আজ শনিবার সকালসাড়ে দশটায় চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গন্ডামারায় কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক ও পুলিশের সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে পাঁচ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ সংঘর্ষের ঘটনার জন্য পরস্পরকে দায়ী করছেন আহত পুলিশ ও শ্রমিকেরা। আহত হয়েছেন তিন পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন।
এ ঘটনায় তারা পরস্পরকে দোষারোপ করেছে। আহত শ্রমিকেরা পুলিশকে দায়ী করেছেন। শ্রমিকেরা বিনা উসকানিতে ইটপাটকেল ছুঁড়েছে বলে অভিযোগ পুলিশের।
স্থানীয় ও শ্রমিক সূত্রে জানা গেছে, শিল্প গ্রুপ এস আলমের মালিকানায়, চীনা প্রতিষ্ঠান সেফকো থ্রি পাওয়ার কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এখানে অর্থায়ন এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট নামে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানে প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক কর্মরত আছে। খাবার সময়সূচি, মাসের ৫ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে নির্মীয়মাণ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কিছু শ্রমিক কয়েক দিন ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিলেন। আজ এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে বলে শ্রমিকেরা জানান। এ নিয়ে শ্রমিকের একটি পক্ষ কাজে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে চায়। গত শুক্রবার সকাল থেকে শ্রমিকদের থাকার জায়গায় জড়ো হয়ে কাজে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেখানে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করে। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শ্রমিকদের বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন।
আজ সকালে শ্রমিকের দাবীদাওয়া মেনে নেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানালেও শ্রমিকেরা তা বিশ্বাস না করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে শুরু করে এবং ব্যাপক সংঘর্ষ চালায়। এসময়ে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোঁড়ার পর আত্মরক্ষার্থে গুলি চালাতে বাধ্য হয় পুলিশ। সংঘর্ষে আহত তিনজন পুলিশের মধ্যে দুজনের চোখ মারাত্মক জখম হয়েছে।
শুক্রবার বিক্ষোভের শুরুর দিকে কিছু শ্রমিক কাজ যোগ দিতে চাইলে তাদের কাজে যেতে বাধা দেন বিক্ষোভরত শ্রমিকের একাংশ। ঘটনার সময় নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আবু সৈয়দের (৫৪) নামের একজন গুলিবিদ্ধ হন।
আজকের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত শ্রমিকদের বেশির ভাগই গুলিবিদ্ধ হয়েছে। শ্রমিকদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে তিনজন পুলিশ সদস্য মোট ৩০জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে তিন পুলিশসহ ১৯ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
চমেক হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আনোয়ারুল হক জানান, আহতদের মধ্যে অন্তত পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি আরও জানান, আমাদের ওয়ার্ডে ১৩ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা গুরুতর। সবাই গুলি বা স্প্লিন্টারে বিদ্ধ। তবে তা শর্টগান না কিসের গুলি, এখনই বলা সম্ভব নয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সওগাত ফেরদৌস জানান, আহত অবস্থায় অনেককে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। এর মধ্যে চারজন মারা গেছেন। নিহত চারজন হলেন আহমেদ রেজা (১৮), রনি (২২), শুভ (২৪) ও মো. রাহাত (২২)। আর চমেক হাসপাতালে আনার পর মো. রায়হান (১৮) নামের এক শ্রমিককে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এছাড়াও চমেক হাসপাতাল চিকিৎসাধীন আহত শ্রমিকেরা হলেন আমিনুল ইসলাম (২৫), মো. আমির (২৪), মো. দিদার (২১), মো. বিল্লাল (২৬), মো. আজাদ (১৮), মো. কামরুল (২৬), শিমুল (২৮), শাকিল (২৩), মুরাদ (২৫), মিজান (১৮), রাহাত (২৮), হাবিবুল্লাহ (১৮), হাসান (৪০) ও অভি (২০)। একই হাসপাতাল আহত হয়ে চিকিৎসাধীন পুলিশ সদস্যরা হলেন মো. ইয়াসির (২৪), আহমদ কবির (২৬) ও আসাদুজ্জামান – তিনজনই গন্ডামারা পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত।
চমেক পুলিশ ফাঁড়ির কর্তব্যরত উপপরিদর্শক (এসআই) শীলাব্রত বড়ুয়া বলেন, শ্রমিকেরা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আর শ্রমিকের ছোঁড়া ইট ও পাথরের আঘাতে পুলিশ সদস্যরা জখম হয়েছেন।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গণ্ডামারা ইউনিয়নে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন নিয়ে শুরু থেকেই এলাকার বেশ কয়েকবার সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
২০১৬ সালের এপ্রিলে কেন্দ্রটি নির্মাণের পক্ষ – বিপক্ষ গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছিলো।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতেও কেন্দ্রটি নিয়ে মতবিনিময়সভা চলাকালে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছিলো।