পাঁচ পর্বের সমাজ-ভাবনা: কোভিড-১৯ এর দায় কার! (প্রথম পর্ব)
তথ্য প্রযুক্তির যুগের দাবিতে হয়তো ‘কোভিড-১৯’র মত ভয়াল কিছু ডিজিটাল দৈশিক ও বৈশ্বিক সংখ্যা সাধারণ মানুষের মনেপ্রাণে ভীতির সঞ্চার করে। তার একটি আঞ্চলিক ভৌতিক সংখ্যা ২০০০ (সাল)! আনুষ্ঠানিক সমাজকর্মের তকমা গায়ে-ছিলো বিধায়, সেনাবাহিনীর স্পিডবোটে ঝিনাইদহের মহেশপুরে সীমান্তবর্তী গ্রামসমূহের অপ্রার্থিত-অবাস্তব-আকস্মিক বন্যা কবলিত এলাকা নিবিড় ভাবে দেখার সুযোগ হয়েছিল। পরিবেশের গতি-প্রকৃতি দেখে,সমাজ ভাবনায় তরুণ মনের আনাড়ি নবীন অনুভূতিতে কোনো সময় মনে হয়নি; এই দুর্যোগের জন্য প্রকৃতি দায়ী…!
আবেগী বাঙালি বিধায়; বন্যা আক্রান্ত অসহায় মানুষের সহায়তায়-সহমর্মিতায়,প্রতিবেশী গ্রাম ও দূরদূরন্ত হতে পরিবার-পরিজন-বন্ধু-বান্ধবসহ চিড়া-মুড়ি, গুড়-পাটালি,খিচুড়ি নিয়ে সেথায় গমন,যেয়ে দেখে কোনো কাজ নেই। ‘নেই কাজ তো- খই ভাজ’ বন্যার জলে ভেসে আসে প্রচুর মাছ পুলকিত ‘মাছে ভাতে বাঙালি’! বইতে পড়েছে কাজেও সহজ ‘ঘোলা জলে মাছ আহরণ’ নেমে পড়ে…! সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখে, ফসলি মাঠ হয়ে কৃত্রিম বন্যার জলে তাদের হেঁশেল (রান্না ঘর) অতল….! একটি দেশের নিরীহ অসচেতন স্বাধীন নাগরিকের দোষ কোথায়! অন্যের সৃষ্ট কৃত্রিম দুর্যোগের দুর্ভোগ কেন সুবিধাবঞ্চিত মানুষ বহন করবে যুগে-যুগে…! ক্ষুদ্র-দুর্বল-শক্তিহীন-অক্ষম-ক্ষমতাহীন বলে! এর দায় আসলে কার!
উক্ত বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনের কাজ করতে যেয়ে বাস্তব উপলব্ধিতে সমাজ-ভাবনার নিঠুর অভিমত; দুর্যোগ দুর্ভিক্ষকে,আমন্ত্রণ করে! কুফলে,ক্ষুধার জ্বালায় জ্বলে মরে শুধু দরিদ্র-সুবিধাবঞ্চিত মানুষ ও বেওয়ারিশ প্রাণিকুল! অনেক সময়; ‘বড় মাছ ছোট মাছকে খেয়ে ফেলে’ বড় পুঁজি ছোট পুঁজিকে গিলে খায়,বড় মানুষ ছোট মানুষকে শোষণ করে,বড় দেশ ছোট দেশকে গ্রাস করে,বড় শক্তি ছোট শক্তিকে নানা ভাবে দমন করে! এভাবেই মানুষ একসময় বৃহত্তর পরিমন্ডলে দাসত্বের-শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়।
অনেকটা হাতি ও মাহুত এর মতো,একটি বন্য হাতিকে অবরুদ্ধ করতে কম পক্ষে তিনটি প্রশিক্ষিত গৃহপালিত হাতির প্রয়োজন হয়। তেমনিভাবে,বৃক্ষকে কাঁটতে হলে কুড়ালে কাঠের আছাড়ি লাগে! ঘুঘুকে ফাঁদে ফেলতে একই কৌশল অবলম্বন করে মানুষ! পৃথিবীতে মনে হয় এই প্রথম,সাম্প্রতিক ঘটনায় বিশ্বময় মানুষ অবরুদ্ধ! সারা দুনিয়া লকডাউন! এই তত্ত্ব তো মানুষেরই সৃষ্টি…। এটাই যেন আধুনিক বিশ্বের শেষ শিক্ষণীয় ঘটনা হয়। অন্যথায় এভাবেই হয়তো পৃথিবী হতে,মনুষ্য প্রজাতি ডাইনোসরের মতো বিলুপ্ত হবে। এ সুন্দর ধরণী হতে! ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়েছিল প্রকৃতির কারণে কিন্তু মানুষ যদি বিলুপ্ত হয়,তবে তা নিজের কারণেই হবে। অন্য কোনো অনুজীব-জীব-প্রাণী-ভিনগ্রহের প্রাণী,এলিয়েন (Aiens), কৃত্রিম বুদ্ধি সম্পন্ন (Artificial Intelligence-AI) রোবট বা যন্ত্রমানবের কারণে নয়!
