরীতে ঘুরবে। ওই বর্জ্য নিয়ে আমি নগরবাসীকে তো হুমকির মধ্যে ফেলতে পারি না।