এইভাবে মানুষ নিজেই হয়তো কোনো একদিন, অবরুদ্ধতার এই অলসতার সাগরে ভেসে আলসে হয়ে যাবে…! যন্ত্রের উপর অতি নির্ভরশীলতায়,যন্ত্রমানবদের কাছে ক্যু হয়ে,মানুষ পুতুল সরকার বনে যেতে পারে! এখনকার মতো স্বেচ্ছায় অবরুদ্ধ হতে পারে। অথবা যন্ত্রমানব ক্ষমতা কুক্ষিগত করে মানুষকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। অনেকটা এখন যেমন অদৃশ্য অর্থ পরিচালনা করছে গোটা বিশ্বকে। তেমনি ভাবে যন্ত্রমানব বা এলিয়েনের ছায়া প্রশাসক হিসেবে চালাতে পারে গোটা বিশ্ব! অথবা বিশালদেহী হাতি যেভাবে ক্ষুদ্র মাহুত এর বশীভূত,যেমনি ভাবে মানুষ ক্ষুদ্র অনুজীবের কাছে অবরুদ্ধ! এ নরক যন্ত্রণা হতে বাঁচার তাগিদে স্বেচ্ছায় যন্ত্রমানব বা এলিয়েনদের কাছেও আত্মসমর্পণ করতে পারে মানুষ! পোষমানা গৃহপালিত হাতির মতোই,এখন যেমন শুধুমাত্র জীবন বাঁচানোর তাগিদে বেছে নিচ্ছে অবরুদ্ধতার জীবন। এভাবেই হয়তো একদিন গৃহপালিত হাতির মতোই বন্দি স্বাভাবিক জীবন মনে হতে পারে মানুষের-
বন্দি হাতিকে বশীকরণ করে,আদব-কায়দা-ভাষা শিক্ষায় চলে যায় একটি বছর। মজার বিষয়,বিশালদেহী হাতির মস্ত বড় কান-গলার সংযোগ গ্রন্থিকে (“মস্তগ্রন্থি”) মাহুত দুই পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের স্পর্শের অনুভূতির সংকেতের মাধ্যমে,অনেকটা গাড়ির স্টিয়ারিং এর মত পরিচালনা করে! মাহুতের,কথা না শুনলে হাতিকে বহু ঘাত;শুনলে স্বল্প আঘাত! সুচালো দা দিয়ে মাথায়! বল্লম দিয়ে সামনের পায়ের রানে…! প্রকৃতির আপন খেয়ালে,হাতির সে ক্ষত রাতের মধ্যে শুকিয়ে যায়। তাই মন থেকেও যায় সব ভুলে! সকাল হতেই চলে একই রকম জীবন, মানুষ তখন ভার্চুয়াল জগতে নিজে নিজে এমনই বন্দি দাস।
মাহুত হাতিকে আদর করে মা বা মামা ডাকে, অনুভবে বোঝে হাতির সুস্থ-অসুস্থতা…,তাইতো ভালোবাসা আর শাসনে যায়,পোষা হাতির অবরুদ্ধতায় জীবন। অদূর ভবিষ্যতে মানুষের জীবনও হয়ত এমন হবে,ভালোবেসে ফেলবে নিষ্ঠুর বন্দি জীবন।
তাই হয়তো,প্রকৃতির বিপরীত প্রভাবে অথবা হাতি প্রজাতির মত নিরীহ প্রাণীকূলের অভিশাপে সমগ্র মানব জাতি এখন ক্ষুদ্র অনুজীবের কাছেই অবরুদ্ধ! হাতির মন জুগিয়ে মাহুতকে চলতে হয়। একটু অসাবধানতায়,মাহুতকে জীবন দিয়ে তার খেসারত দিতে হয়। অনেকটা করোনা ভাইরাসের মত। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়,কোনো জাতি বা গোষ্ঠী সীমা-লঙ্ঘন করলে তার কুফল সমগ্র মানব জাতিকে ভোগ করতে হয়। যেমন:
মানুষ সীমা লঙ্ঘন করলে,অস্তিত্ব রক্ষার্থে প্রকৃতি ধরণী মাতাকে মাঝেমধ্যে বহুমুখিতায় উল্টে-পাল্টে দেয় (Reverse diversity)! ফলশ্রুতিতে, প্রকৃতির বিপরীত প্রভাবের (Reverse effect) কুফল, বিশ্বমারি কোভিড-১৯! প্রকৃতি নাকি তার সব আঘাত ফিরিয়ে দেয় অনেকটা ‘ইট মারলে পাটকেলটি খেতে হয়’ মানুষের দশা হয়েছে এখন অনেকটা তাই! পরিবেশ প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য হরণের এই নগ্ন খেলা বন্ধ না হলে এর থেকে মহাবিপর্যয় সামনে আগত,তা হতে প্রাণিকুল রক্ষা পাবে কি করে; তা এখন সমাজ ভাবনায়!
(চলবে…)